Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Black marketing of Fertilizers

কালো রুখতে পঞ্চায়েতে লড়ছে সব রং

তৃণমূল কেন্দ্রের দিকে অভিযোগের তির ঘোরাতে চাইলেও তাদের দলেরই এক নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু প্রচারে এসে বোমা ফাটিয়েছিলেন।

সারের কালোবাজারি বন্ধের দাবিতে জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ। মেদিনীপুরে। নিজস্ব চিত্র

সারের কালোবাজারি বন্ধের দাবিতে জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ। মেদিনীপুরে। নিজস্ব চিত্র

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:১৭
Share: Save:

দিকে দিকে প্রতিবাদ। মিছিল, পথসভা। বাম হোক বা অ-বাম। সব রাজনৈতিক দলগুলির দাবি একটাই—বন্ধ করতে হবে সারের কালোবাজারি। দিতে হবে শাস্তি।

‘‘রকমসকম দেখে তো মনে হচ্ছে সারের কালোবাজারি এ বার প্রথম হচ্ছে।’’, বলছিলেন চন্দ্রকোনা রোডের আলুবীজ বাজারের এক ব্যবসায়ী। কথাটা লুফে নিলেন সেই বাজারে আসা গোয়ালতোড়ের প্রান্তিক কৃষক ভানুরতন চৈরা। তাঁর উপলদ্ধি, ‘‘ভোট আসছে না, তাই সারের কালোবাজারি বা আলু-আনাজের দাম নিয়ে হইচই।’’ তৃণমূলপন্থী ব্যবসায়ী সংগঠনের এক নেতা স্পষ্ট বললেন, ‘‘এ বার সামনে পঞ্চায়েত ভোট। সার, আলু, আনাজ এগুলো নিয়েই তো প্রচার হবে।’’ শাসক ঘনিষ্ঠ ওই ব্যবসায়ী নেতার কথার প্রতিফলন পাওয়া গেল তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কিসান খেতমজুর সেলের সভাপতি শ্যামসুন্দর শতপতির কথায়। তিনি বললেন, ‘‘কৃষকদের সর্বস্বান্ত করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত নীতি। সারের কালোবাজারির মুনাফা লুটছে বড় কোম্পানি।’’

তৃণমূল কেন্দ্রের দিকে অভিযোগের তির ঘোরাতে চাইলেও তাদের দলেরই এক নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু প্রচারে এসে বোমা ফাটিয়েছিলেন। দাসপুরে দলের কিসান খেতমজুর সেলের প্রকাশ্য সভায় তিনি কার্যত স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে, সারের কালোবাজারির পিছনে তাঁর দলের একাংশ জড়িত আছেন। পূর্ণেন্দুর মন্তব্যকে হাতিয়ার করে পাল্টা প্রচারে নেমেছে গেরুয়া শিবির। ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট সাফ বলছেন, ‘‘তৃণমূল নেতারাই যখন বলে দিচ্ছেন সারের কালোবাজারির পিছনে তাঁদের জড়িত থাকার কথা, সেখানে এই কালোবাজারি বন্ধ করতে তাঁদের প্রশাসন মাঠে নামবে কেন?’’ রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে প্রচারে নেমেছে বিজেপি। বিজেপির কিসান মোর্চার রাজ্য সম্পাদক চিন্ময় পাত্র বলছেন, ‘‘রাজ্য প্রশাসনের মদতেই হচ্ছে সারের কালোবাজারি, ওঁদের নেতাই বলছেন। চাষিদের দুর্বিষহ অবস্থা হচ্ছে তৃণমূল সরকারের দিশাহীন ব্যবস্থার জন্য। কৃষক কল্যাণে কেন্দ্রীয় সরকার নানাবিধ ব্যবস্থা নিলেও, এ রাজ্যে তা প্রয়োগ হয় না ।’’

বামেরা সারের কালোবাজারি নিয়ে পথে নেমেছে অনেক আগে থেকেই। চলছে টানা প্রচার। সিপিএমের কৃষক সংগঠন কৃষকসভার পক্ষ থেকে নভেম্বর মাস জুড়ে ‘গ্রাম জাগাও’ কর্মসূচিতে গ্রামে গ্রামে মিছিল করা হয়। সেই মিছিলে আওয়াজ ওঠে সারের কালোবাজারি নিয়ে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূলের তোলাবাজির টাকা তুলতে ব্যবসায়ীরা উসুল করছে চাষিদের ঘাড় থেকে। সরকার- শাসকদল চাষিদের কার্যত বিপদে ফেলছে। তৃণমূল লুঠ করছে। সরকার মহানন্দে আছে।’’ ঝাড়গ্রাম জেলার সিপিএমের কৃষক সভার জেলা সম্পাদক দিবাকর হাঁসদা বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকার সারের কৃত্রিম অভাব তৈরি করছে, এমনকি সারের দামও বাড়াচ্ছে। এটা চালাকি করছে রাজ্য সরকার।’’ যুব কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও দুই জেলার একাধিক ব্লকে সারের কালোবাজারি বন্ধে স্মারকলিপি দেওয়া শুরু হয়েছে।

গ্রামের ভোট। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলির কৃষক সংগঠনগুলির মধ্যে চাপানউতোর চলছে বেশি। বিজেপির কিসান মোর্চার ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি তুষার মাহাতো বলেন, ‘‘ রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকলে চাষিদের বাড়তি দাম দিয়ে সার কিনতে হত না।’’ বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিশ্রের যুক্তি, ‘‘নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সার কেনায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করেছিলেন, এমনকি সার কিনতে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড লাগত। সেই ব্যবস্থা এই রাজ্যে এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কার অঙ্গুলিহেলনে বোঝাই যায়।’’ যুক্তি মানতে নারাজ কিসান খেতমজুর তৃণমূল কংগ্রেসের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি রঞ্জিত মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য এসব কথা বলছে। সারের দাম নিয়ন্ত্রণ করে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার। রাম ও বাম দু’টোই এক। সেজন্য একসুরে কথা বলছে।’’ (শেষ)

(তথ্য সহায়তা:অভিজিৎ চক্রবর্তী, রঞ্জন পাল)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fertilizer midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE