আসল কথা লুকোননি বছর চব্বিশের যুবক। থানায় ফোন করে সরাসরি বলেছিলেন, ‘‘আমার প্রেমিকা নাবালিকা। ওর বাড়ি থেকে জোর করে অন্য যুবকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আপনার আটকান।’’
প্রথমে বিশ্বাস করেননি নন্দকুমার থানায় কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক। ভেবেছিলেন প্রেমিকার বিয়ে আটকাতেই ‘নাবালিকা’ তত্ত্ব খা়ড়া করছেন যুবক। কিন্তু বার বার ফোন করেন ওই যুবক। শেষে এক প্রকার বিরক্ত হয়েই খোঁজ শুরু করে পুলিশ। জানা যায়, তথ্য সত্যি। বছর ষোলোর এক নাবালিকাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছে তার পরিবার। আয়োজন সব সারা। এসে গিয়েছে বরযাত্রীও। শেষ পর্যন্ত পুলিশ বাহিনী নিয়ে গিয়ে নন্দকুমারের জয়েন্ট বিডিও সে বিয়ে আটকান।
জানা গিয়েছে ওই নাবালিকা এ বছরই স্থানীয় একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছে। শুক্রবার পাশের গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ের আয়োজন করে পরিবার। বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রী ও প্রতিবেশী মিলিয়ে প্রায় ৩০০ জনের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে ওই নাবালিকার পরিবার। নন্দকুমার ব্লকের জয়েন্ট বিডিও সুজিত লোধ পাত্রীর বাবা, মাকে বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করেন। এ দিকে ‘প্রেমিক’ পরিচয় দেওয়া ওই যুবকের দাবি, ‘‘নাবালিকা বলেই তো আমি বিয়ে করতে পারিনি। অথচ ওর বাবা, মা জোর করে অন্যের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল।’’
এ দিনই পটাশপুর -১ ব্লকের অন্য এক স্কুল ছাত্রীর বিয়ে বন্ধ করে প্রশাসন। ওই মেয়েটিরও ১৬ বছর বয়স। তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকেও এক নাবালিকার বিয়ের অভিযোগ আসে তমলুক থানায়। পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেই বিয়ে বন্ধ হয়েছে।
কিন্তু স্কুল পড়ুয়া নাবালিকাদের বিয়ে রুখতে মুখ্যমন্ত্রী যেখানে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছেন সেখানে কেন এত নাবালিকার বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছে? প্রশ্ন উঠছে সচেতনতা নিয়েই। নন্দকুমারের জয়েন্ট বিডিও অবশ্য বলছেন, ‘‘নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা অনেক কমেছে। ২০১৪ সালে আমাদের ব্লকের আটটি জায়গায় নাবালিকার বিয়ে ঠেকাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। ২০১৫ সালে এ রকম একটি ঘটনাও নেই। এ বছর এটিই ছিল প্রথম অভিযোগ।’’ তাঁর দাবি, পরিবারকে সচেতন করার জন্য স্কুলে কন্যাশ্রী ক্লাব গড়া হয়েছে। এতেই সুফল পাওয়া গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘স্কুল পড়ুয়াদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন করাতেও প্রচার চালাচ্ছি। তবে মাঝে মধ্যেই অভিযোগ আসে। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’