Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ট্রেন ধরতে অপেক্ষা আধঘণ্টা

বেসরকারি সংস্থার কর্মী সৌরীশ গুপ্ত। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন সল্টলেকের অফিস পৌঁছতে খরিদার বাড়ি থেকে সাতসকালেই বেরিয়েছিলেন। সাড়ে ৭টার আদ্রা-হাওড়া প্যাসেঞ্জার মিনিট দশেক দেরিতে আসে। তারপর দীর্ঘ প্রতীক্ষা।

গিরি ময়দানে এই অপেক্ষা রোজনামচা।- রামপ্রসাদ সাউ

গিরি ময়দানে এই অপেক্ষা রোজনামচা।- রামপ্রসাদ সাউ

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:২৮
Share: Save:

চিত্র এক: বেসরকারি সংস্থার কর্মী সৌরীশ গুপ্ত। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন সল্টলেকের অফিস পৌঁছতে খরিদার বাড়ি থেকে সাতসকালেই বেরিয়েছিলেন। সাড়ে ৭টার আদ্রা-হাওড়া প্যাসেঞ্জার মিনিট দশেক দেরিতে আসে। তারপর দীর্ঘ প্রতীক্ষা। ঝাড়গ্রাম-মেদিনীপুর মেমু ট্রেন আসার পরে প্রায় ৩০ মিনিট দেরিতে ছাড়ে আদ্রা-হাওড়া প্যাসেঞ্জার। আধঘন্টা দেরিতে অফিস পৌঁছে বসের বকুনি খেতে হয় সৌরীশকে।

চিত্র দুই: শনিবার ছুটির দিনে কলকাতায় যাওয়ার কথা ছিল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সুরজিৎ সমাদ্দারের। হাওড়াগামী পুরুলিয়া এক্সপ্রেস দেরি করেছিল। স্টেশনে পৌঁছে সাড়ে ন’টায় ভিড় ট্রেনে উঠেছিলেন সুরজিৎবাবু। উল্টো দিক থেকে মেদিনীপুরগামী সাড়ে ন’টার আপ লোকালও সে দিন দেরিতে চলছিল। ফলে পুরুলিয়া এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে থাকল স্টেশনে। পনেরো মিনিট বাদে লোকাল ট্রেন এলে ছাড়ল পুরুলিয়া এক্সপ্রেস। ততক্ষণে শীতের সকালেও জামা ভিজেছে ঘামে।

খড়্গপুরের সৌরীশ ও সুরজিৎবাবুর গন্তব্য ভিন্ন হলেও দুর্ভোগের ঘটনাস্থল একই— গিরিময়দান স্টেশন। খড়্গপুর শহরের নিমপুরা, মালঞ্চ, মথুরাকাটি, সুভাষপল্লি, ভবানীপুর, গোলবাজার, রেল কলোনির-১, ২ নম্বর এলাকা ও নিউ সেটেলমেন্ট এলাকার যাত্রীরা এই স্টেশন উপরেই নির্ভরশীল। এখান দিয়ে আদ্রা-হাওড়ার মতো মেমু নিয়ে দিনে ৪৮টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন যাতায়াত করে। পুরুলিয়া এক্সপ্রেসও দাঁড়ায় এই স্টেশনে। আগে খড়্গপুর থেকে গোকুলপুর প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার রেলপথে একটিমাত্র লাইন থাকায় দীর্ঘক্ষণ গোকুলপুরে দাঁড়াতে হত ট্রেনগুলিকে। তাই দাবি ছিল ডবল লাইনের। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর গিরিময়দান থেকে গোকুলপুর প্রায় চার কিলোমিটার ডবল লাইন চালু হলেও খড়্গপুর পর্যন্ত বাকি সাড়ে তিন কিলোমিটার সিঙ্গল লাইন-ই রয়েছে। গত বছর জানুয়ারিতে গিরিময়দানে দ্বিতীয় প্ল্যাটফর্ম চালু হয়েছে। বেড়েছে ট্রেনের সংখ্যা। আর সেই সঙ্গে বেড়েছে গিরিময়দান স্টেশনে ডাউন ট্রেনের জন্য প্রতীক্ষারত যাত্রীদের ভোগান্তি।

আগে গিরি ময়দান দিয়ে মূলত মালগাড়ি চলত। আর দু’জোড়া আদ্রা ও গোমোগামী বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলত। তখন গিরিময়দানে ট্রেন দাঁড়ালেও স্টেশন ছিল না। অবশ্য তখন খড়্গপুর থেকে গোকুলপুর পর্যন্ত ডবল লাইন ছিল। পরে লোহা-চোরদের উৎপাতে লাইনের কিছু অংশ চুরি হয়ে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে গোটা লাইন তুলে নেন রেল কর্তৃপক্ষ। এর জেরে ট্রেন সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এত দিন গোকুলপুরে এসে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হত যাত্রীদের। এখন গিরিময়দান পর্যন্ত ডবল লাইন হয়ে যাওয়ায় সেই অপেক্ষা বেড়েছে গিরিময়দানে। কারণ, গিরিময়দান রেলগেটের অদূরে একটি লাইন দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে আপ ও ডাউন ট্রেনগুলিকে। নিত্যযাত্রী সৌরীশ গুপ্ত, সুরজিৎ সমাদ্দারদের কথায়, ‘‘কখনও নিজেরা ভোগান্তিতে পড়ছি, কখনও অন্যদের ভোগান্তির শিকার হতে দেখছি। প্রায় দু’বছর হয়ে গেল এখনও কেন ডবল লাইন থাকলেও চালু হল না বুঝছি না।’’

ডবল লাইন গড়েও চালু করা যাচ্ছে না কেন? দক্ষিণ-পূর্ব রেলের প্রবেশদ্বার খড়্গপুর জংশন স্টেশন উত্তর, মধ্য, দক্ষিণ, পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে বাংলাকে সংযুক্ত করেছে। খড়্গপুর দিয়ে ডিভিশনের এক্সপ্রেস, প্যাসেঞ্জার, মেমু মিলিয়ে দিনে প্রায় ১৫৭ জোড়া যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচল করে। ফলে রেল লাইনের জট এখানে আছেই। এই স্টেশনের অদূরেই জোড়া যায়নি গিরিময়দান থেকে আসা ডবল লাইন। রেল সূত্রে খবর, এত দিন এই জংশন স্টেশন নিয়ন্ত্রিত হত একাধিক কেবিনে থাকা লিভার টেনে। রেলের পরিভাষায় যাকে ‘রুট ইন্টারলকিং’ ব্যবস্থা বলা হয়। এ ক্ষেত্রে এক একটি লিভার ব্যবহার করে একটি লাইনকে অন্য লাইনে সংযুক্ত করা হয়। সেই সঙ্গে চলে সিগন্যালিং ব্যবস্থা।

লাইনের সংখ্যা ও ট্রেনের চাপ বাড়তে থাকায় জটিল হচ্ছে এই ব্যবস্থা। তাই এই ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ সয়ংক্রিয় করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। প্রায় ৩০কোটি টাকা ব্যয়ে ‘নিউ রুট রিলে ইন্টারলকিং’ (নিউ আরআরআই) ব্যবস্থা গড়ে তুলছে খড়্গপুর রেল। এতে সব সিগন্যাল ও জংশন পয়েন্টকে একটি ছাদের তলায় আনার কাজ চলছে। এ জন্য খড়্গপুর রেল স্টেশনের বাইরে একটি ভবন তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকে সয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় পুরনো সব লাইন জুড়ে দেওয়া হবে। তখনই জুড়ে যাবে গিরিময়দান-খড়্গপুর ডবল লাইন। খড়্গপুরের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার রাজকুমার মঙ্গলা বলেন, ‘‘ডবল লাইন চালু না করতে পারায় গিরি ময়দানে কিছু ট্রেনকে দাঁড়াতে হচ্ছে এটা ঠিক। আমরা নিউ আরআরআই ব্যবস্থার কাজ দ্রুত গতিতে করছি। আশা করছি আগামী জুনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE