চলছে আলুর বীজ বোনার কাজ। আনন্দপুরের বাঁকাঝিটা গ্রামে। — সৌমেশ্বর মণ্ডল।
সমবায়গুলিতে ৫০০ এবং ১০০০ হাজার টাকা জমা দেওয়া এবং পুরোন নোট বদলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হতেই সমস্যায় পড়েছেন গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষ। এখন পুরোদমে ধান কাটার মরসুম। সেই সঙ্গে আলু লাগানোর কাজ চলছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে। চাষিদের অভিযোগ, রাতারাতি নোট বাতিলের গেরোয় আলু বীজ কিনতে পারেননি অনেকেই। সমবায়ে গিয়ে পুরনো নোট জমা দিয়ে নতুন নোট নিতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। যাতে চটপট চাষের কাজ শুরু করা যায়। কিন্তু সেই সুবিধাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত চাষিদের।
আলুর মরসুমে কৃষকেরা সাধারণত সমবায় থেকে ঋণ নিয়েই চাষ করেন। চাষের মরসুমে সবেমাত্র ঋণ দিতেও শুরু করেছিল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলি। অনেকে চাষি ইতিমধ্যে সে টাকাও তুলে ফেলেছিলেন। কিন্তু তারপরেই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। বাধ্য হয়ে অচল টাকা ফের সমবায়ে জমা দিয়ে নতুন নোট সংগ্রহ করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। এ বার সেই লেনদেনও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে তাঁরা।
দিন দশেক আগেই স্থানীয় সমবায় থেকে ঋণের টাকা তুলেছিলেন আনন্দপুরের অমল কোটাল, সুলতানপুরের বিজয় ঘোষ, চন্দ্রকোনার ঝাঁকরার প্রদীপ মেটেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘হাতে টাকা আসার পরই আলু বীজ, সার-সহ চাষের অন্যান্য প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। জমি তৈরি হয়েও পড়ে রয়েছে। নোট বাতিল হয়ে যাওয়ায় বীজও কেনা হয়নি। সব কাজ ছেড়ে টাকা জমা দিতে যেতে হচ্ছে।”
ঘাটালের জলসরার বাসিন্দা রফিকুল আলি বলেন, “যে সমবায় থেকে টাকা তুললাম, সেই সমবায় এখন আর ওই টাকা নিচ্ছে না। ধান কাটা হয়ে মাঠে পড়ে রয়েছে। আমার অন্য কোনও ব্যাঙ্কেই অ্যাকাউন্ট নেই। আলুও লাগানো হয়নি। খাব কী তাই ভাবছি।”
সূত্রের খবর, শুধু আলু চাষ নয়। গ্রাম-গঞ্জে বহু মানুষই সমবায় ব্যাঙ্কগুলির উপর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে খুব সামান্য মানুষের। এখন পরিস্থিতি এমন যে, সমবায় থেকে নেওয়া ঋণের টাকা বদল করতে চাষিদের ছুটতে হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায়। অভিযোগ, নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়েও সমস্যায় পড়েছেন কৃষকেরা। ব্যাঙ্কগুলিতে লম্বা লাইন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেননি। টাকা বদলের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা।
ঘাটাল মহকুমায় ১২৬টি সমবায় সমিতি কাজ করে। এগুলি আবার নির্ভর তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের উপর। সমবায়গুলি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে টাকা জমা নেয়। ঘাটাল মহকুমার সমবায়গুলিতেই প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার লক্ষ গ্রাহক রয়েছেন। তারমধ্যে ৭০শতাংশই কৃষক। ফি-বছরই চাষের জন্য তাঁরা প্রত্যেকেই নির্ভর করেন সমবায় ঋণের উপর। তবে কিছু চাষি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকেও কৃষি ঋণ নেন বলে জানা গিয়েছে।
তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান কৌশিক কুলভী বলেন, “পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন টাকা বা খুচরো না-থাকায় আলু বীজ কিনতে পারেননি চাষিরা। আবার নতুন করে সমবায়ের উপর এই নিষেধাজ্ঞার জেরে এ বার পুরোপুরি চাষ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম তৈরি হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy