Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পরিবেশের তোয়াক্কা নেই, বেআইনি ইটভাটার রমরমা

জাতীয় পরিবেশ আদালতের এই নির্দেশানুসারে রাজ্যের পরিবেশ দফতর বিভিন্ন জেলার ইটভাটাগুলিতে অভিযান চালায়। কয়েকটি জেলায় ইতিমধ্যেই বহু ভাটাকে বেআইনি ঘোষণা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে নিরুত্তাপ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।

মহিষাদলের তেরপেখ্যার একটি ইটভাটা। নিজস্ব চিত্র

মহিষাদলের তেরপেখ্যার একটি ইটভাটা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:১৭
Share: Save:

বেআইনি ইটভাটা রুখতে অন্যান্য জেলায় অভিযান শুরু হলেও এখনও ‘শীত ঘুমে’ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।
ইটভাটা মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সমস্ত ভাটামালিকদের দূষণরোধক পদ্ধতি অবলম্বন করার কথা বলা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ইটভাটা সেই পদ্ধতি না মেনেই ইট তৈরি করছে বলে অভিযোগ। আর এর পিছনে এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতাদের মদত আছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৮ নভেম্বর ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল ‘জিগজ্যাগ’ পদ্ধতি অবলম্বনের নির্দেশ দেয় ইটভাটাগুলিকে। নির্দেশিকায় বলা হয়, ভাটায় স্থায়ী চিমনিতে এই পদ্ধতি অবলম্বন না করলে ভাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে। জাতীয় পরিবেশ আদালতের এই নির্দেশানুসারে রাজ্যের পরিবেশ দফতর বিভিন্ন জেলার ইটভাটাগুলিতে অভিযান চালায়। কয়েকটি জেলায় ইতিমধ্যেই বহু ভাটাকে বেআইনি ঘোষণা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে নিরুত্তাপ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।

পরিবেশ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইটভাটার স্থায়ী চিমনিগুলি থেকে যে ‘ফ্লু’ গ্যাস বের হয় তাতে কার্বন ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধূলিকণার পরিমাণ বেশি থাকে। এই গ্যাস বাতাসের সঙ্গে মিশে বেশি পরিমাণে বায়ুদূষণ করে। ফলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে। ‘জিগজ্যাগ’ পদ্ধতি অবলম্বন করলে কার্বনসহ ক্ষুদ্র ধূলিকণা বাতাসে সহজে মিশতে পারবে না। তার কারণ, ক্রমাগত আঁকাবাঁকা চ্যানেলের মধ্য দিয়ে গ্যাস যেতে যেতে তার মধ্যে থাকা কার্বন-সহ ধূলিকণা নীচে থিতিয়ে পড়বে। জিগজ্যাগ পদ্ধতি অবলম্বনে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি লাভবান হতে পারবেন ভাটার মালিকেরা। এক্ষেত্রে কয়লার খরচ কমবে প্রায় কুড়ি শতাংশ। যেখানে ৭০ শতাংশ এক নম্বর ইট উৎপাদিত হওয়ার কথা সেখানে উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৮৫ শতাংশ। ফলে বেশি লাভ পাবেন ইটভাটার মালিকেরা। অন্যদিকে ইটের দাম কমায় স্বস্তিতে থাকবেন সাধারণ মানুষও।

মহিষাদল ব্লকের তেরোপেখ্যা অঞ্চলে এক ইটভাটার মালিক গণেশ হাজরা বলেন, ‘‘হঠাৎ এই নির্দেশিকায় আমরা দিশাহারা। দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ‘জিগজ্যাগ’ পদ্ধতি এখনই অবলম্বন করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া প্রশাসনের তরফে আমাদের কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।’’ জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা কারী অনুরূধ পন্ডা বলেন, ‘‘অন্যান্য জেলায় অভিযান শুরু হলেও পূর্ব মেদিনীপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা নিয়ে প্রশাসন তেমন উদ্যোগী নয়। যদিও আদালতের এ বিষয়ে নির্দেশ রয়েছে। জেলা পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। রাজনৈতিক নেতাদের মদতে এখনও এই সব অবৈধ ইটভাটা চালু রয়েছে।’’

পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালানো হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে নিজেও পরিদর্শন করছি। সব জেলাতেই এই অভিযান হবে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী যে সব ভাটায় ‘জিগজ্যাগ’ পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে না সেই সব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Midnapore Brick Kiln
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE