চিরাচরিত পদ্ধতিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন নয়। নতুন পদ্ধতিতে নদীর স্রোত থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সফল হয়েছে আইআইটি খড়্গপুর। ২০১৮-১৯ সালে গবেষণা শুরু হয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে গবেষণাগার থেকে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এসেছে এই পদ্ধতি। খড়্গপুর আইআইটি ও হানিলুপ টেকনোলজ়ি প্রাইভেট লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প চালু হয়েছে কেশিয়াড়ি ব্লকের নছিপুর পঞ্চায়েতের আমিলাসাই এলাকায়। গবেষকদের আশা, নতুন পদ্ধতি ‘ওয়াটার টুরিজ়ম’এর ক্ষেত্র তৈরি করবে। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করবে।
সুবর্ণরেখা নদীর স্রোত থেকে উৎপন্ন হচ্ছে বিদ্যুৎ। দুই গবেষক ছাত্র ওঙ্কার ভেঙ্কটাই আল্লা এবং খড়্গপুর আইআইটির গবেষক সৈকত নন্দী প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা জানাচ্ছেন, কয়লা, ডিজেল কমে আসছে। সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রেও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। নতুন পদ্ধতিতে কম খরচে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ বিদ্যুৎ পাবেন। সরকারি অনুদানও পেয়েছে উদ্যোগী সংস্থা।
তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কতকগুলো শর্ত আছে। নদীর স্রোত হওয়া চাই প্রতি সেকেন্ডে ০.৫ মিটার। গভীরতা প্রয়োজন ৬-১০ ফুট। তবেই যন্ত্রের সাহায্যে সমান্তরাল ও উলম্ব স্রোতকে ঘূর্ণায়মাণ স্রোতে পরিণত করে জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যাবে। প্রকল্পটি ভ্রাম্যমাণ। স্রোত অনুযায়ী স্থান পরিবর্তন করা সম্ভব। নয়াগ্রামের ডাহি ঘাটের কাছে এই প্রকল্প চালু হয়। পরে স্রোত কমে আসায় বর্তমান জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, আপাতত এক কিলো ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা ব্যয় হবে। যদিও এটি এখনও পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। পদ্ধতির নাম, ‘ভার্টেক্স ইনডিউসড ভাইব্রেশন’। টার্বাইন ছাড়াই উৎপাদন হয়। আপাতত ১৬-২০ ওয়াটের এলইডি বাল্ব জানিয়েছেন তাঁরা। গবেষকদের বক্তব্য, এখান থেকে গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব। নদী বক্ষে নৌকাকে ভ্রাম্যমাণ হোটেল করা যাবে। রাতে থাকা যাবে। নৌকায় বিদ্যুৎ যাবে এখান থেকেই। সংস্থার কাজে এলাকার ৮-১০ জন প্রতিদিন নিযুক্ত হচ্ছেন।
গবেষক তথা সংস্থার সদস্য সৈকত নন্দী বলেন, ‘‘গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শুরু হয়। এখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেই বিদ্যুৎ গ্রামে বা পাওয়ার গ্রিডে পাঠানো সম্ভব। আপাতত আমরা সফল।’’
সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ওঙ্কার বলেন, ‘‘একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নদীর প্রবাহ থেকেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। আমাদের দেশে জলের উৎস অনেক। সেই স্রোত থেকে কম খরচে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। ওয়াটার টুরিজ়মেও অগ্রগতি আসবে। নতুন দিশা দেখাবে ভারতকে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)