অনুমোদন ছাড়াই চলছিল এই কলেজ। নিজস্ব চিত্র
চকচকে কাগজে ছাপানো প্রচারপত্র। জ্বলজ্বলে অক্ষরে লেখা পশ্চিমবঙ্গ ও ভারত সরকার অনুমোদিত কারিগরি কলেজের যাবতীয় সুযোগ সুবিধার কথা। প্রশিক্ষণের পর নিশ্চিত চাকরির আশ্বাস দেওয়া বিজ্ঞাপনে ছাপা ছিল তমলুকের বহুতল কলেজ ভবনের ছবিও। মোটা টাকার বিনিময়ে সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসতেন কয়েকশো বেকার যুবক, যুবতী। একরাতের অভিযানে সিল হয়ে গেল সেই ‘তাম্রলিপ্ত টেকনিক্যাল কলেজ’।
শুক্রবার রাতে তমলুক শহরের নিমতলায় ওই কারিগরি কলেজে অভিযান পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখা। তখনই ধরা পড়ে কোনও রকম অনুমোদন ছাড়াই চলছিল কলেজটি। গ্রেফতার করা হয়েছে কলেজের মালিক গোপাল বেরাকে। ভুয়ো চিকিৎসক, মেডিক্যাল কলেজের পর এমন ভুয়ো কারিগরি কলেজের হদিসে নড়ে বসেছে জেলা পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত কলেজ মালিকের বিরুদ্ধে প্রতারণা-সহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গোপাল বেরাকে শনিবার তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁর পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। এ দিন আদালতে চত্বরে দাঁড়িয়েও গোপালবাবু দাবি করেন, ‘‘আমার কলেজের সরকারি অনুমোদন আছে।’’
বছর তিনেক জেলাশাসকের অফিসের কাছে এক বহুতল ভবনের তিনতলার অংশ ভাড়া নিয়ে শুরু হয় এই কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় কাপাসবেড়িয়ার বাসিন্দা গোপালবাবু আগে মেচেদার একটি বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াতেন। পরে তিনি নিজে এই কলেজ চালু করেন। ইলেক্ট্রিশিয়ান, ফিটার, ওয়েল্ডার, এয়ারকন্ডিশনিং-রেফ্রিজারেশান, কম্পিউটার রিপেয়ারিং, মোবাইল রিপেয়ারিং, অটোমোবাইল-সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের কোর্স পড়ানো হত। ছিল ক্যাম্পাসিং-এর আশ্বাসও। ভর্তির সময় বা পরবর্তী সময়ে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া হত বলে অভিযোগ। কলেজের এক পড়ুয়া জানিয়েছেন, দু’বছরের ইলেক্ট্রিশিয়ান কোর্স পড়তে ৬০ হাজার টাকা এবং ফিটার কোর্স পড়তে ৪৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি রাজ্য কারিগরি শিক্ষা দফতরের তরফে পুলিশকে জানানো হয়েছে, তাদের অনুমোদন ছাড়াই চলছে কলেজটি। এরপরেই জেলা পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখা ও তমলুক থানার পুলিশ বাহিনী ওই কলেজে হানা দেয়। পুলিশের দাবি, সরকারি অনুমোদন সংক্রান্ত কোনও নথি দেখাতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, কলেজের পরিচালন সমিতিতে গোপালবাবু, তাঁর স্ত্রী ও কয়েকজন আত্মীয়কে রাখা হয়েছে।
অভিযানের কথা জানতেন না পড়ুয়ারা। শনিবার সকালেও চণ্ডীপুর, নন্দীগ্রাম, নন্দকুমার, ময়না-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কলেজ চত্বরে ভিড় করেছিলেন তাঁরা। পড়ুয়ারা সকলেই জানিয়েছেন, ওই কলেজ কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের কারিগরি শিক্ষা দফতরের অনুমোদনপ্রাপ্ত বলেই তাঁদের জানানো হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy