Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Poor Ferry Service

জেটি নেই, কাদা মাড়িয়েই নিত্য যাতায়াত

শুনিয়া থেকে খেজুরির কন্ঠীবাড়ি পর্যন্ত ফেরি চলাচল করে। নন্দীগ্রাম, বোগা, পেটুয়া, গেঁওখালি- সর্বত্র ফেরি চলাচলের জন্য আধুনিক মানের পল্টুন জেটি বানিয়েছে জেলা পরিষদ।

বরোজ খেয়া ঘাটে নেই জেটি। কাদা মাড়িয়েই চলাচল।

বরোজ খেয়া ঘাটে নেই জেটি। কাদা মাড়িয়েই চলাচল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৪৮
Share: Save:

জমি আন্দোলন পর্বে রক্তক্ষয়ী ঘটনার সাক্ষী! এখান থেকেই সিপিএমের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা রসুলপুর নদী পেরিয়ে খেজুরি থেকে নন্দীগ্রামের উপর আক্রমণ চালাত বলে অভিযোগ তুলত তৃণমূল। সেই রসুলপুর নদী দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। বামেদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে এখন রাজ্যের মসনদে তৃণমূল। এক সময়কার অশান্ত দেশপ্রাণ ব্লকের শুনিয়াতে শান্তি ফিরেছে। কিন্তু সেখানের যাতায়াত পরিষেবার উন্নয়ন এখনও অধরা বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।

শুনিয়া থেকে খেজুরির কন্ঠীবাড়ি পর্যন্ত ফেরি চলাচল করে। নন্দীগ্রাম, বোগা, পেটুয়া, গেঁওখালি- সর্বত্র ফেরি চলাচলের জন্য আধুনিক মানের পল্টুন জেটি বানিয়েছে জেলা পরিষদ। তবে শুনিয়াতে জেটি মান্ধাতা আমলের পুরনো। সারা বছর কাদা মাড়িয়ে নৌকোয় চাপতে হয় যাত্রীদের। স্থানীয় সূত্রের খবর, দেশপ্রাণ ব্লকের আমতলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত ওই রুটে ফেরি চলাচলের দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে। তারা স্থানীয় এক চালককে এই রুটে নৌকা চালানোর দায়িত্ব দিয়েছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে মায়াচরে মর্মান্তিক নৌকোডুবির পর ফেরি পরিষেবা এখানে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীকাল পুনরায় শুনিয়া ঘাট থেকে নৌকা চলাচল শুরু হয়েছে। তবে পল্টুন জেটি তো দূরে থাক, কংক্রিট দিয়ে বাঁধানো জেটি গড়ে ওঠেনি এখনও পর্যন্ত।

খেজুরির এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘সব সময় কাদা মাড়িয়ে যেতে আসতে হয়। নইলে ঘুরপথে হেঁড়িয়া বা বোগা হয়ে যেতে হয়। তাতে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হয়।’’ স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, খেজুরি থেকে প্রতিদিন কয়েকশো মানুষ শুনিয়া হয়ে কাঁথিতে যান। তারাও নিত্যদিন দুর্ভোগের সম্মুখীন হন। স্থানীয়দের ওই সমস্যার কথা যে একেবারেই অজানা নয়, তা স্বীকার করে নিয়েছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, যাত্রীদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে শুনিয়াতে যাত্রীদের একটি বিশ্রামাগার, শৌচাগার বানানো হয়েছে। সেখানে আধুনিক মানের জেটি বানানোর জন্য জেলা পরিষদের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে, একই রকম ভাবে কাদা পথ মাড়িয়ে নৌকোতে ওঠানামা করতে হয় ভগবানপুর-২ ব্লকের বরজ এলাকার বাসিন্দাদেরও। সেখানে নিয়মিত নৌকোতে চেপে বহু মানুষ হেঁড়িয়া-সহ খেজুরি -১ ব্লকের টিকাশি, লাখী এলাকায় যান। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, জোয়ার চলাকালীন নদীতে জলস্তর বেশি থাকলে অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় ভটভটি দাঁড়ায়। তখন ওঠানামা কিছুটা সহজ হয়। কিন্তু ভাটার সময় চরম দুর্ভোগকে পড়তে হয়। নৌকা থেকে নেমে কাদা পথ মাড়িয়েই যেতে হয়। সমস্যার কথা মানছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা বরজ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান মিহির ভৌমিক। তিনি বলছেন, ‘‘পাউশি সেতু পেরিয়ে কালিনগর হয়ে হেঁড়িয়া পৌঁছতে ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে হয়। আর নৌকো পেরিয়ে মাত্র ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করলেই হেঁড়িয়া। সাধারণ মানুষের যাতে অসুবিধে না হয়, সে জন্য স্থায়ী জেটি নির্মাণ আবশ্যক।’’

ওই এলাকাতেও স্থানীয় এক বাসিন্দাকে চুক্তিভিত্তিক নৌকো চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভগবানপুর-২ এর বিডিও জয়দেব মণ্ডল বলেন, ‘‘আধুনিক মানের জেটি তৈরি করার জন্য দীর্ঘদিনের প্রস্তাব রয়েছে।’’ আর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি উত্তম বারিক বলছেন, ‘‘শুনিয়া থেকে খেজুরি এবং বরজ থেকে হেঁড়িয়া পর্যন্ত ফেরি পরিষেবা স্বাভাবিকভাবে চালানোর জন্য আধুনিক জেটি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন জেলা পরিষদের বোর্ড গঠন হওয়ার পর ওই কাজ শুরু করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Contai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE