E-Paper

মেক্সিকোর আগ্নেয়গিরির শিখরে মেদিনীপুরের কন্যা

পূর্ব মেদিনীপুরের মেয়ে, আদ্যন্ত বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়া অর্পিতা বর্তমানে পড়ান বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে। কম্পিউটার সায়েন্সে প্রফেসর অর্পিতা অবশ্য ক্লাস, গবেষণা আর পড়ুয়াদের সামলে সুযোগ পেলেই বেড়িয়ে পড়ছেন পাহাড়ে চড়তে।

স্বাতী মল্লিক

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:০৬
পিকো দি ওরিজ়াবার শীর্ষে অর্পিতা।

পিকো দি ওরিজ়াবার শীর্ষে অর্পিতা। ছবি: সংগৃহীত।

অল্প সময়েই পেশাগত জীবনে একের পর এক সাফল্য। তবু যেন কোথাও যেন মনে হত, আরও কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে। সেই তাগিদ থেকেই পাহাড়ে অভিযান করতে শুরু করেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের মেয়ে, অধুনা বেঙ্গালুরু নিবাসী প্রফেসর অর্পিতা পাত্র। ইতিমধ্যেই সাত মহাদেশের মধ্যে তিন মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে (আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো, ইউরোপের এলব্রুস, ওশিয়ানিয়ার কসিচিউস্কো) সফল আরোহণ করা হয়ে গিয়েছে তাঁর। এ বার উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি পিকো দি ওরিজ়াবায় (৫৬৩৬ মিটার) সফল আরোহণ করলেন অর্পিতা। গত ২৪ অক্টোবর, স্থানীয় সময় সকাল ১১টা নাগাদ ওই আগ্নেয়গিরির শিখরে পৌঁছন বছর একচল্লিশের ওই প্রফেসর।

পূর্ব মেদিনীপুরের মেয়ে, আদ্যন্ত বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়া অর্পিতা বর্তমানে পড়ান বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে। কম্পিউটার সায়েন্সে প্রফেসর অর্পিতা অবশ্য ক্লাস, গবেষণা আর পড়ুয়াদের সামলে সুযোগ পেলেই বেড়িয়ে পড়ছেন পাহাড়ে চড়তে। বলছেন, ‘‘এক সময়ে কাজ নিয়ে হাঁফিয়ে গিয়েছিলাম। ২০২৪ সালে মনে হল, আরও কিছু করতে পারি। সেই অন্তরের ডাককে অগ্রাহ্য করতে পারিনি। গোচালা ট্রেক এবং কিলিমাঞ্জারো অভিযান দিয়েই আমার পাহাড়ে হাতেখড়ি।’’

পেশাগত পর্বতারোহী না হলেও সপ্তশৃঙ্গ ও সপ্ত আগ্নেয়গিরি জয়ের স্বপ্নটা মনের কোণে সযত্নে লালিত হচ্ছে। সেই স্বপ্নের নামও দিয়েছেন ন’বছরের মেয়ে অপরাজিতার নামে। আর তা সত্যি করতে চলতি বছরেই সফল আরোহণ করেছেন পাপুয়ানিউ গিনির সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি গিলুউই (৪৩৬৭ মিটার) ও উইলহেম (৪৫০৯ মিটার) শৃঙ্গে। এর পরেই গত ১৮ অক্টোবর তিনি পাড়ি দেন মেক্সিকোতে।

মেক্সিকোর সর্বোচ্চ পেরু দ্য ওরিজ়াবা সামিট করে ফোনে অর্পিতা বলছেন, ‘‘কিলিমাঞ্জারো বা এলব্রুস কঠিন ঠিকই, তবে এই আগ্নেয়গিরি অভিযান আমার কাছে সবচেয়ে কঠিন লেগেছে। কারণ, জামাপা হিমবাহ রুট দিয়ে উপরে ওঠার সময়ে এক দিনে ১৪৫০ মিটার চড়তে হয়েছে। আগ্নেয়গিরির পুরো পথটাই ৪৫ ডিগ্রি খাড়াই। এই অভিযানেই প্রথম হিমবাহের উপর দিয়ে হাঁটলাম। প্রবল হাওয়া চললেও আবহাওয়া মোটের উপরে ভাল ছিল, এটাই রক্ষে।’’

বাড়িতে বাবা-মা আর বেঙ্গালুরুর বাড়িতে স্বামী-মেয়েকে নিয়ে সংসার অর্পিতার। তবে তিনি পাহাড়ে গেলে তাঁর মা ও মেয়ে দু’জনেরই রাতের ঘুম উড়ে যায়। সপ্তশৃঙ্গ ও সপ্ত আগ্নেগিরিজয়ী বাঙালি পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্তের অনুপ্রেরণায় এবং তাঁরই সাহায্যে ইতিমধ্যে স্বপ্নের পথে বেশ কিছু দূর এগিয়ে গিয়েছেন এই বাঙালি কন্যা।

তাই আপাতত পাখির চোখ সপ্ত আগ্নেয়গিরির বাকি আগ্নেয়গিরিগুলি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা। বলছেন, ‘‘এর পরে দক্ষিণ আমেরিকা ও ইরানের আগ্নেয়গিরি করতে সমস্যা আছে ঠিকই, তবু তা দ্রুত চুকিয়ে ফেলতে চাই। তার পরে বাকি থাকবে শুধু আন্টার্কটিকা। তার জন্য অবশ্য ক্রাউড ফান্ডিং করতে হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mountaineer North America midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy