Advertisement
E-Paper

বেলপাহাড়ির বেল মেয়েদের আয়ের উপায়

মূলত মহিলারা গাছ থেকে কাঁচা বেল পাড়েন। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী ৩০০-৪০০ টাকা কুইন্টাল দরে তা কিনে নেন।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৫ ১০:১০
Share
Save

গাছ দিয়ে প্রচুর জায়গার নাম আছে জঙ্গলমহলে। আছে ফলের নামে গ্রামও। ‘ভুড়ুরু’ একধরনের জংলি ফল। তা থেকে গ্রামের নাম ভুড়ুরুডাঙা। জঙ্গলের ‘আগুই’ ফল থেকে গ্রামের নাম আগুইবিল। ভেলা বলা হয় জঙ্গলের কাজুবাদামকে। ভেলাইডিহা গ্রাম রয়েছে। সব ক’টি গ্রামই বেলপাহাড়ি ব্লকে। একমাত্র কাজু ছাড়া কোনও ফলই তেমন অর্থকরী নয়। কিন্তু বেলপাহাড়ির বেল হয়ে উঠেছে মেয়েদের বিকল্প আয়ের মাধ্যম। পেশার সঙ্গে জড়িয়ে কয়েকশো পরিবার।

বেলপাহাড়ির বিভিন্ন গ্রাম এবং জঙ্গলে রয়েছে অজস্র বেলগাছ। মূলত মহিলারা গাছ থেকে কাঁচা বেল পাড়েন। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী ৩০০-৪০০ টাকা কুইন্টাল দরে তা কিনে নেন। ব্যবসায়ীরাই স্থানীয় মহিলাদের কাঁচা বেল কাটার দায়িত্ব দেন। বেলের শক্ত খোলা ছাড়িয়ে কাঁচা শাস বঁটি দিয়ে তিন-চার টুকরো করে হয়। টুকরোগুলো শুকিয়ে নেওয়া হয় রোদে। শুকনো টুকরো ৩৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

মরসুমে শুকনো টুকরো কেনার জন্য হাজির হন ভিন্ জেলার আড়তদারেরা। তাঁরা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা প্রতি কুইন্টাল দরে সে সব কিনে নেন। আয়ুর্বেদের ওষুধ, চ্যবনপ্রাশ, মুখশুদ্ধি, মোরব্বা তৈরির কাজে ওই শুকনো শাঁস ব্যবহার করা হয়।

বেলপাহাড়ির সন্দাপাড়া পঞ্চায়েতের জোড়কোদা গ্রামের রিতা পাত্র, কাকলি পাত্ররা জানালেন, ১০০টি কাঁচা বেল কাটলে ২০-৩০ টাকা মজুরি মেলে। মাঘ মাসের শেষ থেকে ফাল্গুন-চৈত্র জুড়ে চলে বেলের এই কারবার। স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ী ফণি পাত্র বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক বেলগাছগুলো মরসুমে এলাকার মানুষের বিকল্প রুজির সংস্থান হয়ে উঠেছে।’’ তিনি জানান, জোড়কোদার পাশাপাশি, ডুমুরিয়া, পুকুরিয়া, বনশোল, কেন্দাপাড়া, চেকুয়াপাল, মধুপুর, ডররা, ঝিঙ্গাশোলের মতো বহু গ্রামে অসংখ্য বেলগাছ রয়েছে। বেলের শুকনো শাঁসের ভীষণই কদর! ফণি জানালেন, তাঁর মতো স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কুইন্টাল দরে বেলের শাঁস বিক্রি করেন।

মূলত পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার আড়তদারেরা গ্রামে এসে শুকনো বেলের শাঁস নিয়ে যান। লক্ষ্মীমণি সরেন, সুজাতা মাহাতোরা বলছেন, ‘‘বসন্তকালে বেলের জন্য বাড়তি দু’টো পয়সার মুখ দেখতে পাই।’’

বেলের সঙ্গে কি জড়িয়ে রয়েছে এলাকার নাম? হেসে ফণির জবাব, ‘‘হতে পারে, বেল থেকেই এলাকার নাম বেলপাহাড়ি।’’ স্থানীয় ক্ষেত্র সমীক্ষক বিধান দেবনাথ জানাচ্ছেন, বেলপাহাড়ি গ্রামের অদূরে উত্তর-পশ্চিমে এক সময় বেলে পাথরের পাহাড় ছিল। নাম ছিল বেলেপাহাড়। তবে পাহাড়টি কালের বিবর্তনে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ডুংরিতে পরিণত হয়েছে। অনুমান, বেলাপাহাড় থেকেই বেলপাহাড়ি নামের উৎপত্তি। তবে পাহাড়ি এলাকায় অসংখ্য বেলগাছ থাকার কারণেও বেলপাহাড়ি নামকরণ হয়ে থাকতে পারে।

গ্রামনামের উৎসে সংশয় থাকেই। তবে বেল থেকে বেলপাহাড়ি হলে তা বাসিন্দাদের কাছে সার্থকনামা। বাসিন্দাদের থাকার জায়গা। আবার আয়েরও পথও!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Belpahari

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}