Advertisement
E-Paper

যন্ত্র অকেজো, ন্যাপকিনেরও জোগান নেই

ঋতুস্রাবের সময় সুস্বাস্থ্যের জন্যই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার জরুরি। অথচ মাসের ওই দিনগুলিতে এখনও অনেকে কাপড় ব্যবহার করেন। তা থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।

সৌমেশ্বর মণ্ডল ও বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:১০
শালবনির ভাদুতলা স্কুলে অচল ভেন্ডিং মেশিন। নিজস্ব চিত্র

শালবনির ভাদুতলা স্কুলে অচল ভেন্ডিং মেশিন। নিজস্ব চিত্র

কোনও স্কুল বরাত দিয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। কোনও স্কুল আবার অক্টোবরে। কিন্তু এখনও এসে পৌঁছয়নি ন্যাপকিন। ফলে, মেদিনীপুর শহর এবং শহরতলির বহু স্কুলেই ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন থাকা সত্ত্বেও ছাত্রীদের সমস্যা মিটছে না। ঋতুস্রাবের সময় ছাত্রীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রাখার যে লক্ষ্যে নিয়ে মেশিন বসানো হয়েছে, পূরণ হচ্ছে না তা-ও। অনেক ক্ষেত্রে মেশিন বিকল হয়ে পড়ে থাকায় সমস্যা হচ্ছে।

মেদিনীপুরের সাংসদ সন্ধ্যা রায়ের তহবিল থেকে পাওয়া অর্থ সাহায্যে তাঁর নির্বাচনী এলাকার মোট ৭০টি স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছিল ‘সম্পূর্ণা’ প্রকল্পে। এর মেদিনীপুর শহরের ৫টি স্কুল রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবশ্য যন্ত্রের সুফল পাচ্ছে না ছাত্রীরা। মেদিনীপুর কলেজিয়েট গার্লসের পরিচালন সমিতির সভাপতি মধুসূদন গাঁতাইত জানালেন, চালুর পর থেকে বেশ কয়েকবার ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন খারাপ হয়েছে। অলিগঞ্জ গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বললেন, “অক্টোবরে বরাত দিয়েছি। কিন্তু এখনও স্কুলে ন্যাপকিন আসেনি।’’ মৌপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়ারও বক্তব্য, “নিয়মিত ন্যাপকিন সরবরাহ করা হয় না। তাই সমস্যা হয়। সেপ্টেম্বরে বরাত দিয়েও ন্যাপকিন আসেনি। কবে আসবে তাও জানি না।’’

ভাদুতলা হাইস্কুলে আবার দু’টি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছিল। এখন দু’টিই খারাপ। ফলে, ছাত্রীরা প্রায়ই দুর্ভোগে পড়ে। অসন্তোষ গোপন করছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। ভাদুতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরীর কথায়, “একটি মেশিন সেই শুরু থেকেই ভোগাচ্ছে। মাঝে একবার সারানো হয়েছিল। পরে ফের খারাপ হয়ে গিয়েছে। অন্যটিও খারাপ হয়ে গিয়েছে।’’ ছাত্রীদের সমস্যার কথা মানছে স্কুলও। দিন কয়েক আগেই নবম শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুলে এসে ফের বাড়ি যেতে চেয়েছিল। অমিতেশবাবুর কথায়, “ছাত্রীটি কেন বাড়ি যেতে চেয়েছিল বুঝতে পেরেছিলাম। তাই আর না- করিনি। ওর বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম।”

স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী গীতা পাত্র, পম্পা মাইতিরা বলছিল, “আপত্কালীন অবস্থার জন্যই তো স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছিল। সেই ব্যবস্থাই এখন অচল। মেশিন অচল থাকায় অনেকে সমস্যায় পড়ে।’’ অমিতেশবাবু বলছিলেন, “আগে ৫ টাকায় ২টি ন্যাপকিন দেওয়া হত। এখন আবার শুনছি, ১০ টাকায় ৩টি ন্যাপকিন দেওয়া হবে। মেশিন সারানোর জন্যও টাকা নেওয়া হবে বলেও সরবরাহকারী সংস্থা জানিয়েছে। স্কুলের পরিচালন সমিতির বৈঠকে আলোচনা করেই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবো।”

ঋতুস্রাবের সময় সুস্বাস্থ্যের জন্যই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার জরুরি। অথচ মাসের ওই দিনগুলিতে এখনও অনেকে কাপড় ব্যবহার করেন। তা থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরাও মানছেন, “ঋতুস্রাবের সময় ন্যাপকিনের বদলে পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করলে, পরে সেটাই আবার ধুয়ে ব্যবহার করলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাই স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপকারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন শিবিরে আমরা মহিলাদের সচেতন করি।’’

তা সত্ত্বেও স্কুলে স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের এই দশা কেন? ন্যাপকিন সরবরাহকারী সংস্থার কর্ণধার সুতনু ঘোষের জবাব, “স্কুলগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণ ন্যাপকিনের অর্ডার দিলে সময় মতোই তা সরবরাহ করা হয়। কিন্তু, বেশিরভাগ স্কুল পর্যাপ্ত সংখ্যক ন্যাপকিনের অর্ডার দেয় না। তাই সমস্যা হয়।’’ তিনি আরও জানান, আগে ৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল। এখন ১২.৫ শতাংশ জিএসটি বসেছে। তাই কম বরাত এলে লোকসানে পড়তে হয়। সংস্থার এক কর্তার কথায়, “এই পরিস্থিতিতে ৫ টাকায় ২টি ন্যাপকিন দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তাই ১০ টাকায় ৩টি ন্যাপকিনের প্যাকেজ চালু করা হচ্ছে।”

vending machine sanitary napkin মেদিনীপুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy