Advertisement
৩১ মার্চ ২০২৩

চোখে জল, নতুন জামায় আস্তানা বদল ছোট্ট বাবুর

গত ১২ অগস্ট ঝাড়গ্রাম শহরের এসবিআই মোড় এলাকায় রাস্তার ধারে পড়ে ছিল বাবু। দাবিদারহীন রুগ্ণ-অসুস্থ শিশুটিকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পুলিশের উদ্যোগে অসুস্থ শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পুলকরঞ্জন মাহাতোর তত্ত্বাবধানে চিকিত্‌সা শুরু হয় শিশুটির।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২৮
Share: Save:

গত আড়াই মাস ধরে হাসপাতালের শিশু বিভাগটাই ছিল চার বছরের ছোট্ট বাবুর জগত। একটু সুস্থ হতেই শিশু বিভাগের ওয়ার্ডের ভিতরে টো-টো করে ঘুরে বেড়াত বাবু। অচেনা শিশু রোগীদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলত। শুধু কী চিকিত্‌সাধীন শিশু! তাদের মা মাসিদেরও আপনজন হয়ে উঠেছিল পরিচয়হীন শিশুটি। ষাট ফুট বাই তিরিশ ফুটের শিশু ওয়ার্ডের ঘরে ৪৫টি শয্যার মধ্যে একটি শয্যা বাবুর জন্য বরাদ্দ ছিল। গত আড়াই মাসে চিকিত্‌সক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের চোখের মণি হয়ে ওঠা সেই বাবু সবাইকে টাটা করে চলে গেল নতুন ঠিকানায়, নতুন ঘর ও অভিভাবক পাওয়ার আশায়। সরকারি নিয়মের কাছে হার মানল স্নেহের বাঁধন। বুধবার বাবুকে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দিলেন ঝাড়গ্রাম জেলা ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

গত ১২ অগস্ট ঝাড়গ্রাম শহরের এসবিআই মোড় এলাকায় রাস্তার ধারে পড়ে ছিল বাবু। দাবিদারহীন রুগ্ণ-অসুস্থ শিশুটিকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পুলিশের উদ্যোগে অসুস্থ শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পুলকরঞ্জন মাহাতোর তত্ত্বাবধানে চিকিত্‌সা শুরু হয় শিশুটির। নার্সরা জানালেন, অপুষ্টির শিকার শিশুটিকে সুস্থ করে তোলাটাই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তাঁদের কাছে। হাসপাতালের সুপার মলয় আদক জানালেন, ধীরে ধীরে সুস্থ হওয়ার পরে শিশুটি শুধু জানাতে পেরেছিল তার নাম বাবু। পরিচয়হীন ও দাবিদারহীন বাবু হয়ে উঠেছিল চিকিত্‌সক, নার্স ও কর্মীদের চোখের মণি। বাবুর জন্য ওয়ার্ডে পালা করে ২৪ ঘন্টা পাহারা দিতেন এক জন মহিলা পুলিশ কর্মী। হাসপাতালের নার্স ও কর্মীরাই বাবুর দেখাশোনা করতেন। এবার পুজোয় চিকিত্‌সক, নার্স ও কর্মীদের কাছ থেকে গোটা দশেক জামা উপহার পেয়েছিল শিশুটি। তবে দুঃখ একটাই হাসপাতালে বাইরে যাওয়ার অনুমতি না থাকায় ঠাকুর দেখা হয়নি।

বুধবার বাবুর বিদায় বেলায় হাসপাতাল সুপারের অফিস ঘরে ছোট্ট এক অনুষ্ঠানে বাবুকে নানা উপহারে ভরিয়ে দিলেন সকলে। সুপারের দেওয়া জামা ও জুতো উপহার পেয়ে সেখানেই পরে ফেলল সে।

“কাকু, আমার জামার বোতামটা লাগিয়ে দাও তো!” ছোট্ট বাবুর আদুরে ডাক ফেলতে পারলেন না ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার মলয় আদক। সুপার যখন জামার বোতাম লাগিয়ে দিচ্ছেন, তখন জলভরা চোখে হাসপাতালের কর্মী সুব্রত পৈড়া বাবুর কচি পায়ে নতুন জুতো পরিয়ে দিচ্ছেন। বিদায় বেলায় নতুন পোশাক পরে টাটা করে চলে গেল চার বছরের বাবু। নার্সিং সুপার মিনা বাগ, নার্স ত্রিপর্ণা পালেরা ছল ছল চোখে বললেন, “যাও সোনা নতুন ঘরে গিয়ে ভাল ভাবে থাকো। পড়াশোনা শিখে মানুষের মতো মানুষ হও।”

Advertisement

চিকিত্‌সক ও নার্সদের দেওয়া চকোলেট মুখে পুরে বাবু পাড়ি দিল নতুন জীবনের পথে। চাইল্ড লাইনের বনমালী সিংহ ও কবিতা মাইতি জানালেন, জেলার শিশু কল্যাণ কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে বাবুকে মানিকপাড়ার একটি দত্তক হোমে পাঠানো হল। আপাতত এই হোম থেকে দত্তক শিশু হিসেবে এখন নতুন ঘর পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বাবু!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.