২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা, জমা জল, বেহাল নিকাশি, আবর্জনার স্তূপ— সব মিলিয়ে মশার বংশবৃদ্ধির একেবারে উপযুক্ত পরিবেশ।
খড়্গপুর শহরের আনাচ-কানাচে বছরভরই এমন ছবি দেখা যায়। ফলস্বরূপ বছরভরই মশার উৎপাতে জেরবার শহরবাসী। সেই সঙ্গে রয়েছে ডেঙ্গির প্রকোপ। গত বছর শীতেও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৩জন। সেই সময় স্বাস্থ্য দফতরের কড়াকড়িতে তৎপর হয়েছিল পুরসভা। মশা নিধনে চলেছিল পাড়ায় পাড়ায় ব্লিচিং, মশা মারার তেল ও ধোঁয়া স্প্রে করার কাজ। তবে সেই কাজ নেহাতই দায়সারা ভাবে করা হচ্ছে বলে তখন অভিযোগ উঠেছিল। এখনও পুরসভার দাবি, ৩৫টি ওয়ার্ডে তেল স্প্রে করছে। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের কথায়, “আমরা ডেঙ্গি রোধে ইতিমধ্যেই ১০জন শ্রমিক নামিয়েছি। ২জন করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে মশা মারার তেল স্প্রে করছে। ১৫দিন আগে থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে।”
সাধারণত মে-জুন মাসে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দেয়। ফলে, এ ক্ষেত্রে আগাম সতর্কতা জরুরি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মশা বাহিত রোগের নোডাল অফিসার তথা জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধানও মানছেন, “মে মাস থেকেই সাধারণ ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দেয়। তাই এখনই সকলকে সচেতন হতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুরসভার ভূমিকা যথেষ্ট।’’ ১ মে থেকে খড়্গপুরে বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্য দফতর অভিযান চালাবে, সচেতনতা শিবির করবে ও ‘সুদা’ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে বলেও জানান তিনি।
রেলশহরের যে দিকে তাকানো যাবে সেখানেই ভাঙা-কাঁচা-সরু নর্দমা। পুর ও রেল এলাকায় বেহাল নিকাশি। গত জুনে খড়্গপুর পুরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে ‘স্টেট আর্বান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’ বা ‘সুদা’র কর্মীদের দিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতর শহরে ডেঙ্গির সমীক্ষা করেছিল। সেই সময় বেহাল নিকাশি ও জমা জলে ডেঙ্গির মশার লার্ভা দেখলেই পুরসভা ও রেলকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তারপরেও মশা নিধনে জোরদার পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলেই বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দাবি। এখনও সেই পরিস্থিতি চলছে বলেই জানিয়েছেন শহরবাসী। ২৮নম্বর ওয়ার্ডের ছোট ট্যাংরারর ললিত নাথ বলেন, “পুরসভা এক দিন একটু তেল দিয়ে গিয়েছিল। ব্যস আর কিছু হয়নি।” কাউন্সিলরাও সন্তুষ্ট নন। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর স্মৃতিকণা দেবনাথ বলেন, “পুরসভা থেকে দু’দিন দু’জন লোক সামান্য তেল নিয়ে এসেছিল। তাতে তো ওয়ার্ডের সর্বত্র তেল দেওয়া সম্ভব নয়।” পুরসভা সূত্রে খবর, মশা নিধনে সম্বল বলতে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি-দু’টি স্প্রে মেশিন ও পুরসভার দু’টি ধোঁয়া দেওয়ার কামান। তাও পুরপ্রধান বলেন, “মাস্টার প্ল্যান ছাড়া নিকাশির হাল ফেরানো অসম্ভব। তাও যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।”