মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গামন্দির। নিজস্ব চিত্র
এ রাজবাড়ির ইতিহাস যেন রূপকথার রংমহল। পরতে পরতে ঘটনার ঘনঘটা। সিংহদুয়ার প্যালেস, ফুলবাগ প্যালেস, সামার প্যালেস থেকে সাহেব দিঘি, আম্রকানন, মিউজিয়াম—সবই রাজবাড়ির অতীত গরিমার সাক্ষ্য বয়ে নিয়ে চলেছে।
মহিষাদল রাজবাড়ির সাথে স্থানীয় মানুষের সম্পর্কের সেতু দুটি। এক, ঐতিহাসিক রথযাত্রা। অন্যটি রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। মহিষাদল তো বটেই, বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দর্শনার্থীদের জন্যও এই পুজোর অবারিত দ্বার। রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে এখন প্রতিমা গড়ছেন শিল্পী। উল্টোরথে কাঠামোয় পড়ে খড়ের প্রলেপ। রাজবাড়ির ভেঙে পড়া সিংহদুয়ার প্যালেসের কাছে স্থায়ী নাটমন্দির। আগে এখানেই পুজোর সময় রাজ পরিবারের সদস্যরা থিয়েটার, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতানুষ্ঠানে দর্শক হিসেবে থাকতেন। রাজপরিবারের মহিলারাও উপভোগ করতেন অনুষ্ঠান। পুজোর এই সময় অন্দরমহলের সঙ্গে বারমহলের দূরত্ব কমে যেত।
রাজপরিবারের প্রতিমা শিল্পী গোপালচন্দ্র ভুঁইয়া। তাঁর পূর্বসূরীরাও রাজবাড়ির প্রতিমা তৈরির সৌভাগ্য বহন করেছেন ৫০ বছর হয়ে গেল। গোপালচন্দ্র প্রতিমা তৈরির উত্তরাধিকার পেয়েছেন বাবা বিখ্যাত প্রতিমাশিল্পী রামচন্দ্রের কাছ থেকে। বাবা মারা যাওয়ার পর এখন তার কাঁধেই বর্তেছে রাজবাড়ির প্রতিমা তৈরির দায়িত্ব। গোপাল বলেন, ‘‘সেই কবে ছেলেবেলা থেকে বাবার কাছে কাজ শিখেছি। এখানের প্রতিমা এক চালার। বৈশিষ্ট্য ডাকের সাজ, দেবীর পটলচেরা চোখ, অসুরের সবুজ গাত্রবর্ণ ও মহিষের কাটা মাথা। দেবীর পায়ের কাছে দুটি তরবারি রাখা হয়। শোনা যায় সেই তরবারি নাকি বৈরাম খাঁ’র কাছ থেকে পেয়েছিলেন রাজপরিবারের সদস্যরা।
প্রায় আড়াইশো বছর আগে রানি জানকীর আমলে রাজবাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়। প্রতিপদে পুজোর শুরু। দশদিনের পুজোয় ষষ্ঠীতে ৬ মণ, সপ্তমীতে ৭ মণ, অষ্টমীতে ৮ মণ, নবমীতে ৯ মণ চালের প্রসাদ ছিল রীতি। এক সময় মহাষ্টমীতে কামান দাগা হত। কামানের গর্জন শুনে আশপাশের লোকজন বুঝতে পারতেন রাজবাড়ির সন্ধিপুজো শুরু হল। কালের প্রবাহে কামান দাগা এখন বন্ধ। দশমীর দিনেই প্রতিমার বিসর্জন হয় রাজবাড়ির চত্বরে।
কর্মসূত্রে নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা রাজবাড়ির সদস্যরা পুজো উপলক্ষে হাজির হন দেশের বাড়িতে। পুজোর কয়েকটা দিন চলে ধুমধাম। যাত্রা থেকে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভোগ বিতরণ, নিরঞ্জনের শোভাযাত্রা সব কিছুতেই থাকে রাজকীয় ছোঁয়া। তবে আগের তুলনায় জৌলুস কিছুটা ফিকে হয়েছে। তবে রাজবাড়ির পুজোর ঐতিহ্যের টানে ভিড় করেন অনেকে।
তাঁদের কথা ভেবে এখন রাজবাড়িতে রয়েছে থাকার ব্যবস্থা। যার নাম ‘স্টে উইথ রয়ালস’। পুজো দেখার পাশাপাশি বাহারি আলো, মিউজিয়মে রাজাদের শিকারের নিদর্শন থেকে নানা বাদ্যযন্ত্র, ব্যবহার্য জিনিসপত্র দেখার বাড়তি সুযোগ পর্যটকদের কাছে উপরি পাওনা বই কী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy