তৃণমূল নেতা গৌতম চৌবে খুনের অভিযোগে ২০০৩ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে রেলমাফিয়া খড়্গপুরের ‘ডন’ বাসব রামবাবুকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সাজাও হয়েছিল তাঁর। ফের সেই অন্ধ্রপ্রদেশেরই তানুকা থেকে মঙ্গলবার পুলিশের জালে ধরা পড়ল রামবাবু। এ বার অবশ্য তার বিরুদ্ধে শ্রীনু নায়ডুকে খুনের অভিযোগ। খড়্গপুরে ‘রাম রাজ্য’ অক্ষুন্ন রাখতেই লোক লাগিয়ে শ্রীনুকে সে খুন করেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে রামবাবু গ্রেফতারের পরও রেলশহরে মাফিয়ারাজে ইতি পড়বে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে শহরের বাসিন্দারা।
বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘শ্রীনু নায়ডুও একজন রেল মাফিয়া ছিল। শ্রীনুর সঙ্গে রামবাবুর শত্রুতা দীর্ঘদিনের। ওর (রামবাবুর) মনে হয়েছিল, শ্রীনু খড়্গপুরে থাকলে ওর পক্ষে একা মাফিয়ারাজ চালানো সম্ভব নয়। খড়্গপুরে নতুন করে মাফিয়ারাজ শুরু করতেই এই খুন।’’ খড়্গপুরে নতুন করে মাফিয়ারাজ শুরু করতে দেওয়া হবে না বলেও এ দিন আশ্বাস দেন পুলিশ সুপার।
নব্বইয়ের দশক থেকেই রেলের নানা কাজে একাধিপত্য গড়ে ওঠে মাফিয়া বাসব রামবাবুর। অভিযোগ, তাঁর অঙ্গুলি হেলনেই রেলের নানা কাজের বরাত পেতেন ঠিকাদাররা। কোটি কোটি টাকার স্ক্র্যাপ নিলামের দায়িত্ব পেত রামবাবুর পছন্দের লোকেরা। গৌতম চৌবে খুনে রামবাবুর সাজা হয়। রামবাবু জেলে থাকার সময়ই উত্থান হয় রেল মাফিয়া শ্রীনুর। প্রথম দিকে রামবাবুর সঙ্গে শ্রীনুর ঘনিষ্ঠতা থাকলেও পরে সম্পর্কে চিড় ধরে।
গত ১১ জানুয়ারি বিকেলে খড়্গপুরের নিউ সেটলমেন্ট এলাকায় তৃণমূলের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয় শ্রীনু। এই ওয়ার্ডেরই তৃণমূল কাউন্সিলর শ্রীনুর স্ত্রী পূজা। দুষ্কৃতী হামলায় নিহত হয় শ্রীনুর ‘ডান- হাত’ বলে পরিচিত ধর্মা রাও-ও। জখম হয় তিনজন। ওই ঘটনায় বাসব রামবাবুকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারপরেও অবশ্য শহরের নিরাপত্তা নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছে খড়্গপুরের বাসিন্দারা। শহরের ঢেকিয়া এলাকার বাসিন্দা প্রবীণ ব্যবসায়ী সুবীর সেন বলেন, “আমরা রামবাবুকে দেখেছি। আবার রামবাবুর জেলবন্দি থাকাকালীন শ্রীনু নায়ডুর উত্থানও দেখেছি। শহরে এখন এই দু’জনের অনুপস্থিতিতে নতুন করে যে ফের কেউ উঠে আসবে না তা বলা কঠিন। তাই নিশ্চিন্ত হতে পারছি না।’’ পরক্ষণেই তাঁর সংযোজন, ‘‘এরপরেও পুলিশ ও শহরবাসীকে আরও সজাগ হতে হবে।’’
মালঞ্চর বাসিন্দা রেল আধিকারিক গৌরাঙ্গ প্রধানের কথায়, “২০০৫ সাল থেকে এই শহরে রয়েছি। এখানে মাফিয়ারাজ কোনওদিনই বন্ধ করা যায়নি। তাই দু’-এক জন মাফিয়া বসে গেলেও অন্য কেউ মাথাচাড়া দেবে না সেটা বলা কঠিন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘শহরে মাফিয়ারাজ বন্ধ করতে বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করে পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy