Advertisement
E-Paper

দুয়ারে ভোট, অরক্ষিত সীমানায় ঢিলে নিরাপত্তা

ভোটের ঠিক আগের দিন। অরক্ষিতই থাকল পড়শি রাজ্যের সীমানা এলাকা। মোটর বাইক নিয়ে ঢুকলেন, আবার বেরিয়ে গেলেন অনেকেই। সে সব দেখার কেউ নেই। শুধু সীমানা এলাকা নয়, রাস্তাতেও দেখা মেলেনি কেন্দ্রীয় বাহিনীর। সিআরপি জওয়ানদের দেখা গেল শুধু বুথ ক্যাম্পাসে।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০৭
তখন বিকেল সাড়ে তিনটে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ধুমসাইতে ওড়িশা সীমানায় নেই কোনও নজরদারি। অবাধেই চলছে গাড়ি। রবিবার। — সৌমেশ্বর মণ্ডল।

তখন বিকেল সাড়ে তিনটে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ধুমসাইতে ওড়িশা সীমানায় নেই কোনও নজরদারি। অবাধেই চলছে গাড়ি। রবিবার। — সৌমেশ্বর মণ্ডল।

ভোটের ঠিক আগের দিন। অরক্ষিতই থাকল পড়শি রাজ্যের সীমানা এলাকা। মোটর বাইক নিয়ে ঢুকলেন, আবার বেরিয়ে গেলেন অনেকেই। সে সব দেখার কেউ নেই। শুধু সীমানা এলাকা নয়, রাস্তাতেও দেখা মেলেনি কেন্দ্রীয় বাহিনীর। সিআরপি জওয়ানদের দেখা গেল শুধু বুথ ক্যাম্পাসে।

এ বার অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করানোর আশ্বাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সাধারণত, ভোটের দিন কয়েক আগে থেকেই পড়শি রাজ্যের সীমানা এলাকায় কড়া নজরদারি (নাকা) চালানোর কথা। ভোটের আগের দিন তো বটেই। গাড়ি, মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে চলে চিরুনি তল্লাশি। সেখানে এ বার কেন নিরাপত্তায় এত ফাঁক?

নয়াগ্রামের পর্যবেক্ষক পুসারাম পণ্ডত বলছেন, “বিষয়টি দেখছি। পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলছি।” ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরার অবশ্য দাবি করেছেন, “সীমানা এলাকায় এ দিন নজরদারি চলেছে। সোমবারও দিনভর চলবে নাকা। রাস্তায় রুট মার্চও হয়েছে।” কিন্তু দৃশ্য বলছে অন্য কথা।

রবিবার দুপুর। নয়াগ্রামের ধুমসাইতে গিয়ে দেখা গেল, আশপাশে কোনও উর্দিধারী নেই। পশ্চিম মেদিনীপুরের সঙ্গে ওড়িশার সীমানা এলাকাও অরক্ষিত। রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সীমানা এলাকাগুলোর মধ্যে এটি একটি। ধুমসাইয়ের ওপারে পলাশমুণ্ডলি। যে এলাকা ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার মোরাদা থানার অন্তর্গত। দুপুরে সাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন বিজয় দেহরি। সত্তর ছুঁইছুঁই বিজয়বাবুর বাড়ি পলাশমুণ্ডলিতে। সীমানা পেরিয়ে নয়াগ্রামের হাটে এসেছিলেন। বৃদ্ধ বলছিলেন, “সকালে যখন যাই তখনও এখানে পুলিশ দেখিনি। এখনও তো দেখছি না।” ভোটের আগের দিন সীমানা অরক্ষিত দেখে অবাক এই বৃদ্ধও। তাঁর কথায়, “সোমবার নয়াগ্রামে ভোট, জানি। আমাদের ভোটের অবশ্য একটু দেরি আছে। ভোটের আগের দিন কেন সীমানা এলাকায় পুলিশ নেই বুঝতে পারছি না!”

পুলিশেরই এক সূত্রে খবর, মাওবাদী অধ্যুষিত বলে পরিচিত নয়াগ্রামের তিনটি এলাকায় ‘নাকা’ হওয়ার কথা। ছোট ঢ্যাঙ্গাশোল, ধুমসাই এবং ভসরাঘাট। প্রথম দু’টি এলাকা ওড়িশা সীমানায়। ভসরাঘাট এ জেলারই কেশিয়াড়ি সীমানায়। ছোট ঢ্যাঙ্গাশোল পেরোলেই বাঘরা। যে এলাকা ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার সুলিয়াপদা থানার অন্তর্গত। পড়শি রাজ্যের সীমানার পাশাপাশি ভসরাঘাটে জঙ্গলকন্যা সেতুর আশপাশেও এ দিন পুলিশের নজরদারি চোখে পড়েনি।

ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, “হয়তো সব সময় নজরদারি ছিল না। তবে ওই তিনটি এলাকায় নজরদারি চলেছে। পুলিশের গাড়িও টহল দিয়েছে।” তাঁর আশ্বাস, “ভোটের দিন নিরাপত্তায় এতটুকুও ফাঁক থাকবে না!” পুলিশের এক সূত্রে খবর, নয়াগ্রামের ১৫টি এলাকাকে অতি-স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩০ জন ‘দুষ্কৃতী’র উপর নজর রাখা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকায় লড়াই মূলত ত্রিমুখী। লড়ছেন তৃণমূলের দুলাল মুর্মু, বিজেপির বকুল মুর্মু, বাম-কংগ্রেস জোটের মনোজ টুডু। বকুলবাবু আবার সম্পর্কে দুলালবাবুর মামা। অনেকে মনে করছেন, লড়াইটা মূলত মামা-ভাগ্নেরই হতে চলেছে।

শাসক দলের লোকেদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে সরব হয়েছে বিরোধীরা। বিজেপি নেতা সুখেন্দু পাত্র বলেন, “ওরা মানুষকে ভয় দেখাতে শুরু করেছে। বেশ কিছু এলাকায় সন্ত্রাস করছে। আসলে ওরা ভয় পেয়েছে তাই ভয় দেখাচ্ছে।” তৃণমূল নেতা উজ্জ্বল দত্ত ‌এর উত্তরে বলেছেন, “ভয় দেখিয়ে কিছু হবে কি? দু’দিন ধরে তো জরুরি অবস্থা চলছে। এখনও কেউ যদি ভয় পায়, তাহলে বলব এত ভীতু লোক কি রাজনীতি করতে পারবে?”

নয়াগ্রামের খড়িকামাথানি থেকে ধুমসাইয়ের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। বিকেলে ফেরার পথে বালিগেড়িয়ার অদূরে অবশ্য একটি পুলিশের গাড়ি চোখে পড়ল। জঙ্গলরাস্তার পাশেই দাঁড়িয়েছিল গাড়িটি। উর্দিধারীরা রাস্তায় নয়, ছিলেন গাড়ির মধ্যেই। গত লোকসভা ভোটও অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু বাস্তবে উল্টোটাই ঘটেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কার্যত বসিয়ে রাখা হয়েছিল। গত বেশ কয়েকটি ভোটেই এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বসিয়ে রাখার অভিযোগ ওঠে। অবশ্য গত লোকসভা ভোটে এটা মাত্রা ছাড়িয়েছিল বলেই মনে করে বিরোধী- শিবির। এ বার গড়া থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবহার নিয়ে রাজ্যকে কড়া বার্তা দিয়েছে কমিশন। অবশ্য ভোট যত এগিয়ে আসে, বাহিনীর ব্যবহার নিয়ে ততই সুর চড়াতে শুরু করে বিরোধী- শিবির। তৃণমূল নেতা উজ্জ্বলবাবুর হাসি যেন এক অন্য জল্পনাতেই ইন্ধন দিচ্ছে!

election tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy