অক্সিজেনের ‘অভাবে’ ধুঁকছে হাসপাতাল।
অভিযোগ, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবচেয়ে বড় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই সময় মতো মিলছে না অক্সিজেন। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন নকুল দাস। রবিবার সন্ধেয় ষাটোর্ধ্ব নকুলবাবুর অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। বৃদ্ধের ছেলে তারক দাস ছুটে যান নার্সদের কাছে। নার্সরা জানিয়ে দেন, চাইলেই অক্সিজেন মিলবে না! এখানে সিলিন্ডারের সমস্যা রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম সিলিন্ডারই আসছে। তারকের অভিযোগ, “জেলার সবথেকে বড় হাসপাতালের যদি এই হাল হয় তাহলে বাকি হাসপাতালগুলোর কী হাল বোঝাই যাচ্ছে!”
দিন কয়েক আগে চিকিৎসার অবহেলায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় মেডিক্যালে। কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে মেডিক্যালে মৃত্যু হয় বছর পঁচাত্তরের কিঙ্কর অধিকারীর। বাড়ি লালগড়ে। কিঙ্করবাবুর মেয়ে জবা রায়ের অভিযোগ, “হাসপাতালে তো সময় মতো অক্সিজেনও দেওয়া হয় না। চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছে। যখন বাবা শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন, তখন ডেকেও নার্সদের সাড়া পাইনি।” তাঁর আরও অভিযোগ, “চিকিৎসক- নার্সরা যদি এ ভাবে অবহেলা করেন, তাহলে সাধারণ মানুষ যাবেন কোথায়!”
হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ঘাটতির কথা অবশ্য মানতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজা বলেন, “অক্সিজেন সিলিন্ডারের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এ বিষয়ে আমাকে কেউ এখনও জানায়নি। দেখছি কী হয়েছে!” যদিও হাসপাতালের অন্য এক কর্তা মানছেন, “হাসপাতালে যে সংখ্যক সিলিন্ডার সরবরাহ হওয়ার কথা, সেই সংখ্যক সিলিন্ডার সরবরাহ হচ্ছে না। তাই এই সমস্যা।” তিনি বলেন, “এখন সব জিনিসপত্র অনলাইনে কিনতে হয়। এক সময় একটি মাত্র এজেন্সি হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করত। অনিয়মিত সরবরাহের ফলে চরম সমস্যা হয়। পরে আরও একটি এজেন্সি সিলিন্ডার সরবরাহ শুরু করে। তাও সমস্যা মিটছে না!”
হাসপাতালের এক সূত্রে খবর, এখন দু’রকম সিলিন্ডার প্রয়োজন হয়। ‘বি- টাইপ’ এবং ‘ডি- টাইপ’। চাহিদা বেশি ‘বি- টাইপেরই’। মেদিনীপুর মেডিক্যালে মাসে গড়ে কতগুলো অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন হয়? হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, “প্রায় ২ হাজার।” মেডিক্যালে প্রতিদিন বহু মানুষ আসেন। এখন হাসপাতালে ৫৬০টি শয্যা রয়েছে। গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ৭০০- ৭৫০ জন। হাসপাতালের এক সূত্রে খবর, মাসে বহির্বিভাগে রোগী আসেন গড়ে ১৫, ৯০০ জন। জরুরি বিভাগে প্রতি মাসে গড়ে ৬,৫৭০ জন রোগী আসেন। রোগীর সংখ্যা বেশি থাকায় অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদাও বেশি।
হাসপাতালের এক কর্তার আশ্বাস, “নিয়মিত অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের বিষয়ে এজেন্সির সঙ্গে কথা বলব।” পাশাপাশি তিনি বলেন, “কিছু ত্রুটি রয়েছে। তবে আমরা ত্রুটিগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করছি। ধারে ধাপে সব পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।” তাঁর কথায়, “কিছু অভিযোগ আসে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে পদক্ষেপও করা হয়। অভিযোগ পেয়ে কিছু করব না, তা তো হতে পারে না! আমরা শো- কজও করি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy