Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Central Government

Jhargram: হাতি ভেঙেছে বোর্ড, বর্ষা নাকি ধুয়েছে বাঁধ!

মানিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটি মঙ্গলবার রাতেই ঝাড়গ্রাম সার্কিট হাউসে পৌঁছে গিয়েছিল।

একশো দিনের প্রকল্পে কোথায় নদীর বাঁধ? সাঁকরাইলের লাউদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের নৈহাট- কুলবনি প্রকল্প দেখতে

একশো দিনের প্রকল্পে কোথায় নদীর বাঁধ? সাঁকরাইলের লাউদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের নৈহাট- কুলবনি প্রকল্প দেখতে সুবর্ণরেখার পাড়ে কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২২ ০৮:৫৯
Share: Save:

ধেয়ে এল একের পর এক প্রশ্নবাণ। সে বাণের সামনে কখনও হাতি, আবার কখনও বর্ষাকে ঢাল করলেন পঞ্চায়েত প্রধান ও ব্লক প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

একশো দিনের প্রকল্পে সুবর্ণরেখা নদীর পাড়ে দেওয়া হয়েছিল ষোলোশো মিটার দীর্ঘ মাটির বাঁধ! উদ্দেশ্য নদীর ভাঙন ঠেকানো এবং একশো দিনের প্রকল্পে এলাকাবাসীকে কাজ দেওয়া। ২০১৯-’২০ বর্ষের ওই প্রকল্পে খরচ হয়েছিল ৯ লক্ষ টাকা। বুধবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের লাউদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের কুলবনি থেকে নৈহাট পর্যন্ত সুবর্ণরেখার পাড়ে রূপায়িত ওই প্রকল্পে দেখতে গিয়েছিল তিন সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। নদীর আপ ও ডাউন স্টিমে প্রকল্পের দু’টি বোর্ড কোথায় দেওয়া হয়েছে সেটা দেখতে চান কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের অধিকর্তা মানিকচন্দ পণ্ডিত। সাঁকরাইলের বিডিও রথীন বিশ্বাস তাঁকে জানান, ওই এলাকাটি হাতির করিডর। হাতিরা বোর্ড ভেঙে দিয়েছে। দু’টি বোর্ডের একটিরও অস্তিত্ব নেই জানার পরে অধিকর্তা মানিক হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘বড়া বোর্ড হাতি নে তোড় দিয়া, ছোটা বোর্ড হাতি কা বচ্চা তোড় দিয়া।’’ মাটির বাঁধের অস্তিত্ব দেখতে না পেয়ে পঞ্চায়েত প্রধান সুলেখা নায়েককে মানিক প্রশ্ন করেন, ‘‘ক্যায়া প্রধান ম্যাডাম কুছ বোলিয়ে!’’ প্রধান বলেন, ‘‘বছর বছর বর্ষায় নদীর জলোচ্ছ্বাসে মাটির বাঁধ ধুয়ে গিয়েছে।’’

বস্তুতপক্ষে জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে এসে কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দলটি গোড়া থেকেই যেভাবে প্রকল্প বেছে বেছে দেখতে যাচ্ছেন, তাতেই রীতিমত শঙ্কিত জেলা প্রশাসনের কর্তারা। এক আধিকারিক তো আড়ালে বলেই ফেললেন, ‘‘ব্লকে এত ভাল ভাল কাজ হয়েছে। কিন্তু ওঁরা তো নিজেরাই কী কী দেখবেন ঠিক করে এসেছেন। আমাদের ভাল কাজ দেখানোর সুযোগ কোথায়!’’

মানিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটি মঙ্গলবার রাতেই ঝাড়গ্রাম সার্কিট হাউসে পৌঁছে গিয়েছিল। ওই দলে মানিক ছাড়াও রয়েছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রজেক্ট ম্যানেজার জাগৃতি রাই, ইঞ্জিনিয়ার জি কিরণ কুমার। বুধবার জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকের পরে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ পরিদর্শক দলটি সাঁকরাইলের লাউদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা শাসক (জেলা পরিষদ) অবনীত পুনিয়া, একশো দিনের কাজের জেলার নোডাল অফিসার সঞ্জয় মালাকার। বেলা ১২টা নাগাদ লাউদহ পঞ্চায়েত অফিসে পৌঁছে একশো দিনের কাজের নথিপত্র দেখতে চান কেন্দ্রীয় পরিদর্শকরা। জব কার্ডের রেজিস্টার, ২০২১-২২ বর্ষের গ্রাম সভার তালিকা, আবাস যোজনায় কারা বাড়ি পেয়েছেন সেই তালিকা খুঁটিয়ে দেখেন তাঁরা। পঞ্চায়েতের কাজের মাপজোকের তথ্য ছোট নোটবুকে লেখা দেখে জাগৃতি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা গিয়ে দেখে আসুন ওখানে বড় রেজিস্টারে মাপজোকের তথ্য লিখে রাখা হয়।’’

এ দিন নদীবাঁধ দেখার পরে গাড়ি থামিয়ে নৈহাট গ্রামে ক্ষেত্রমোহন হাটুই ও তাঁর ভাই চিত্তরঞ্জন হাটুইয়ের আবাস যোজনার বাড়ি দেখতে যান পরিদর্শকরা। পৃথক সরকারি বরাদ্দে দুই ভাইয়ের একই দেওয়ালে পেল্লায় বাড়ি দেখে তাজ্জব বনে যান মানিক। বাড়ির ভিতরেও ঘুরে দেখে তিনি চিত্তরঞ্জনকে প্রশ্ন করে‌ন, ‘‘বাড়ি পাওয়ার জন্য কাউকে টাকা দিতে হয়েছিল?’’ জবাব আসে ‘‘না।’’ পাশ থেকে পঞ্চায়েতের কর্মীরা জানান, ওরা সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দের সঙ্গে নিজেদের টাকা দিয়ে বাড়ি করেছেন। কিছুটা দূরে কেদার হাটুইয়ের সরকারি বরাদ্দের বাড়িটিও পেল্লায়। সেখানেও কেদারের মা পাটো হাটুইও বাড়ি পেয়েছেন। একই দেওয়ালে উঠেছে বড়সড় বাড়ি। মেঝেতে টাইলস বসানো। কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন, যারা এমন খরচ করতে পারে তারা কী ভাবে বরাদ্দ পেল?

বিকেলে রোহিনী পঞ্চায়েতের কোদোপাল ইকো নেস্ট প্রোজেক্ট যাওয়ার জন্য নৌকায় ডুলুং নদী পেরিয়ে সেখানে পৌঁছন মানিকরা। প্রায় আশি একর জায়গায় নানা ধরনের গাছগাছালি, অতিথিনিবাস, বিনোদন পার্ক দেখে খুশি হন তাঁরা।

সব দেখে বিরোধীদের কটাক্ষ, বুলবুলিতে ধান খেলে চাষি খাজনা দিতে পারে না। হাতি বোর্ড ভাঙলে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় পঞ্চায়েত প্রধান, আমলাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Central Government midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE