Advertisement
E-Paper

দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার তমলুকে

খুন করে আত্মহত্যা, সন্দেহ পুলিশের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যদিনের মত রবিবার রাতে শর্মিষ্ঠাদেবী রাতে রান্না করে শ্বশুর-শাশুড়িকে খেতে দেন। তারপর নিজেরা খাওয়াদাওয়া করে রাত ১০টা নাগাদ ঘুমাতে যান। সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে মলয়বাবুর মা ছায়াদেবী রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন গলায় দড়ির ফাঁস লাগা অবস্থায় ছেলের দেহ ঝুলছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৮ ০২:৩৯
এই বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় দম্পতির মৃতদেহ। সোমবার নিজস্ব চিত্র

এই বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় দম্পতির মৃতদেহ। সোমবার নিজস্ব চিত্র

রান্নাঘরে প্রাথমিক শিক্ষকের ঝুলন্ত দেহ। শোওয়ার ঘরে বিছানায় পড়ে তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ। তমলুক শহর লাগোয়া নারায়ণদাঁড়ি গ্রামে সোমবার সকালে দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়াল। পুলিশ মৃতদেহ দু’টি ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে।

তমলুকের এসডিপিও সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে অনুমান স্ত্রীকে খুন করে ওই শিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন। মৃত্যুর কারণ জানতে মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় অন্য কেউ যুক্ত রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নারায়ণদাঁড়ি গ্রামে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের পাশেই অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক প্রবোধ মাইতির বাড়ি। প্রবোধবাবুর তিন ছেলের মধ্যে ছোট মলয়কান্ত মাইতি (৩৩) ধলহরা পঞ্চায়েতের বিশ্বাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহ-শিক্ষক ছিলেন। বছর চারেক আগে ওই এলাকার বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা মাইতিকে (২৮) বিয়ে করেন তিনি। মলয়বাবুর বড়দা পেশায় দোকানদার সূর্যকান্ত একই বাড়িতে আলাদা থাকেন। মেজদা চন্দ্রকান্ত বেসরকারি সংস্থায় কাজের সূত্রে পরিবার নিয়ে ভিনরাজ্যের বাসিন্দা। থাকেন। স্ত্রী এবং বছর দুয়েকের ছেলেকে নিয়ে মলয়বাবু বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। দোতলা বাড়ির নীচের তলায় পাশাপাশি দু’টি ঘরে মলয়ের পরিবার ও সূর্যকান্তের পরিবার থাকেন। দোতলায় থাকতেন বাবা-মা।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যদিনের মত রবিবার রাতে শর্মিষ্ঠাদেবী রাতে রান্না করে শ্বশুর-শাশুড়িকে খেতে দেন। তারপর নিজেরা খাওয়াদাওয়া করে রাত ১০টা নাগাদ ঘুমাতে যান। সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে মলয়বাবুর মা ছায়াদেবী রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন গলায় দড়ির ফাঁস লাগা অবস্থায় ছেলের দেহ ঝুলছে। তিনি শর্মিষ্ঠাদেবীকে ডাকতে এসে দেখেন বিছানায় তাঁর নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। পাশে বসে আছে নাতি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পাশের ঘরে গিয়ে বড়ছেলে-বউমাকে ডেকে সব জানান। খবর পেয়ে চলে আসেন শর্মিষ্ঠার বাপেরবাড়ির লোকজন। পৌঁছে যায় পুলিশ।

সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল বাড়ির সামনে প্রতিবেশীদের ভিড়। ভিতরে নীচের তলার একটি ঘরে বিছানায় পড়ে শর্মিষ্ঠাদেবীর মৃতদেহ। গলায় ফাঁস লাগানোর চিহ্ন। গালেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পাশে টিভিতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিন তার পড়ে। ঘরের জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড। ঘরের পিছনের দিকে রান্নাঘরে শোয়ানো মলয়ের মৃতদেহ। গলায় দড়ির ফাঁসের চিহ্ন। কড়িকাঠে ঝুলছে নারকেল দড়ির গোছা।

দাদা সূর্যকান্ত বলেন, ‘‘ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল না। রাতে আমরা ঘুমিয়েছিলাম। কোনওরকম সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। সকালে মায়ের ডাকেই ঘুম থেকে উঠে সব জানতে পারি। আমিই ভাইয়েই দেহ নামিয়ে আনি।’’

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, স্ত্রীর সঙ্গে অন্য কোনও ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করতেন মলয়। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে অশান্তি ছিল। তাঁর জেরেই এমন ঘটনা। বাবা প্রবোধবাবুর কথায়, ‘‘ছেলে বেশ কিছুদিন ধরেই বৌমাকে সন্দেহ করত। বৌমা মোবাইলে কারও সঙ্গে কথা বললে তাঁকে বারণ করত। এনিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়াও হত।’’ তিনি জানান, দিন কয়েক রাতে বাড়ির ছাদে দু’জনের মধ্যে মারপিটও হয়। মলয় রেগে বউমাকে খুন করে নিজে আত্মহত্যার কথা বলত। মানসিকভাবেও কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। রবিবার তমলুকে এক স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে একাই গিয়েছিল। বাড়ি ফেরার পর জানতে চাইলে কোনও কথা বলেনি। তারপর এই ঘটনা।

যদিও শর্মিষ্ঠাদেবীর ভাইয়ের দাবি, ‘‘বোন ও জামাইয়ের মধ্যে অশান্তি হচ্ছে বলে জানতাম না। রবিবার রাতেও দু’জনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। সকালে আত্মীয়ের কাছে ঘটনার খবর পাই। আমাদের অনুমান, পরিকল্পিতভাবে ওদের খুন করা হয়েছে।’’

Dead Tamluk Investigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy