Advertisement
E-Paper

গন্ধ-বিচারে ফেল, উত্তরার ধমক সুপারকে

গন্ধবিচারে ডাহা ফেল করলেন ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সুপার মলয় আদক। আর তার জেরেই মেজাজ হারিয়ে ফেললেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০০:৩২
হাসপাতাল পরিদর্শনে সভাধিপতি উত্তরা সিংহ।

হাসপাতাল পরিদর্শনে সভাধিপতি উত্তরা সিংহ।

গন্ধবিচারে ডাহা ফেল করলেন ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সুপার মলয় আদক। আর তার জেরেই মেজাজ হারিয়ে ফেললেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ।

মুখ্যমন্ত্রীর সাধের জঙ্গলমহলের সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থা ও অপরিচ্ছন্নতার বেআব্রু ছবিটা বুধবার নিজের চোখে দেখে গেলেন উত্তরাদেবী। সুপার মলয়বাবু ও তাঁর অনুগামী কর্মীরা ড্যামেজ কন্ট্রোলের শত চেষ্টা করেও সভাধিপতির মন গলাতে পারলেন না।

বুধবার ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় কেন্দ্রের উদ্বোধন করতে এসেছিলেন উত্তরাদেবী। উদ্বোধনের আগে হাসপাতালটি ঘুরে দেখবেন বলে মনস্থ করেন তিনি। সভাধিপতিকে নিয়ে হাসপাতাল ঘুরিয়ে দেখাতে থাকেন সুপার মলয়বাবু। সঙ্গে ছিলেন সিএমওএইচ (ঝাড়গ্রাম) অশ্বিনীকুমার মাঝি।

মাস তিনেক আগে চালু হয়েছে নতুন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)। সিসিইউ বিভাগে ঢোকার মুখে দুর্গন্ধ পেয়ে থমকে দাঁড়িয়ে যান সভাধিপতি। সুপারের কাছে উত্তরাদেবী জানতে চান, “কোথা থেকে এমন বাজে গন্ধ আসছে?” সুপার আমতা আমতা করে বলেন, “ম্যাডাম ওটা রঙের গন্ধ। সদ্য রং হয়েছে কি-না!” সুপারের জবাবে দৃশ্যতই অসন্তুষ্ট উত্তরাদেবী ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, “মোটেই না। এটা রঙের গন্ধ নয়। বাজে গন্ধ। ভাল করে দেখুন কোথা থেকে এমন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।”

এরপর কলম্বাসের চোখে এদিক সেদিক তাকিয়ে নিজেই আবিষ্কার করে ফেলেন সভাধিপতি। সিসিইউ বিভাগের সামনে একটি সেপটিক ট্যাঙ্ক তাঁর চোখে পড়ে যায়। গন্ধের উৎস খুঁজে পেয়ে এবার কড়া সুরে সুপারকে তিনি বলেন, “দেখুন এখান থেকে গন্ধ ছড়াচ্ছে কি-না!”

সুপার কিছু বলার আগেই মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে সিএমওএইচ অশ্বিনীবাবুর দিকে তাকিয়ে উত্তরাদেবীর কড়াবার্তা, “দুর্গন্ধের উৎস খুঁজে আগামীকাল থেকে যাতে গন্ধ না বের হয়, সেটা দেখুন।” এরপর হনহন করে শিশু ওয়ার্ডের দিকে এগিয়ে যান উত্তরাদেবী। শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতে আবর্জনা ও খাবারের প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখে চটে গিয়ে সভাধিপতির প্রশ্ন, “ওয়ার্ড কেন পরিষ্কার করা হয়নি?” কর্তব্যরত নার্স খাবারের প্যাকেটটি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে জানান, সকালে ওয়ার্ড পরিষ্কার করা হয়েছিল। সুপার আমতা আমতা করে কিছু বলার চেষ্টা করতেই ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেন সভাধিপতি। উত্তরাদেবী বলেন, “এত সুন্দর হাসপাতাল। নোংরা করে রাখবেন না। কোনও অজুহাত শুনতে চাই না।”

পেটে ব্যথা ও বমির উপসর্গ নিয়ে শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন বেলপাহাড়ির দশ বছরের রচনা সিংহকে মেদিনীপুরে রেফার করে দেওয়া হয়েছে। অথচ দরিদ্র পরিবারের মেয়েটিকে মেদিনীপুরে পাঠানোর কোনও বন্দোবস্ত করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মেয়েটির অভিভাবক সভাধিপতির কাছে অভিযোগ করেন। রচনাকে অবিলম্বে সরকারি খরচে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন সভাধিপতি।

এরপরই হাসপাতালে কতজন ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগী আছেন তা সুপারের কাছে জানতে চান উত্তরাদেবী। তথ্য না থাকায় সদুত্তর দিতে পারেননি সুপার। বিরক্ত উত্তরাদেবী সুপারকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখতে বলেন।

এরপর থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উত্তরাদেবী বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক কষ্টে মানুষের জন্য এই হাসপাতাল তৈরি করেছেন। মানুষের কাছে সঠিক ভাবে প্রতিটি পরিষেবা পৌঁছে দিতে হবে। কোথাও কোনও গাফিলতি তিনি যত বড়ই হোন তাঁকে কিন্তু রেয়াত করা হবে না। আমাদের যতটুকু ক্ষমতা আছে, তার মধ্যেই পরিষেবা দিতে হবে।” মাঝে মধ্যে হাসপাতালে সারপ্রাইজ ভিজিট দেবেন বলেও জানান সভাধিপতি। এ দিন অবশ্য হাসপাতাল সুপার এবং সিএমওএইচ (ঝাড়গ্রাম) কোনও মন্তব্য করতে চাননি। উত্তরাদেবী অবশ্য পরে বলেন, “গরমিলের গন্ধটা আমি ঠিক টের পেয়ে যাই!”

Hospital Foul-smell Superentaint
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy