Advertisement
E-Paper

প্রচার নেই গ্রামে, অসচেতনতাই ভয়

পশ্চিম মেদিনীপুরে ক্রমশ বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু ডেঙ্গি নয়, জ্বরও বাড়ছে। যার মধ্যে বেশিরভাগটাই মশকবাহিত। প্রশাসনের তরফে ডেঙ্গি রোধে সচেতনতা প্রচার শুরু হয়েছে। কিন্তু বাস্তব ছবিটা ঠিক তার বিপরীত।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০২:১৩
পণ্যবীথির গলির রাস্তায় বেহাল নিকাশি ও ঝোপঝাড়

পণ্যবীথির গলির রাস্তায় বেহাল নিকাশি ও ঝোপঝাড়

পশ্চিম মেদিনীপুরে ক্রমশ বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু ডেঙ্গি নয়, জ্বরও বাড়ছে। যার মধ্যে বেশিরভাগটাই মশকবাহিত। প্রশাসনের তরফে ডেঙ্গি রোধে সচেতনতা প্রচার শুরু হয়েছে। কিন্তু বাস্তব ছবিটা ঠিক তার বিপরীত। অভিযোগ, যা কিছু প্রচার সবটাই হচ্ছে শহরে। প্রত্যন্ত অংশে সচেতনতার ছিঁটেফোঁটাও নেই।

রবিবার ঘাটাল মহকুমার একাধিক গ্রামে ঘুরেও সেই ছবিটাই স্পষ্ট হয়ে গেল। দাসপুরের ঘনশ্যামবাটি, উদয়চক, গোপীগঞ্জ, ঘাটালের রানির বাজার, আজবনগর, মারিচ্যা, চন্দ্রকোনার তাতারপুর, মাঙরুল, কৃষ্ণপুর, ইঁদা, পুরশুড়ি— সর্বত্র প্রায় একই অবস্থা। গ্রামের অলি-গলিতে আবর্জনার স্তূপ। জমে রয়েছে নোংরা জল। আর সেখানেই খালি গায়ে খেলে বেড়াচ্ছে একদল শিশু। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলা বোঝা গেল, এখনও ওই সব গ্রামগুলিতে স্বাস্থ্য দফতর কোনও প্রচার করেনি। পঞ্চায়েতের তরফেও সামান্য মাইকিং বা মশানাশক তেল স্প্রে-ও করা হয়নি।

অথচ প্রচার যে প্রয়োজন, তা বলে দিয়েছে গ্রামের চেহারাই। সচেতনতার অভাবেই ওই গ্রামগুলিতে মশারি ব্যবহার করেন না কোনও পরিবার। ডেঙ্গি আক্রান্ত গ্রামে খালি গায়েই ঘোরাফেরা করছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই। সরকারি হাসপাতাল দূরে। চাই জ্বরে ভুগলেও তাঁদের ভরসা সেই হাতুড়ে চিকিৎসক। গ্রামীণ চিকিৎসকেরা সরকারি হাসপাতালে যেতে বললে তবেই তাঁরা হাসপাতালে যাচ্ছেন। গ্রামীণ চিকিৎসকরা বললেন, “টিভি আর খবরের কাগজেই প্রচার চলছে। গ্রামগুলিতে তার কোনও প্রভাবই পড়ছে না। পঞ্চায়েতও উদ্যোগী নয়।”

মহকুমার বিভিন্ন সরকারি দফতরের সামনেও প়়ড়ে রয়েছে নোংরা-আবর্জনা। খোদ সোনাখালি গ্রামীণ হাসপাতালে চত্বরেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ইনডোর বিভাগ সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায় নদর্মায় জমে রয়েছে আবর্জনা। জল-জঞ্জালে মশার বংশ বৃদ্ধিও হচ্ছে নিশ্চিন্তে। ঘাটালের বরদা চৌকানে বিডিও অফিস সংলগ্ন এলাকায় পচা জল জমে রয়েছে।

অথচ, ডেঙ্গি সংক্রমণের ঘটনায় উদ্বেগে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসনও। বাতিল হয়েছে স্বাস্থ্য কর্মীদের ছুটি। ম্যাজিক শো থেকে শুরু করে নানা মাধ্যমে শুরু হয়েছে সচেতনতা মূলক প্রচার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ যে এখনও প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জে পৌঁছায়নি, তা দিব্যি বোঝা যায়। অথচ, গড়বেতা-৩ ব্লকের সাতবাঁকুড়া পঞ্চায়েতের নবকলা গ্রামেই প্রথম প্রকোপ ছড়িয়েছিল ডেঙ্গি। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার স্বীকারোক্তি, “সরকারি উদ্যোগের অভাবেই গ্রামগুলিতে প্রচার সে রকম হচ্ছে না। নজরদারি অভাবও রয়েছে।”

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মশার বাড়বাড়ন্ত কমাতে পারলেই ডেঙ্গির হানা এবং মশাবাহিত অন্যান্য রোগ রোখা সম্ভব। এ জন্য সচেতনতার পাশাপাশি জরুরি প্রশাসনের উদ্যোগ। মশা-নাশক তেল স্প্রে করা এবং বাড়ির আশপাশ পরিষ্কারও রাখা, জমা জল দেখলেই সরিয়ে ফেলা, নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার, মশারি ব্যবহার— এ সব করতে গেলে একযোগে কাজ করতে হয় সাধারণ মানুষ এবং প্রশাসনকে। কিন্তু জেলার বিভিন্ন গ্রামগুলিতে একটু ঘুরলেই চোখে পড়বে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও নিদানই মানা হচ্ছে না।

জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “আমরা প্রতি পঞ্চায়েতেই সচেতনতা বাড়ানো এবং এলাকা পরিষ্কার রাখার নির্দেশ দিয়েছি। তা সত্ত্বেও এখনও কেন প্রচার শুরু হয়নি খোঁজ নিচ্ছি। সোমবার থেকে প্রতি পঞ্চায়েতেই চলবে নজরদারি।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “গ্রাম গুলিতেই প্রচার জরুরি। স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রচার চলছে। আশাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, বিএমওএইচদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।”

Dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy