নির্মীয়মাণ কারখানার দিকে চেয়েই দিন গুনছেন শালবনির বাসিন্দারা। —ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
লগ্নির আশ্বাস মিলেছে। পাওয়া গিয়েছে কর্মসংস্থানের আশ্বাসও। আর তাতেই ফের আশায় বুক বাঁধছে শালবনির বাসিন্দারা।
আগামী মার্চ মাসেই শালবনিতে সিমেন্ট কারখানায় উৎপাদন চালু হয়ে যাবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন জেএসডব্লিউ-এর কর্ণধার সজ্জন জিন্দল। সঙ্গে আরও একগুচ্ছ লগ্নির প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি। কাজ পাওয়ার আশায় তাই অকাল দীপাবলি শালবনিতে। কাজের দাবিতে আগে একাধিকবার আন্দোলনে নেমেছেন জমিদাতারা। জিন্দলের আশ্বাসে অবশ্য আরও একটু সময় অপেক্ষা করতে চাইছেন তাঁরা। আন্দোলন থেকে সরে আসার কথা বলছেন জমিদাতা সংগঠনের নেতা পরিষ্কার মাহাতো। বুধবার তিনি বলেন, “এখন আর আন্দোলন হবে না। জিন্দলরা আগামী মার্চের মধ্যে সিমেন্ট কারখানায় উৎপাদন চালুর আশ্বাস দিয়েছেন। এত বছর অপেক্ষা করলাম। এই সময়টুকুও অপেক্ষা করব।’’
২০০৮ সালের ২ নভেম্বর। শালবনিতে প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্পের শিলান্যাস হয়। শালবনিতে ৪,৩৩৪ একর জমি নিয়েছিল জিন্দল গোষ্ঠী। এর মধ্যে ৩,০৩৫ একর খাস জমি। ৭৯৯ একর জমি প্রাণিসম্পদ বিভাগের। ১৮৯ একর জমি পাট্টা প্রাপকদের থেকে ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে ফিরিয়ে নিয়েছিল রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। বাকি ২৯৪ একর জমি রায়তি। জমিদাতাদের থেকে সরাসরি কিনে নিয়েছিল জিন্দলরা। ওই জমিতে প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্পে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হওয়ার কথা ছিল। পরে অবশ্য ইস্পাত প্রকল্প স্থগিত হয়ে যায়। চলতি বছরের শুরুতে শালবনিতে সিমেন্ট কারখানার শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কারখানার কাজ এখন চলছে। প্রকল্প এলাকায় সিমেন্ট কারখানার সম্প্রসারণ, রং কারখানা, ইস্পাতের অনুসারী শিল্প ও নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য মঙ্গলবার আরও বিনিয়োগের কথা জানান সজ্জন জিন্দল।
প্রতিশ্রুতির কথা অবশ্য কম শোনেনি শালবনি। এখন প্রতিশ্রুতি পূরণের আশায় দিন গোনা শুরু হয়েছে। বুধবার সকালে জিন্দলদের প্রকল্প এলাকার সামনে গিয়ে দেখা যায়, জনা কয়েক যুবকের জটলা। সকলের চোখ নির্মীয়মাণ সিমেন্ট কারখানার চিমনির দিকে। জটলায় মিশে ছিলেন অসিত মাহাতো, আদিত্য মাহাতো, সীতারাম মাহাতোরা। সকলে জমিদাতা পরিবারের সদস্য। জিন্দল প্রকল্পে কাজ পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন। অসিতের কথায়, “আগে ইস্পাত হওয়ার কথা ছিল। আপাতত, সিমেন্ট কারখানাটাই চালু হোক। শালবনির মানুষ এখানে একটা কারখানা চাইছেন।” সীতারাম বলছিলেন, “সেই ২০০৮ সাল থেকে কাজের আশায় দিন গুনছি। এখন ২০১৬। অনেকটা সময় চলে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি কারখানা চালু হলেই ভাল।” জিন্দলদের নতুন বিনিয়োগের ঘোষণার পরেও অবশ্য শাসক দলকে বিঁধছে বিরোধীরা। বাম- শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসির জেলা সম্পাদক বিপ্লব ভট্টের খোঁচা, “শিল্পের বদলে ল্যাংচা, তেলেভাজার গল্প শোনালে যা হওয়ার তাই হচ্ছে! রাজ্য থেকে শিল্প- সম্ভাবনা উড়ে গিয়েছে।” তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের অবশ্য দাবি, “শালবনির ভাল দিন আসছে। জিন্দলদের বিনিয়োগে রাজ্য উপকৃত হবে।”
এই চাপানউতোরে অবশ্য মন নেই শালবনির। জিন্দলদের প্রকল্প এলাকার সামনে দাঁড়িয়ে অসিত, আদিত্য, সীতারামরা বলছিলেন, “কারখানার জন্যই জমি দিয়েছে পরিবার। কারখানা হলে একটা কাজ পাব। এটাই বড় কথা।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘ আশা করি, জিন্দলরা কথা রাখবেন। মার্চের মধ্যেই সিমেন্ট উৎপাদন শুরু হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy