Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাইবার অপরাধে রাশ টানতে সচেতনতাই অস্ত্র

পাঁশকুড়ার ওই ঘটনায় অভিযুক্তের শাস্তির জন্য যে ভাবে ওই তরুণী লড়াই চালিয়েছেন তাকে স্বাগত জানিয়ে পুলিশের দাবি, অনেকেই এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে দুর্নামের ভয়ে সামনে আসতে চান না।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০২:০৩
Share: Save:

কলেজ পড়ুয়া তরুণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর প্রস্তাবমত বেড়াতে যেতে রাজি না হওয়ায় বান্ধবীর নগ্ন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার দায়ে এক যুবকের ৫ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে তমলুক আদালত। সাইবার অপরাধে রাজ্যে প্রথম এমন শাস্তি ঘোষণা সাইবার অপরাধ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী থেকে পুলিশ সকলেই।

পাঁশকুড়ার ওই ঘটনায় অভিযুক্তের শাস্তির জন্য যে ভাবে ওই তরুণী লড়াই চালিয়েছেন তাকে স্বাগত জানিয়ে পুলিশের দাবি, অনেকেই এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে দুর্নামের ভয়ে সামনে আসতে চান না। তবে এই নিয়ে সচেতনতা না বাড়লে এ ধরনের অপরাধের প্রবণতা কমবে। পাঁশকুড়ার ওই মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিল রাজ্য সিআইডি’র সাইবার অপরাধ শাখা। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে পাঁশকুড়ার বাসিন্দা ওই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছিল সিআইডি। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর সিআইডি প্রচুর তথ্য-প্রমাণ জোগাড়ের পাশাপাশি আক্রান্ত তরুণীর নিরাপত্তার ব্যবস্থাও নেয়। অভিযুক্তের শাস্তির পর স্বভাবতই তরুণী ও তাঁর পরিজনেরা খুশি। তদন্তের দ্বায়িত্বে থাকা সিআইডির এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘এধরনের অপরাধ রুখতে স্কুল-কলেজের পড়ুয়া, তাঁদের পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও সচেতন হতে হবে। তাঁর মতে, ভালবাসার সম্পর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি বাবা-মাকেও সেই ভূমিকা নিতে হবে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের প্রয়োজন সম্পর্কে ছেলেমেয়েদের বোঝাতে হবে।

স্কুলস্তরে ছাত্রছাত্রীদের হাতে মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিয়়ন্ত্রণে স্কুলগুলির আরও কড়া পদক্ষেপের পক্ষে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, অনেকে বাবা-মা-ই ছেলেমেয়ের আবদার মেটাতে মোবাইল বিশেষ করে স্মার্ট ফোন তাদের হাতে তুলে দেন। কিন্তু তার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতার অভাবেই এই ধরনের অপরাধ বাড়ছে। এ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর উপরেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যাতে সময়মতো আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

সাইবার অপরাধ নিয়ে কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুজিতকুমার বেরা। তিনি বলেন, ‘‘সাইবার অপরাধ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করতে দু’বছর ধরে আমাদের কলেজে মাঝেমধ্যেই সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিক এবং এবিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সেমিনারে আলোচনার মাধ্যমে পড়ুয়াদের বোঝান। মোবাইল ফোনের ব্যবহারে সতর্কতার জন্য এ ধরনের সেমিনারের প্রয়োজন রয়েছে।’’ তাঁর মতে, বিভিন্ন স্কুল-কলেজে এ নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হওয়া উচিত।

কয়েক মাস আগে সাইবার অপরাধ নিয়ে সচেতনতা শিবির হয়েছিল পাঁশকুড়ার ঘোষপুর হাইস্কুলে। স্কুলের প্রধানশিক্ষক সুপ্রতীম মান্না বলেন, ‘‘স্কুলের একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকদের নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন হয়েছিল। এর ফলে পড়ুয়াদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে অনেকটাই রাশ টানা গিয়েছে।’’ তিনিও সব স্কুলে এ ধরনের আলোচনার পক্ষপাতী।

সাইবার অপরাধের সচেতনতা নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমার বলেন, ‘‘সাইবার সেফটি সেলের মাধ্যমে স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আরও বেশি স্কুল-কলেজে যাতে এ ধরনের শিবির করা যায় তার ব্যবস্থা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cybercrime Alert
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE