Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাত বাড়াল মানুষ, জয় একরত্তি মৃত্যুঞ্জয়ের

সদ্যোজাত কুকুরছানাটিকে একসঙ্গে কামড়াচ্ছিল একপাল হিংস্র কুকুর। মায়ের সঙ্গবিহীন একলা পড়ে যাওয়া শাবকটিকে উদ্ধারে অগিয়ে আসেন গোপাল সরকার, সায়ন্তন রায়, সুদীপ দাস, দুলাল সরকাররা।

শুশ্রূষা: মৃত্যুঞ্জয়ের আঘাতে ওষুধ লাগাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। নিজস্ব চিত্র

শুশ্রূষা: মৃত্যুঞ্জয়ের আঘাতে ওষুধ লাগাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৬
Share: Save:

দিন কুড়ি আগের ঘটনা। সদ্যোজাত কুকুরছানাটিকে একসঙ্গে কামড়াচ্ছিল একপাল হিংস্র কুকুর। মায়ের সঙ্গবিহীন একলা পড়ে যাওয়া শাবকটিকে উদ্ধারে অগিয়ে আসেন গোপাল সরকার, সায়ন্তন রায়, সুদীপ দাস, দুলাল সরকাররা। মৃতপ্রায় শাবকটিকে স্থানীয় ক্লাবঘরে রেখে নিয়মিত শুশ্রূষা করে চলেছেন এই ছোট ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মিলিত চেষ্টায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে ‘মৃত্যুঞ্জয়’। সুস্থ হওয়ার পরে কুকুরছানাটির এমনই নাম দিয়েছেন তাঁরা। আপাতত ক্লাবঘরের নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে সে। ঝাড়গ্রাম শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর এলাকার ঘটনা।

জানা গিয়েছে, সপ্তাহ তিনেক আগে এক দুপুরে অরণ্যশহরের পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু সরণিতে বেপাড়ার কুকুরছানাটিকে আক্রমণ করেছিল একপাল কুকুর। ঘাড়ের কাছে কামড়ে ছানাটিকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছিল পালের পুরুষ কুকুরগুলো। এমন দৃশ্য দেখে স্থির থাকতে পারেননি এলাকার বিভিন্ন দোকানের কর্মীরা। ঢিল ছুড়ে কুকুরের পালকে হটিয়ে ছানাটিকে উদ্ধার করেন তাঁরা। কিন্তু রক্তাক্ত শাবকটি তখন তখন বেশ খারাপ— শ্বাসপ্রশ্বাস প্রায় থেমেই এসেছিল। তৎক্ষণাৎ শহরের পশুপ্রেমী তথা প্রাথমিক শিক্ষক সোমনাথ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। সে দিনই পশু চিকিত্সক গোপাল নস্করকে নিয়ে সেখানে পৌঁছন সোমনাথবাবু। শাবকটিকে পরীক্ষা করে গোপালবাবু জানান, ছানাটির ঘাড়ে ধারাল দাঁতের একাধিক ক্ষতচিহ্ন ছিল। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও টীকা লিখে দেন চিকিত্সক। গোপালবাবুর কথায়, “স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগেই শাবকটি বেঁচেছে। সময় মতো চিকিত্সা না হলে তাকে বাঁচানো যেত না।”

চিকিত্সকের নির্দেশ মতো ওই ব্যবসায়ীরাই নিয়মিত ক্ষত পরিষ্কার, ওষুধ খাওয়ানো, দুধ-বিস্কুট খাওয়ানোর দায়িত্ব পালন করছেন। শাবকটিকে নিয়মিত টীকা দিচ্ছেন ওষুধ ব্যবসায়ী সায়ন্তন রায়। স্থানীয় একটি ক্লাবের ঘরে বাক্সে চটের বিছানা পেতে রাখা হয়েছিল শাবকটিকে। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে এখন শাবকটি ক্লাবঘরের ভিতরে হুটোপাটি করে বেড়াচ্ছে। সায়ন্তনবাবুদের কোলে উঠে আদর খাচ্ছে। তাঁদের কাছ থেকে ওষুধও খাচ্ছে নিয়মিত। ব্যবসায়ীরা জানান, বড় না হওয়া পর্যন্ত ‘মৃত্যুঞ্জয়’কে রাস্তায় ছাড়া হবে না।

স্থানীয় সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রাম শহরে পথ কুকুরের সংখ্যা দিন-দিন বাড়ছে। কিন্তু পথ কুকুরদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা নেই শহরে। নেই সচেতনতাও। সোমনাথ দাসের মতো হাতে গোনা কয়েক জন পশুপ্রেমী ব্যক্তিগত ভাবে তাদের চিকিত্সার ব্যবস্থা করেন। সোমনাথবাবু বলেন, “পথ কুকুরদের নিয়ে পুরসভা উদ্যোগী হলে আমরা সাহায্য করতে রাজি।” ঝাড়গ্রাম পুরসভার উপ-পুরপ্রধান শিউলি সিংহ বলেন, “শহরে অসংখ্য পথ কুকুর হয়ে গিয়েছে। এ বার কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হবে। তবে ওই ব্যবসায়ীদের মানবিকতার জন্য তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dog Injured Recover
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE