প্রচারে জোড়া কৌশল সভামঞ্চে মমতা।ছবি: নিজস্ব চিত্র।
সভার পাশাপাশি পদযাত্রা। জঙ্গলমহলে এই রণকৌশলেই প্রচার শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন লালগড় ও গোয়ালতোড়ে সভা দিয়ে প্রচার শুরু করেন মমতা। লালগড়ের সভায় সাঁওতালি ভাষায় আদিবাসীদের সম্বোধন করে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। সাঁওতালিতে ইস্তাহার প্রকাশের কৃতিত্ব দাবি করতেও ভোলেননি নেত্রী। নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি জোট নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। হেলিকপ্টারে গোয়ালতোড়ে পৌঁছে সেখানকার সভাতেও ফের জোটকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘২০১৬ তো বটেই ২০১৯, ২০২১ সালেও তৃণমূল সরকার গড়বে। কারও ক্ষমতা নেই তৃণমূল কংগ্রেসকে স্তব্ধ করার। যারা তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে তাদের ঠিকানাটা মানুষ কিন্তু হারিয়ে দেবে।”
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দলের জেরবার অবস্থার কথা নেত্রীর অজানা নয়। তাই সকলকে নিয়ে ভোটে জয় নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি। নির্বাচনের কিছুদিন আগেও যে শ্রীকান্ত মহাতোকে নানা অভিযোগের কারনে দলের জেলা যুব সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন, শালবনি বিধানসভা কেন্দ্রের দলের প্রার্থী সেই শ্রীকান্তর সঙ্গেও কথা বললেন শান্ত মেজাজেই। নিজের কেন্দ্রে জয় সুনিশ্চিত করা তো বটেই অন্য কেন্দ্রেও প্রচারে যেতে বললেন শ্রীকান্তকে! তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী সব থেকে চিন্তিত নারায়ণগড় ও সবং বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে। তাই যাঁরা প্রার্থী নন, তাঁদের বেশি করে নারায়ণগড়, সবংয়ে যাওয়ার কথা বলেন।
এ দিন মমতার কর্মসূচির আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্য ছিল মেদিনীপুর শহরে পদযাত্রা। মমতা হাঁটবেন শুনে আগে থেকেই তটস্থ ছিলেন পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকরা। কর্মী-সমর্থকদের আবেগ-উচ্ছ্বাস সামাল দিতে তৃণমূলনেত্রীর নিরাপত্তারক্ষীদেরও হিমশিম খেতে হয়েছে।
লালগড়, গোয়ালতোড়ে সভা সেরে এ দিন মেদিনীপুরে আসেন মমতা। ‘দিদি’-কে দেখার জন্য বেলা তিনটে থেকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল ছোট্ট কোয়েল। কোয়েল প্রধান। পরনে সবুজ পাড় হলুদ শাড়ি। শাড়িতে যেন তাকে আরও সুন্দর দেখাচ্ছিল। সাড়ে চারটে নাগাদ যখন ‘দিদি’ এলো, তখন একছুটে তাঁর কাছে চলে গেল বছর সাতেকের মেয়েটি। শাড়ি পরা ছোট্ট কোয়েলকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গাল টিপে আদর করলেন। সঙ্গে জিজ্ঞাসা, ‘কী রে এত ভিড়ের মধ্যে কেন এসেছিস?’ দ্বিতীয় শ্রেণির এই ছাত্রীর সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘দিদি তোমাকে দেখার জন্য!’ ফের জড়িয়ে ধরে আদর করলেন তৃণমূলনেত্রী। ‘ভালো থাকিস’ বলে এগোতে শুরু করলেন।
এর আগে বহুবার মেদিনীপুরে এসেছেন তৃণমূলনেত্রী। শহর মেদিনীপুরের রাস্তাঘাটও তাঁর খুব একটা অচেনা নয়। তবে এত দিন জনসভাই করেছেন তিনি। এ দিন অবশ্য অনায়াসে প্রায় ছ’কিলোমিটার পথ হাঁটেন তিনি। সময় নেন ঘড়ি ধরে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট। দলের নেতাদের অনেকেও নেত্রীর সঙ্গে পায়ে পা মেলাতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন!
পথে-প্রচারে। মেদিনীপুর শহরে দলীয় পদযাত্রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী মৃগেন মাইতি যেমন পরে আর মিছিলে ছিলেন না। দলের অন্যতম জেলা কার্যকরী সভাপতি শ্যামপদবাবুও মিছিলের শেষ পর্যন্ত ছিলেন না! তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলছিলেন, “হাঁটায় নেত্রীর সঙ্গে পেরে ওঠা শুধু কঠিন নয় বেশ কঠিন। এটা আজ বুঝে গেলাম!” শুধু জেলা নেতারা নন, তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও মিছিলের শুরুতে ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত যাননি। কিছুটা গিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েন! এ দিন মিছিলের ফাঁকে মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামীজিদের সঙ্গেও কথা বলেন মমতা।
তবে মিছিলে খুব বেশি কর্মী- সমর্থক ছিলেন না। মিছিল যে এলাকার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, সেই এলাকার কর্মীরা মিছিলে যোগ দিয়েছেন। পরে ফের বেরিয়ে গিয়েছেন। তৃণমূলের এক জেলা নেতা মানছেন, মিছিলটা আরও সংগঠিত হলে ভাল হত! সিপিএমের মেদিনীপুর শহর জোনাল সম্পাদক সারদা চক্রবর্তীর টিপ্পনী, “ভারতী ঘোষের না- থাকার অভাবটা ওরা (তৃণমূল) বোধহয় আজ বেশ
বুঝতে পারছে!”
(সহ প্রতিবেদন: বরুণ দে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy