Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Illegal Business

শুল্ক ফাঁকি দিতে ‘হাওয়ালা’তেই লেনদেন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ীর দাবি, এ রাজ্যের বনগাঁ সীমান্ত হয়ে প্রথমে বাংলাদেশ এবং তারপর মায়ানমার পৌঁছে যায় পরচুলা বা তার কাঁচামাল।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

কেশব মান্না
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৪০
Share: Save:

প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকা থেকে পরচুলা রফতানিতে ‘হাওয়ালা’ যোগ! পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর এবং চণ্ডীপুরের একাংশ চুল ব্যবসায়ী প্রতিবেশী বাংলাদেশ বা মায়ানমারে কাঁচামাল রফতানিতে এই পদ্ধতির উপরে ভরসা করছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিদেশি ছাত্রকে অপহরণ-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলার ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে বীরভূম জেলা পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে সাহিল মহম্মদ জেলা তৃণমূলের সংখ্যালঘু সংগঠনের ব্লক সভাপতি। অভিযোগ, তার কাছ থেকে এক টন চুল কিনেছিলেন ওই পড়ুয়া। মায়ানমারের বাসিন্দা ওই যুবকের সঙ্গে কীভাবে ভগবানপুরের তৃণমূল নেতার ব্যবসায়িক লেনদেন ঘটল, তা নিয়ে খোঁজখবর করতেই চক্ষুচড়ক গাছ পুলিশের। পুলিশ সূত্রের খবর, বেশ কয়েকজন চুল কারবারি ব্যাঙ্কিং পদ্ধতি এড়িয়ে কোটি কোটি টাকা নগদে লেনদেন করছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

জেলা পুলিশের এক শীর্ষ স্তরের আধিকারিক বলছেন, ‘‘শুল্ক দফতরের নজর এড়িয়ে বিদেশের বাজারে পরচুলা রফতানি করছেন। যার মধ্যে অধিকাংশই বেআইনি ভাবে বাংলাদেশ এবং মায়ানমারে রফতানি করা হচ্ছে।’’

কীভাবে ওই কোটি কোটি টাকা নগদ লেনদেন চলে?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ীর দাবি, এ রাজ্যের বনগাঁ সীমান্ত হয়ে প্রথমে বাংলাদেশ এবং তারপর মায়ানমার পৌঁছে যায় পরচুলা বা তার কাঁচামাল। আবার কখনও কখনও অসম এবং নাগাল্যান্ড হয়ে বাংলাদেশ এবং মায়ানমারে পরচুলা পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। জেলার চুল কারবারীদের একাংশ জানাচ্ছে, সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করার পর পর পরচুলাকে ‘আর এম’ পদ্ধতিতেই পাচার করে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ বা মায়ানমারে। এরপর সেখানকার ব্যবসায়ীরা এদেশের ‘হাওলাদার’দের মাধ্যমে বকেয়া টাকা নগদ হিসেবে পাঠাচ্ছেন। হাওলাদারদের অধিকাংশই পার্ক স্ট্রিট-সহ কলকাতার বিভিন্ন এলাকাতেই রয়েছেন বলে দাবি একাংশ পরচুলা ব্যবসায়ীর। মূলত নামকরা সংস্থার মাধ্যমে এইসব ‘হাওলা’ লেনদেন চলে।

পুলিশ সূত্রের খবর, এই ভাবে পরচুলা রফতানিতে শুল্ক দফতরের ছাড়পত্র নেওয়া হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, কোটি কোটি টাকা নগদে লেনদেন করা হচ্ছে। সরকারি নজর এড়িয়ে যাওয়ার কারণে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হচ্ছে বলে প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের অভিযোগ। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনা এবং পেট্রোলিয়াম জাতীয় দ্রব্যের মতোই পরচুলারও বাজারদর ওঠা নামা করে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় মুদ্রার দর কমে গেলে ‘হাওলাদার’রা তার সুযোগ নেন বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে।

অনেকেই দাবি করছেন, সম্পূর্ণ নগদ লেনদেনের কারণে বিপুল পরিমাণ টাকা অনাদায়ের আশঙ্কা সব সময় থেকে যায়। চুক্তি ভঙ্গকারী বিদেশি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনও আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। আর তখনই টাকা আদায়ে ব্যবসায়ীরা নিজেদের মত পন্থা অবলম্বন করেন বলে দাবি। উল্লেখ্য, বিশ্বভারতীর ওই বিদেশি পড়ুয়ার পরচুলার জন্য ৬০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তবে ৫০ লক্ষেরও বেশি টাকা বকেয়া ছিল তাঁর। অভিযোগ, সেই টাকা উদ্ধারেই তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল। এ বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘পুরো ঘটনাই বীরভূম জেলা পুলিশ তদন্ত করছে। সমস্ত রকমের যোগসূত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Contai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE