Advertisement
E-Paper

পায়েস খাইয়ে গোলুর অন্নপ্রাশন হাসপাতালেই

চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে কেউ শিশুটির জন্য নিয়ে আসেন পোশাক, কেউ বা নিয়ে আসেন গুঁড়ো দুধের প্যাকেট। হরেকরকম খেলনাও নিয়ে আসেন অনেকে। বাচ্চাটিকে স্নান করানো, খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানোর কাজ ভাগ করে নেন সকলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৩৮
চিকিৎসক-নার্সদের মধ্যমণি একরত্তি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

চিকিৎসক-নার্সদের মধ্যমণি একরত্তি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

নতুন জামা, মাথায় মুকুট, কপালে চন্দনের টিপ, প্রথম ভাত খাওয়ার আগে নার্সরাই সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছিল তাকে। ছ’মাস বয়সের শিশুকন্যা গোলুকে পায়েস খাইয়ে দিলেন জুনিয়র চিকিৎসক সুমন্ত দাস। মঙ্গলকামনায় শাঁখ বাজালেন নার্সরা। উলুধ্বনিও দিলেন তাঁরা। গোলুর মুখেভাত উপলক্ষে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসএনসিইউ-তে শনিবার সকাল থেকেই ছিল সাজো সাজো রব। মুখে পায়েস দেওয়ার পর চিকিৎসক থেকে নার্স সকলেই আশির্বাদ করেন গোলুকে।

গত ১৯ মে চন্দ্রকোনায় ঝোপ থেকে একদিনের সদ্যোজাতকে উদ্ধার করে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন মেদিনীপুরের তাঁতিগেড়িয়ার বাসিন্দা লক্ষ্মণ রায়। লক্ষ্মণবাবুর সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। খবর পেয়ে চাইল্ড লাইনের কর্মীরা লক্ষণবাবুর বাড়িতে যান। যদিও লক্ষ্মণবাবু শিশুটিকে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দিতে রাজি হননি। পুলিশের হস্তক্ষেপে চারদিনের শিশুটির ঠাঁই হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালের এসএনসিইউ-তে। মেডিক্যালেই অসুস্থ শিশুটির চিকিৎসা শুরু হয়। অনাথ শিশুটিকে তখনই ভালবেসে ফেলেন সকলে।

চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে কেউ শিশুটির জন্য নিয়ে আসেন পোশাক, কেউ বা নিয়ে আসেন গুঁড়ো দুধের প্যাকেট। হরেকরকম খেলনাও নিয়ে আসেন অনেকে। বাচ্চাটিকে স্নান করানো, খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানোর কাজ ভাগ করে নেন সকলে। সকলে আদর করে শিশুকন্যাটির নাম দেন গোলু। একটু বড় হতেই এসএনসিইউ–তে গোলুর জন্য একটি আলাদা বিছানার ব্যবস্থাও করা হয়। ছ’মাস বয়স হতেই শনিবার গোলুর মুখে ভাত দিলেন সকলে মিলে।

একভাবে বাতানুকূল এসএনসিইউতে থাকলে শরীর খারাপ হতে পারে, এই আশঙ্কায় বাচ্চাটিকে মাঝেমধ্যে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। নার্স পুতুল মণ্ডল বলেন, ‘‘পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য কর্মবন্ধুরা ছাদে কাপড় শুকোতে দিতে গেলে বা খাতা নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে যাওয়ার সময় গোলুকে সঙ্গে নিয়ে যান। এতে বাইরের পরিবেশের সাথেও শিশুটি মানিয়ে নিতে পারবে।’’ পুতুলদেবী জানাচ্ছেন, ওয়ার্ডে বিভিন্ন লোক আসা যাওয়া করলেও গোলু সকলের কোলে যায় না। ওয়ার্ডে চিকিৎসক ও সিস্টারদের সবুজ, আকাশি ও গোলাপি রঙের অ্যাপ্রন দেখেই নিজের লোক বলে চিনে নেয় গোলু।

জুনিয়র চিকিৎসক সুমন্ত দাস প্রতিদিন সন্ধ্যায় গোলুকে এসএনসিইউ থেকে ‘পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’-এ ঘুরতে নিয়ে যান। শিশু চিকিৎসক তারাপদ ঘোষ বলছিলেন, ‘‘এই ওয়ার্ডে আর একটি চার মাসের অভিভাবকহীন শিশু রয়েছে। এ রকম শিশুদের আমরা সকলে মিলে যত্ন করে বড় করে তুলি।’’ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তন্ময় পাঁজা বলেন, ‘‘শিশুটি এখন সুস্থ রয়েছে। ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’-র কাছেও চিঠি পাঠিয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যে শিশুটি হোমে চলে যাবে।’’

এ দিন ‘মুখেভাতে’-র অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’-র সভাপতি মৌ রায়। মৌদেবী বলেন, ‘‘কয়েক দিনের মধ্যেই চাইল্ড লাইনের মাধ্যমে শিশুটিকে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ায় শিশুদের একটি হোমে পাঠানো হবে।’’ আনন্দের মধ্যেও গোলুর চলে যাওয়ার খবর পেয়ে সকলের মনটা যেন কেমন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। গোলুকে কোলে নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি শুরু করে দেন সকলে।

Midnapur Medical College abandoned baby birthday celebration Midnapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy