শয্যা-সঙ্কট। মেডিক্যালের মেঝেতেই চলছে চিকিৎসা। নিজস্ব চিত্র।
ক’দিন আগের কথা। মেদিনীপুরের শহরের সর্পদষ্ট এক তরুণীকে ভর্তি করানো হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যালে। অভিযোগ, চিকিৎসার গাফিলতিতেই মৃত্যু হয় তার। মৃত মেয়েকে ‘রেফার’ করে দেওয়ার অভিযোগও তোলেন অঙ্কিতা জানা নামে ওই তরুণীর বাবা।
যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবা মেলে না বলে হামেশাই অভিযোগ ওঠে মেদিনীপুর মেডিক্যালে। ক্ষোভ-বিক্ষোভ, ভাঙচুর-ঘেরাওয়ের মতো ঘটনাও ঘটে অহরহ। এরই মধ্যে পুর-দফতর থেকে ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সৌন্দর্যায়নের বন্দোবস্ত হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে। রোগী ও রোগীর পরিজনেদের বক্তব্য, সৌন্দর্যায়ন ভাল কথা। কিন্তু হাসপাতালের আসল জিনিস চিকিৎসা পরিষেবার মানোন্নয়ন হবে কী!
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যালের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের প্রাথমিক খসড়া তৈরি হয়েছে। কাজ দেখভাল করবে মেদিনীপুর পুরসভা। মেডিক্যালের সুপার তন্ময় পাঁজা বলেন, “সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু হবে। হাসপাতালের পরিবেশ আরও সুন্দর হবে।” আর মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের বক্তব্য, “শীঘ্রই সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু হবে। কাজ শেষ হলে হাসপাতাল চত্বর দেখতেও ভাল লাগবে।”
বছর দুয়েক আগে মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এমকেডিএ) উদ্যোগে হাসপাতালে সৌন্দর্যায়নের কিছু কাজ হয়েছে। জরুরি বিভাগের কাছেই পুকুর সংস্কার করা হয়। পুকুরের চারপাশ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়, বাঁধানো হয় পাড়। বসার জায়গা, আলো এবং ঝর্না ব্যবস্থাও করা হয়। ওই চত্বরে মাদার টেরেসা ও বিধানচন্দ্র রায়ের মূর্তি বসানো হয়েছে। এমকেডিএ-র উদ্যোগে সৌন্দর্যায়নের কাজ হয়েছে হাসপাতালের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। বাকি অংশে এখনও প্রায়ই ছড়িয়ে থাকে নোংরা-আবর্জনা, দাহ্যবস্তু, এমনকী চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম। ভ্যাটও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। রোগীর পরিজন অলোক মণ্ডল, গার্গী পাত্রদের কথায় ‘‘নিয়মিত আবর্জনা সাফাই হয় না। এত আবর্জনা হাসপাতাল চত্বরে থাকে কী করে, সেটাই তো প্রশ্ন!’’
সৌন্দর্যায়নের নতুন প্রকল্প রূপায়িত হলে এই ছবি বদলাবে বলেই আশা। কিন্তু তাতে দুই মেদিনীপুরের একমাত্র এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার হাল কতটা ফিরবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। মেডিক্যালে এখন ৬৬০টি শয্যা রয়েছে। গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ৭৫০- ৮০০ জন। হামেশাই মুমূর্ষু রোগীর ঠাঁই হয় মেঝেতে। চিকিৎসকরা অনিয়মিত, নার্সরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না বলেই অভিযোগ। বহির্বিভাগেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকার অভিযোগ রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, এই হাসপাতালে মাসে বহির্বিভাগে রোগী আসেন গড়ে ১৫,৯০০ জন। অর্থাৎ, দিনে গড়ে ৫৩০ জন। জরুরি বিভাগে মাসে গড়ে আসেন ৬,৫৭০ জন। অর্থাৎ, দিনে ২২০ জন আর প্রতি ঘন্টায় ৯-১০ জন। সকলেই সমান পরিষেবা পান না বলে অভিযোগ। রেফার করে দেওয়ার প্রবণতাও রয়েছে যথেষ্টই। প্রশান্ত সেতুয়া, রিনা দাসের মতো রোগীর পরিজনেদের কথায়, “হাসপাতালে বড় সমস্যা সিনিয়র ডাক্তার না থাকা। একাংশ নার্সও কথা শুনতে চান না। দুর্ব্যবহার করেন।’’ তা ছাড়া, সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসা হওয়ার কথা। অস্ত্রোপচার, ওষুধ, শয্যা— সবই ‘ফ্রি’। পরীক্ষানিরীক্ষাও ‘ফ্রি’। তবে প্রয়োজনীয় সব ওষুধ নিখরচায় মেলে না বলে অভিযোগ। দামি ইঞ্জেকশন এবং ওষুধ রোগীর পরিজনদের দিয়ে বাইরে থেকে কেনানো হয়। গ্যাস-অম্বলের সাধারণ ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিকও মাঝেমধ্যে থাকে না। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসকও মানছেন, “কিছু ওষুধ প্রয়োজনে রোগীর পরিজনদের দিয়ে কেনানো হয়।”
এই সব সমস্যার সুরাহা না করে, কেন হাসপাতাল চত্বর সাজাতে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে, প্রশ্ন উঠেছে সেখানেই। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, হাসপাতাল সেজে উঠতে রোগী ও রোগীর পরিজনেরা উপকৃত হবেন। চারপাশের পরিবেশটাই বদলে যাবে। আর যথাযথ পরিষেবা দেওয়ার সব রকম চেষ্টা হয় বলেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের দাবি।
বরাদ্দ ৫০ লক্ষ
• হাসপাতাল চত্বরে হবে বাগান
• গোলাপ-সহ বেশ কিছু ফুলের গাছ ও অন্য গাছ থাকবে সেখানে
• বাগানের চারপাশে থাকবে রেলিং
• বেশ কিছু বসার জায়গা করা হবে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy