Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
হয়রানির স্মৃতি ফিকে হয়নি এখনও

ছোট ব্যবসায় বড় আঘাত

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেন, তখন তাঁর ঘোষণার মূল লক্ষ্য ছিল কালো টাকার ও জাল টাকার কারবারিরা।

n ফলক: খাসজঙ্গলের এই শিল্পতালুকেই বিপদে পড়েছিলেন ছোট ব্যবসায়ীরা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

n ফলক: খাসজঙ্গলের এই শিল্পতালুকেই বিপদে পড়েছিলেন ছোট ব্যবসায়ীরা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ১০:৪৮
Share: Save:

নোট বাতিলের ফলে ধাক্কা খেয়েছিলেন ছোট ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, ধাক্কার ঘা এখনও শুকোয়নি।

মেদিনীপুরের খাসজঙ্গলে বেশ কিছু ছোট-মাঝারি কারখানা রয়েছে। এখানকার ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট আঁন্ত্রেপ্রেনিওর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন খাসজঙ্গল’- এর সম্পাদক সঞ্জীব রায়ের কথায়, ‘‘নগদের অভাবে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের নাভিশ্বাস উঠেছিল। এখনও বাজারে নগদের অভাব রয়েছে। যে অভাবে আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। জেলার অর্থনীতি ও আয়বৃদ্ধির হারও একটা বড় ধাক্কা খেয়েছে।’’

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেন, তখন তাঁর ঘোষণার মূল লক্ষ্য ছিল কালো টাকার ও জাল টাকার কারবারিরা। বড় অঙ্কের নোট বাতিল করে দেশে সঞ্চিত কালো টাকার ভাণ্ডারে তিনি আঘাত হানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নোট বাতিলের ফলে বিপাকে পড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্র। বিপাকে পড়েন ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও। নগদের জোগান কমে যাওয়ায় কেউ রুটিরুজি হারিয়েছিলেন। কারও ব্যবসা মার খেয়েছিল। ক্ষোভ গিয়ে পড়েছিল মোদী সরকার তথা বিজেপির উপরেই। সঞ্জীব বলছিলেন, ‘‘যে নগদহীন অর্থ ব্যবস্থার কথা প্রধানমন্ত্রী ভেবেছেন, সিঙ্গাপুরের মতো ধনী দেশে তার উপকারিতা থাকতেই পারে। কিন্তু আমাদের মতো গরিব দেশের পরিকাঠামোতে সেটা চালাতে গেলে যে দেশের প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হবে আর সাধারণ মানুষ যে অশেষ দু:খকষ্টে পড়বে সেটা অর্থনীতিবিদরাই তো বারবার বলেছেন। বাস্তবে তেমনটা দেখাও গিয়েছে।’’

সমস্যা ঠিক কোথায়? ছোট- মাঝারি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, তাঁরা যেখান থেকে মালপত্র কেনেন সেখানে নগদ টাকাই দিতে হয়, চেক নেওয়া হয় না। আবার কর্মচারীদেরও পারিশ্রমিক নগদে দিতে হয়। সেই নগদেই টান আসে। মেদিনীপুরে চাউমিন তৈরির কারখানা রয়েছে পুলক গুহের। পুলকের কথায়, ‘‘নোট বাতিলের ফলে নগদের সঙ্কট তুঙ্গে উঠেছিল। ব্যাঙ্ক- এটিএমের সামনে ভোর থেকে লাইন দিতে হয়েছিল। তাও টাকা মেলেনি।’’ শহরে হকারি করেন সৌমেন পাল। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দুর্দশা আরও বেড়েছে।’’ মেদিনীপুরের এক হকারের কথায়, ‘‘মোদী যা করেছেন তাতে দেশের হয়তো কিছু ভাল হয়েছে। কিন্তু আমাদের মতো মানুষের পেট চলবে কীভাবে, সেটা প্রধানমন্ত্রী একবার ভেবে দেখলে পারতেন।’’ ছোট উদ্যোগপতিদের অনেকে উৎপাদন কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

তিন বছর কেটে গিয়েছে। যদিও ছোট ব্যবসায়ীদের একাংশ বলছেন, সে সময়ের ভোগান্তির স্মৃতি ফিকে হয়নি এখনও। সামনে লোকসভার ভোট। তবে কি নোট বাতিলের চোট লাগবে ভোটের বাক্সে? জল্পনা চলছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘নোট বাতিলে নগদ টাকার অভাবে ছোট ছোট ব্যবসা মারাত্মক মার খেয়েছে। ছোট ব্যবসায় অনেকে কাজ হারিয়েছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। বিজেপি এর জবাব পাবে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের অবশ্য দাবি, ‘‘নগদের জোগান দ্রুত বেড়েছে। নোট বাতিলের প্রভাব এখন আর একেবারেই নেই।’’ (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Note Ban Midnapore Lok Sabha Election 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE