লক্ষ্মী মাইতি। নিজস্ব চিত্র
বয়সকে থোড়াই কেয়ার! ‘মাত্র’ ১০২ বছর ৮ মাস বয়সেও নিজের মতো স্বাধীন ভাবে উপার্জন করে চলেছেন তিনি। কারণ, তিনি কারও কাছে ‘বোঝা’ হতে নারাজ। সে জন্য আজও নিয়মিত আনাজ বিক্রি করেন। কথা হচ্ছে কোলাঘাটের লক্ষ্মী মাইতির প্রসঙ্গে।
এক কালে নিজের গ্রামে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তারপর শাঁখ বাজিয়ে দেশের স্বাধীনতাকে বরণ করা থেকে শুরু করে দেশভাগ— সবই সামনে থেকে দেখেছেন এই প্রবীণা। স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে কোলাঘাটের এই প্রবীণাকে দিয়েই স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করাতে চলেছে স্থানীয় এক ক্লাব।
বয়স যেন লক্ষ্মী মাইতির কাছে কেবলই সংখ্যা! এখনও কোলাঘাটের পুরাতন বাজার এলাকার পীরতলায় প্রতিদিন আনাজ বিক্রি করেন তিনি। বয়স ১০০ পার হলেও, ছেলে ও নাতিকে নিয়ে সংসারের ‘ব্যাটন’ আজও তাঁর হাতে। কোলা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগডিহা গ্রামে লক্ষ্মী মাইতির বাপের বাড়ি। ১৩ বছর বয়সে পুলশিটা পঞ্চায়েতের যোগীবেড় গ্রামে বিয়ে হয়ে যায় লক্ষ্মীর। দেশ তখন পরাধীন। লক্ষ্মীর শ্বশুরবাড়ির অদূরে দত্ত ভিলায় ব্রিটিশদের একটি প্রশাসনিক দফতর ছিল। ইংরেজ তাড়াতে যোগীবেড় গ্রামেও সংগঠিত উঠেছিল ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন। ১৯৪২ সালে গ্রামের সকলের সঙ্গে নিজের এলাকায় ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন লক্ষ্মী। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার দিন গ্রামে খোল করতাল নিয়ে কীর্তন করেছিলেন এলাকাবাসী। বিলি করা হয়েছিল বাতাসা। স্থানীয় অন্য মহিলাদের মতো লক্ষ্মীও স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলনের সময় শঙ্খধ্বনি দিয়েছিলেন। সেই সব স্মৃতি আজও টাটকা তাঁর মনে!
প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে স্বামীকে হারান লক্ষ্মী। এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মুখে ভাত তুলে দিতে সে সময় আনাজ ব্যবসা শুরু করেন লক্ষ্মী। ব্যবসার লাভের টাকায় পাঁচ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তৈরি করেছেন পাকা বাড়ি। বছর সাতান্নর ছেলে গৌর একটি চায়ের দোকান চালান। প্রতিদিন ভোর ৩টের সময় ছেলের সাইকেলে কোলাঘাট পুরাতন বাজারের পীরতলায় আসেন লক্ষ্মী। তারপর স্থানীয় চাষিদের থেকে সমস্ত ধরনের আনাজ কিনে, দুপুর পর্যন্ত বসে সেগুলি বিক্রি করেন। ছানির অস্ত্রোপচারের পর, দু’চোখে এখনও স্পষ্ট দেখেন এই প্রবীণা। কানে শুনতেও খুব একটা সমস্যা হয় না।
বয়সে ‘সেঞ্চুরি’ হাঁকানো লক্ষ্মীকে দিয়ে কোলাঘাটের একটি ক্লাব স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের উদ্যোগ হয়েছে। ক্লাবের প্রস্তাব রাজি লক্ষ্মীও। প্রবীণা বলছিলেন, ‘‘ওই লালমুখো ইংরেজদের অত্যাচার দেখেছি। আমি তখন গৃহবধূ। তিনবার দত্ত ভিলা অভিযানে সামিল হয়েছিলাম। সে সব এখনও চোখে ভাসছে।’’ ঠিক হয়েছে ১৫ অগস্ট যোগীবেড় গ্রাম থেকে সুসজ্জিত পালকিতে চাপিয়ে কোলাঘাট নতুন বাজারে আনা হবে লক্ষ্মী মাইতিকে। তারপর হবে পতাকা উত্তোলন। ক্লাবের সম্পাদক পার্থসারথি ঘোষ বলেন, ‘‘পরাধীন ভারতের সাক্ষী উনি। ওঁকে দেখলে বোঝা যায় স্বাধীনতা আসলে কী! তাই ওঁকে দিয়েই পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy