কৃষক বন্ধুর ফর্ম বিলি চলছে দাসপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
সামনেই আউশ, আমনের চাষ। হাতে টাকার টান। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করে কিছুটা টাকা পেলে ভালই হয়। ঘাটালের এক চাষি গিয়েছিলেন ব্লক অফিসে। কবে নাম নথিভুক্তির শিবির হবে জানতে।
না, প্রশ্নের জবাব পাননি ওই কৃষক। পাবেন কী ভাবে! ব্লক অফিস হোক বা কৃষক দফতর। অভিযোগ, শিবির শুরুর বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য নেই কারও কাছে। ওই কৃষকের আক্ষেপ, ‘‘আত্মীয়, স্বজনদের অনেকেই টাকা পেয়েছেন। আমার নামই এখনও নথিভুক্ত হয়নি। অফিসারেরা কিছুই বলতে পারলেন না।’’
ভোটের ফল প্রকাশের পর মাস কেটেছে। গতি আসেনি সরকারি নানা প্রকল্পে। কৃষকবন্ধু প্রকল্পের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতিটা এক। নয়া এই প্রকল্প ঘোষণার পর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শিবির করে নাম নথিভুক্তকরণের কাজ শুরু হয়। জেলায় মোট চাষির সংখ্যা পাঁচ লক্ষ ৭৬ হাজার। মার্চ মাসে ভোটের দিন ঘোষণার আগে পর্যন্ত ১ লক্ষ ৯২ হাজার চাষির নাম নথিভুক্ত হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রের খবর, ভোট মেটার পর গত একমাসে প্রায় ২০ হাজার কৃষকের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। তবে কৃষি দফতরের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভোটের আগে বহু শিবির হয়েছিল। কিন্তু সে সময় উপভোক্তদের নাম নথিভুক্ত হয়নি। তাই এই ২০ হাজারের মধ্যে পুরনো শিবিরের উপভোক্তাদের নামও রয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মানলেন, “প্রকল্প ঢিমেতালে চলছে সেটা আমাদেরও নজরে এসেছে। কোথায় সমস্যা সেটাও চিহ্নিত করা গিয়েছে। এই অবস্থায় ব্লকে পঞ্চায়েতে জরুরি ভিত্তিতে শিবির করে নাম নথিভুক্তকরণের কাজ শেষ করা হবে।”
নিয়ম হল, ব্লকে ব্লকে শিবির করে চাষির নাম নথিভুক্ত করা হয়। জেলায় মোট ২১ টি ব্লক। একই দিনে গোটা জেলায় ৮৮টি শিবিরের আয়োজন করা হয়। প্রতি শিবিরে গড়ে ৪০০ জন কৃষকের নাম নথিভুক্ত করা হয়। চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ভোটার কার্ড, জমির দলিল থাকলেই নথিভুক্ত হওয়া যায়। নথিভুক্তিকরণের পর্ব মিটলেই চাষিদের হাতে আসে স্মার্ট কার্ড। একই সঙ্গে এই কাজের অন্য দিকও রয়েছে। নথিভুক্ত ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সী কোনও চাষি মারা গেলে মৃতের পরিবারের পক্ষে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য পাওয়া সহজ হয়। এমনিতে কৃষি কাজে সহায়তার জন্য কৃষক বন্ধু প্রকল্পে বছরে দু’বার আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। রবি ও খারিফ মরসুম মিলিয়ে সর্বোচ্চ মোট পাঁচ হাজার টাকা অনুদান পান চাষিরা। এখন রবি মরসুমের জন্য অনুদান দেওয়া শুরু হয়েছে। জমির পরিমাণ অনুযায়ী এক হাজার, আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। কিন্তু প্রকল্পে নথিভুক্তের কাজ ঢিমেতালে চলায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, রবি মরসুমের অনুদানের সুবিধা আদৌও সময়ের মধ্যে পাবেন তো চাষিরা! কৃষি দফতরের সহ অধিকর্তা (তথ্য) দুলাল দাস আধিকারী আশ্বস্ত করে বলেন, “কৃষকবন্ধুর প্রকল্পে চেক এসে গিয়েছে। বহু চেক বিলি হয়ে গিয়েছে। বাকি চাষিরাও যাতে সময়ে চেক পান, তার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।”
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, ফল প্রকাশের পর জেলায় খড়্গপুর, ঘাটাল ও মেদিনীপুর সদর-তিনটি মহকুমাতেই কাজের গতি নেই। বহু পঞ্চায়েতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে। অনেক ব্লকেই প্রধান সহ সদস্যেরা পঞ্চায়েতমুখো হচ্ছেন না। তাতে জটিলতা বাড়ছে। আরও খারাপ অবস্থা ঝাড়গ্রাম জেলাতে। উপযুক্ত প্রচারের অভাবে জেলার বহু চাষি বিষয়টির কথা জানেনই না। তথ্য বলছে, ঝাড়গ্রাম জেলায় এখন পর্যন্ত এক হাজার কৃষক প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বেশি সংখ্যক চাষি যাতে প্রকল্পের সুবিধা পান তার জন্য প্রচারে জোর দেওয়া হবে। নিয়মিত মাইক প্রচারও হবে।”
ঝাড়গ্রামে আদিবাসী,ভূমিজ-মুন্ডা শবরদের ৯৫ শতাংশ চাষির নিজের নাম জমি নেই। পূবপুরুষের থাকা জমিতেই নাম পরিবর্তন না করিয়ে চাষ করছেন। তাই আবেদন করেও তাদের নাম খারিজ হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy