জনসংযোগ কর্মসূচিতে আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ভারপ্রাপ্ত সুপার ভারতী ঘোষ-সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। বেলপাহাড়ির চিরাকুটি এলাকায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
রাজ্যে পালা বদলের পর পুলিশি জনসংযোগ বারে বারেই দেখেছে জঙ্গলমহল। কখনও ফুটবল প্রতিযোগিতা, কখনও স্বাস্থ্যশিবির, কখনও আবার পোশাক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিলি। এ বার প্রায় ছ’মাস পরে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া একদা মাওবাদী ধাত্রীভূমি বেলপাহাড়ির চিড়াকুটি এলাকায় ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের উদ্যোগে বিশাল বড় আকারের জনসংযোগ কর্মসূচি অবশ্য কিছু প্রশ্ন উস্কে দিল।
শুক্রবার দুপুরে পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের উপস্থিতিতে শিমুলপাল, ভুলাভেদা ও বেলপাহাড়ি এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৩০টি গ্রামের প্রায় দু’হাজার বাসিন্দার হাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা ‘উপহার’ তুলে দেওয়া হল। দশজন পড়ুয়ার হাতে তুলে দেওয়া হল সাইকেল। এলাকায় শান্তি ও উন্নয়নের প্রক্রিয়াকে অব্যহত রাখার জন্য এলাকাবাসীকে পাশে থাকার আবেদন জানালেন রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) থেকে জেলা সভাধিপতি। প্রকাশ্য অনুষ্ঠান মঞ্চে অূবশ্য মাওবাদী সক্রিয়তার কথা কেউ মুখে আনলেন না।
কিন্তু পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত সরাসরিই বললেন, “গত এক মাসে জঙ্গলমহলের সীমানাবর্তী এলাকায় মাওবাদীদের গতিবিধি বেড়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে অনেক তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে সংযোগ বাড়ানো এবং তাঁদের সাহায্য করার জন্য এই জনসংযোগ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমান্তবর্তী এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে মাওবাদী সক্রিয়তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বেলপাহাড়ির জামাইমারি, ডাকাই, শাঁখাভাঙা, লবনি, বীরমাদল, ঢাঙিকুসুম, পাথরচাকড়ির মতো প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে মাওবাদীরা প্রভাব ছক কষে বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এ দিন পুলিশের জনসংযোগ কর্মসূচিতে যে ৩০ টি গ্রামের বাসিন্দারা এসেছিলেন, চার বছর আগে ওই গ্রামগুলি রীতিমতো মাওবাদী উপদ্রুত হিসেবে চিহ্নিত ছিল।
ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের উদ্যোগে চিড়াকুটি গ্রামের ওদলচুয়া হাইস্কুল প্রাঙ্গণে ওই অনুষ্ঠানে সিদ্ধিনাথবাবু ছাড়াও ছিলেন ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) বিশাল গর্গ, সিআরপিএফের ডিআইজি বি ডি দাস, ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। এ ছাড়াও ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় ও দলের দুই কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ ও প্রদ্যোত্ ঘোষ।
অনুষ্ঠান মঞ্চে আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে নিয়মিত জনসংযোগ কর্মসূচি চলছে। ২০০৯-১০ সালের পরিস্থিতির সঙ্গে আজকের পরিস্থিতির তুলনা করে দেখুন। আপনারা সহযোগিতা করেছেন বলেই পরিস্থতির পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। প্রশাসন পাশে আছে। আপনারাও পাশে থাকুন।”
অনুষ্ঠানে বাসিন্দাদের উদ্দেশে সিআরপি-র ডিআইজি বি ডি দাস বলেন, “জঙ্গলমহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য আমরা রাজ্য পুলিশকে সহায়তা করে চলেছি। এর আগে আপনারা অনেক খারাপ সময় দেখেছেন। আশা করব আপনারা আগামী দিনেও আমাদের সঙ্গে থাকবেন। জঙ্গলমহলে সিআরপি-র বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনও অভিযোগ নেই। আমরা জওয়ানদের বলেছি, গ্রামবাসীদের সঙ্গে পরিবারের মতো মিশে থাকতে, যাতে এলাকার সমস্ত খবর বাসিন্দারা আমাদের দিতে পারেন।”
জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, ‘‘আপনারা পিছনে ফিরে দেখবেন না। আমরা এলাকার প্রতিটি বাড়িতে উন্নয়নের সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দিতে চাই। সেটা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের একটু সময় দিন। আপনারা আমাদের পাশে থেকে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করুন।’’ জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, ‘‘উন্নয়নের অনেক কাজ হয়েছে। এখনও অনেক কাজ চলছে। আরও কাজ হবে। প্রশাসন আপনাদের পাশে আছে। কোনও সমস্যা হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’’
এ দিন ১,২০০ বাসিন্দাদের ত্রিপল, পোষাক, ছাতা এবং বিস্কুট ও চকোলেট দেওয়া হয়। এ ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামের দশজন ছাত্রছাত্রীকে সাইকেল দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে হাজার দু’য়েক বাসিন্দাদের খিচুড়িও খাওয়ানো হয়। ভরপেট খিচুড়ি খেয়ে নতুন শাড়ি হাতে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে লখিমণি সরেন মুচকি হেসে বলেন, “প্রশাসন আমাদের এভাবে সুখে রাখলে, এলাকাও সুখে থাকবে! কে আর সাধ করে অশান্তি চায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy