Advertisement
E-Paper

পাথুরে পথে স্বাগতাদের হার না মানা লড়াই

ওদের লড়াইটা আর পাঁচজনের থেকে অনেক বেশি কঠিন। পাথর ছড়ানো পথে সব ইচ্ছে পূরণ হয় না। জানে ওরা। তবু ইচ্ছেপূরণে অবিচল স্বাগতা কোল্যা, দুর্যোধন মাহাতো, শুভদীপ প্রধানরা। পরিবারে অভাব নিত্যসঙ্গী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০১:২০
স্বাগতা কোল্যা

স্বাগতা কোল্যা

ওদের লড়াইটা আর পাঁচজনের থেকে অনেক বেশি কঠিন। পাথর ছড়ানো পথে সব ইচ্ছে পূরণ হয় না। জানে ওরা। তবু ইচ্ছেপূরণে অবিচল স্বাগতা কোল্যা, দুর্যোধন মাহাতো, শুভদীপ প্রধানরা। পরিবারে অভাব নিত্যসঙ্গী। তাও সব বাধা ডিঙিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে সফল ওরা। ইচ্ছে আর মনের জোর থাকলে যে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়, তাই দেখিয়ে দিচ্ছে এই কৃতীরা। এ লড়াই ওদের কাছে হার না মানার।

কেশপুরের তোড়িয়া হাইস্কুলের ছাত্রী স্বাগতা কোল্যা উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছে ৪০৯। বাবা কাজলবরণবাবুর সামান্য জমি রয়েছে। তাতে চাষ করেই সংসার চলে। মা অনিমাদেবী গৃহবধূ। স্বাগতা অঙ্কে পেয়েছে ৮৬, রসায়নে ৭৮, পদার্থবিদ্যায় ৮৩। অঙ্কে অনার্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে। বড় হয়ে শিক্ষিকা হতে চায় সে। কিন্তু পড়ার তো অনেক খরচ। স্বাগতা বলছিল, “শিক্ষিকা হতে চাই। অঙ্ক নিয়ে পড়তে চাই। কিন্তু জানি না কলেজে ভর্তির টাকা আসবে কোত্থেকে?”

শালবনির নান্দারিয়া শাস্ত্রী স্মৃতি বিদ্যাপীঠের ছাত্র দুর্যোধন মাহাতো উচ্চমাধ্যমিকে তাক লাগানো নম্বর পেয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৪৩। বাবা জলধরবাবু অ্যাসবেস্টসের কারখানায় কাজ করেন। মা অঞ্জনাদেবী গৃহবধূ। দুর্যোধন বাংলায় পেয়েছে ৯২, ইংরাজিতে ৯৩, ভূগোলে ৯১, ইতিহাসে ৯২। ইংরাজি অনার্স নিয়ে পড়তে চায় সে। বড় হয়ে শিক্ষক হতে চায়। দুর্যোধন বলছিল, “বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। ইংরাজি নিয়ে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে। কী ভাবে ইচ্ছে পূরণ করব জানি না।”

শালবনির মৌপাল হাইস্কুলের শুভদীপ প্রধান উচ্চমাধ্যমিকে ৪০০ নম্বর পেয়েছে। বাংলায় ৮৫, ইংরাজিতে ৭২, ভূগোলে ৭২, সংস্কৃতে ৮১। বাবা সনাতনবাবু গাড়ি চালান। জমি নেই। মা পুতুলদেবী গৃহবধূ। শুভদীপ পলিটেকনিক পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করেছে। সুযোগ পেলে পলিটেকনিক পড়বে। না হলে বাংলা অথবা ইংরাজিতে অনার্স নিয়ে কলেজে ভর্তি হতে চায়। উচ্চশিক্ষার পথে বাধা অনটনই। এই কৃতী ছাত্রের কথায়, “আগামী দিনেও চেষ্টা করব যাতে পড়াশোনাটা চালাতে পারি।”

সামান্য জমি রয়েছে। সেই জমি চষেই সংসার চলে। পরিবারে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী। আর্থিক প্রতিকূলতার সেই পাহাড় টপকে উচ্চ মাধ্যমিকে সাফল্যের মুখ দেখেছে সৌভিক মল্লিক। পেল ৯৪ শতাংশ নম্বর। গড়বেতার ধাদিকা হাইস্কুলের ছাত্র সৌভিকের উচ্চ মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর ৪৭০। বাবা প্রবীরবাবু চাষবাস করেন। বেশি জমিও নেই। মা টিয়াদেবী গৃহবধূ। সৌভিক বাংলায় পেয়েছে ৯০, ইংরাজিতে ৯০, পদার্থবিদ্যায় ৯৩, রসায়নে ৯১, অঙ্কে ৯৯। রসায়ন নিয়ে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে। বড় হয়ে গবেষণা করার ইচ্ছেও রয়েছে। এই কৃতী ছাত্রের কথায়, “ইচ্ছে তো রয়েছে গবেষণা করার। জানি না কী হবে। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকেও উচ্চমাধ্যমিকে ভাল করার সব রকম চেষ্টা করেছি। আমাকে পড়াতে বাবা-মাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। সামনে আরও বাধা থাকছে। চেষ্টা করব সব বাধা টপকে এগিয়ে যাওয়ার।”

সবংয়ের উচিৎপুর হাইস্কুলের ছাত্রী সোনিয়া বেরা দাস উচ্চমাধ্যমিকে পেয়েছে ৪২০ নম্বর। বাবা নয়নরঞ্জনবাবুর মুদির দোকান রয়েছে। স্কুলের পাশেই এই দোকান। সামান্য আয়। সেই দিয়েই সংসার চলে। মা কাকলিদেবী গৃহবধূ। বাড়িতে আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না। তার মধ্যেই লড়াই করতে হয়েছে সোনিয়াকে। বাংলায় তার প্রাপ্ত নম্বর ৮০, ইংরেজিতে ৮২, ভূগোলে ৮৩, পরিবেশবিদ্যায় ৯০, জীববিদ্যায় ৮৫। বড় হয়ে শিক্ষিকা হতে চায়। প্রাণিবিদ্যায় অনার্স নিয়ে পড়তে চায়। এই কৃতী ছাত্রীর কথায়, “ইচ্ছে আছে শিক্ষিকা হওয়ার। পড়াটা চালিয়ে যেতে হবে। দেখি কী হয়।”

বাড়িতে অভাব-অনটন রয়েছে। তাতে কী? সাধারণ বাড়ি থেকে উঠে আসা এই সব ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন যে অনেক বড়। কিন্তু ইচ্ছে আর মনের জোর থাকলে দারিদ্র্য যে স্বপ্নপূরণের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তা তো প্রমাণ করেছে স্বাগতা, সৌভিক, শুভদীপরাই। ওরা জানে আগামী লড়াইটা আরও কঠিন। আসল লড়াই সেটাই। যে লড়াইটা খিদে চেপে রেখে, দাঁতে দাঁত চেপে দারিদ্র্যের সঙ্গে যুঝে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার।

Swagata Sonia poverty bright students Higher Secondary Examination HS
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy