Advertisement
E-Paper

ভোগ খেয়ে রথে চড়েন রাধামোহন

‘বাড়তি ভোগে’ পোস্ত বড়া-সহ ৮ রকম ভাজা চাই রাধামোহনের। সঙ্গে সুগন্ধী পোলাও আর পঞ্চব্যঞ্জন। লালগড় রাজ পরিবারের সুদিন অস্ত গিয়েছে। ভগ্ন রাজপ্রাসাদ ছেড়ে রাজ পরিবারের সদস্য দর্পনারায়ণ সাহসরায় থাকেন মাটির বাড়িতে।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০০:৪৪
বিগ্রহের সামনে ভোগ। নিজস্ব চিত্র।

বিগ্রহের সামনে ভোগ। নিজস্ব চিত্র।

‘বাড়তি ভোগে’ পোস্ত বড়া-সহ ৮ রকম ভাজা চাই রাধামোহনের। সঙ্গে সুগন্ধী পোলাও আর পঞ্চব্যঞ্জন। লালগড় রাজ পরিবারের সুদিন অস্ত গিয়েছে। ভগ্ন রাজপ্রাসাদ ছেড়ে রাজ পরিবারের সদস্য দর্পনারায়ণ সাহসরায় থাকেন মাটির বাড়িতে। তবে রথের দিনে কুলদেবতা রাধামোহনের বিশেষ ভোগ-নৈবেদ্যের আয়োজনে খামতি রাখা হয় না। প্রতি বছরের মতো এবারও বুধবার সাবেক ঐতিহ্য মেনে রাধামোহন ও শ্রীমতী এবং পার্ষদ দেবদেবীর জন্য বাড়তি ভোগের আয়োজন করা হল। তারপর বিকেলে সপার্ষদ রথে চড়লেন লালগড়ের রাধামোহন।

রাজ পরিবারের সদস্য দর্পনারায়ণ সাহসরায় জানালেন, প্রায় তিনশো বছর ধরে রথের দিনে সপার্ষদ রাধামোহনকে বাড়তি ভোগ দেওয়ার প্রথা চলে আসছে। অন্যান্য দিনের চেয়ে আয়োজনে ও বাড়তি পদের সংখ্যার নিরিখে এ দিনের ভোগকে বাড়তি ভোগ বলা হয়। সাবেক রীতি মেনে পিতলের গামলা ও কাঁচা শালপাতার খোলায় নিবেদন করা হয় এই বিশেষ ভোগ। তবে কেবলমাত্র রাধামোহন ও শ্রীমতী এবং জগন্নাথের জন্য আতপ চালের অন্নভোগ হয়। গোবিন্দজিউ, গোপীনাথ জিউ, সাক্ষীগোপাল, ধাম গৌরাঙ্গের মতো পার্শ্বদেবতাদের ভোগ হয় সিদ্ধচালের। স্থানীয় গবেষক পঙ্কজকুমার মণ্ডল বলেন, “এলাকায় সিদ্ধচাল সুলভ হওয়ায় পার্শ্বদেবতাদের জন্য পৃথক অন্নভোগের প্রথাটি কয়েক শতাব্দী ধরে চলে আসছে।”

রাজপরিবার সূত্রে জানা গেল,রথের দিন সকালে লালগড়ের বাবুপাড়ার মন্দিরে মঙ্গলারতির পরে রাধামোহনকে প্রথমে নিবেদন করা হয়েছিল বাল্যভোগ। চিঁড়ে, দুধ, আখের গুড়, নানা ধরনের ফল ও মিষ্টি ছিল বাল্যভোগের পাতে। মন্দিরের রাঁধুনি রাম রায় ও গোপল রায় জানালেন, কাঠের জ্বালে পিতলের হাঁড়ি ও লোহার কড়াইয়ে ভোগ রান্না করা হয়। এদিন দুপুরে বাড়তি ভোগের ভাজার পাতে উচ্ছে, আলু, বেগুন, পটল, কাঁকরোল, ঢেড়শ, নারকেল ও কাঁচকলা ভাজা এবং পোস্ত বড়া দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে ছিল আতপ চালের অন্নভোগ ও গাওয়া ঘিয়ের পোলাও। পঞ্চব্যঞ্জনের তালিকায় ছিল রাধামোহনের প্রিয় পোস্ত দিয়ে পুনকা শাক, মুলোর ঘন্ট, আলু-পটলের চচ্চড়ি ইত্যাদি। শেষ পাতে কাঁচামিঠে আমের চাটনি ও পায়েস। বিকেলে আম, কলা ও কাঁঠালের ফলার ভোগের পরে রাধামোহন ও শ্রীমতী এবং পার্শ্বদেবতাদের সাজানো হয় সোনার অলঙ্কারে। এরপর সপার্ষদ রাধামোহনকে নিয়ে আসা হয় রথতলায়। সুসজ্জিত রথে চড়ার পরে রাধামোহনকে ছানা, নানা রকম ফল ও মিষ্টির নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়। এর নাম রথের ভোগ। রথের আরতির পরে অমৃতযোগে রথের রশিতে টান দিলেন লালগড়বাসী। হাটচালায় মাসির বাড়ি পৌঁছে প্রথমে মিছরির শরবত নিবেদন করা হয় রাধামোহনকে। তার পরে সন্ধ্যারতি। মাসির বাড়িতে রাতের ভোগে লুচি, ছোলার ডাল, নানা ব্যঞ্জন ও ছানার পায়েস। আট দিন মাসির বাড়িতে কাটিয়ে উল্টোরথের বিকেলে সপার্ষদ মন্দিরে ফিরে আসবেন লালগড়ের রথের নায়ক।

prasad rathyatra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy