Advertisement
E-Paper

হাসপাতাল নয়, প্রসবে ভরসা হাতুড়ে

অভিযোগ, স্বাস্থ্যবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এগরা মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় হাতুড়েদের কাছে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের সন্তান প্রসব করানো হচ্ছে হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪০
হাতুড়েদের ক্লিনিকে চলছে সন্তান প্রসব করানোর কাজ। প্রতীকী ছবি।

হাতুড়েদের ক্লিনিকে চলছে সন্তান প্রসব করানোর কাজ। প্রতীকী ছবি।

সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবা থাকলেও অধিকাংশ অন্তঃসত্ত্বা হাসপাতালে যাচ্ছেন না। কাছাকাছি স্থানীয় হাতুড়ের উপরেই বেশিরভাগ সময় ভরসা করছেন না। সেই সুযোগ নিয়ে হাতুড়েরাও চিকিৎসা করছেন তাঁদের। তাঁদের ক্লিনিকে চলছে সন্তান প্রসব করানোর কাজ। উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়া ওই সব চিকিৎসা কেন্দ্রে সন্তান প্রসব করানোর ফলে বহু ক্ষেত্রে প্রসূতি এবং শিশুমৃত্যর ঘটনা ঘটছে। এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে এগরা মহকুমার পানিপারুল এলাকায়।

অভিযোগ, স্বাস্থ্যবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এগরা মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় হাতুড়েদের কাছে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের সন্তান প্রসব করানো হচ্ছে হচ্ছে। এগরার পানিপারুল বাজার এলাকায় হাতুড়ের বেআইনি চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে খোদ জেলা স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দিয়েছেন স্থানীয় সরকারি চিকিৎসকেরা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে পানিপারুল বাজার প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। এগরা-২ ব্লকের অধীন পানিপারুল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা অন্তঃসত্ত্বাদের নাম সরকারি খাতায় লিপিবদ্ধ করলেও তাঁদের অনেকেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন না বলে অভিযোগ। মাসিক চিকিৎসা থেকে শিশু জন্মানো—সমস্ত কিছুতেই স্থানীয় হাতুড়ের নির্ভরশীল থাকেন। অথচ পানিপারুল হাসপাতালে দু’জন চিকিৎসক রয়েছেন। অন্তঃসত্ত্বার সন্তান প্রসব করানোর সমস্ত রকমের প্রাথমিক পরিষেবা রয়েছে।

সম্প্রতি এগরার রায়দা গ্রামে এক হাতুড়ের নিজস্ব ক্লিনিকে সন্তান প্রসব করানোর সময় সুমিত্রা গিরি নামে এক প্রসূতির মৃত্যু ঘটে। ওই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট হাতুড়ের শাস্তির দাবিতে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল মৃতার পরিবার। কিন্তু তারপরেও এই ধরনের ঘটনা বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ। জুমকি, সাহারা, চাটলা, শ্রীপুর, পানিপারুল-সহ একাধিক গ্রামের মানুষ এখনও হাতুড়ের উপরেই ভরসা করেন। তাঁদের যুক্তি, রাতবিরেতে কিছু হলে দূরের স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়। অথচ আপদে বিপদে খবর পাঠালে হাতের কাছে এই হাতুড়েরাই এসে হাজির হন।

সরকারিভাবে হাতুড়েদের কাছে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের চিকিৎসা করানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু হাতুড়েদের অনেকেই সেই বিধি মানছেন না বলে অভিযোগ। উল্টে নিজেদের হেফাজতে থাকা কোনও রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখলে স্থানীয় নার্সিংহোমের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কখনও নার্সিংহোমের চিকিৎসকের নির্দেশ শুনে নিজস্ব ক্লিনিকে সন্তান প্রসব করানো অভিযোগ রয়েছে হাতুড়েদের বিরুদ্ধে। এগরা-২ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত মান্না বলেন, ‘‘এ ধরনের অভিযোগ এসেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’’

এক রোগীর পরিবারের অভিযোগ, ‘‘সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার কতা বলা হয়। অথচ বাস্তবে সেখানে অন্তঃসত্ত্বাদের চিকিৎসার ন্যূনতম পরিষেবা মেলে না। ফলে ঝুঁকি আছে জেনেও হাতুড়ের কাছে ছুটতে হয়।’’ পানিপারুল বাজারে এক হাতুড়ের কথায়, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে এই ধরনের কোনও বেআইনি চিকিৎসার কাজ করি না। তা ছাড়া প্রশিক্ষণ পেলেও হাতুড়েদের অন্তঃসত্ত্বাদের চিকিৎসা করার আইন নেই। তবে শুনেছি কিছু হাতুড়ে নিজেদের ক্লিনিকে এমন কাজ করছেন। এটা বেআইনি এবং শাস্তি যোগ্য অপরাধ।’’

এ বিষয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাই মণ্ডল জানান, এ বিষয়ে আরও সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ এড়িয়ে কিছু হাতুড়ের এমন বেআইনি কাজের অভিযোগ এসেছে। নির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের জন্য স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Child Birth Pregnant Woman Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy