Advertisement
E-Paper

বাল্যবিবাহ রোখার বার্তায় দু’চাকায় দেশ ভ্রমণ

মঙ্গলবার খড়্গপুরে পৌঁছলেন পুরুলিয়ার বুড়দা গ্রামের বছর একুশের সেই যুবক অক্ষয় ভগৎ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ১০:৫৯
খড়্গপুরে অক্ষয় ভগৎ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

খড়্গপুরে অক্ষয় ভগৎ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

চোখের সামনে দুই দিদির বাল্যবিবাহ হয়েছিল। কিশোর মনে নাড়া দিয়েছিল সমাজের সেই প্রথা। পণের টাকা জোগাড় করতে সংসারে নেমে আসে অভাব। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে বাল্যবিবাহের অপকারিতা বিষয়ে পরিবারকে বুঝিয়ে সেজ বোনের বিয়ে রুখেছেন। এর পরে সমাজকে সচেতন করতে বেরিয়েছিলেন সাইকেল পরিভ্রমণে। এ বার জনমত গড়ে লড়াইয়ের স্বপ্ন দেখছে পুরুলিয়ার ওই যুবক!

মঙ্গলবার খড়্গপুরে পৌঁছলেন পুরুলিয়ার বুড়দা গ্রামের বছর একুশের সেই যুবক অক্ষয় ভগৎ। গত বছরের ৫ মার্চ সাইকেল নিয়ে নিজের গ্রাম থেকেই যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। এর পরে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, উত্তরাখন্ড, হরিয়ানা-সহ ২৩টি রাজ্য ঘুরেছেন তিনি। ৪০০ দিনের এই সাইকেল যাত্রার ৩৮৬ দিনের মাথায় পৌঁছলেন খড়্গপুরে। মূল লক্ষ্য একটাই— সমাজে বাল্যবিবাহ রোখা। এ দিন শহরের বাল্যবিবাহ প্রবণ পাঁচবেড়িয়া ও বিদ্যাসাগরপুর ঘেঁষা এলাকায় সচেতনতা প্রচার চালিয়েছেন তিনি।

প্রথমে যান পাঁচবেড়িয়ার একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। পরে যান ইন্দা বিদ্যাসাগরপুরের রবীন্দ্র বিদ্যানিকেতন-২ স্কুলে। পড়ুয়াদের বোঝান অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ের জ্বালা-যন্ত্রণার কথা। একই সঙ্গে কী ভাবে বাল্যবিবাহের মোকাবিলা করতে হবে সেই পরামর্শও দেন অক্ষয়। এর পরে, এ দিনই কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। আগামী চার দিনে কলকাতা, বাঁকুড়া হয়ে পুরুলিয়ায় নিজের গ্রামে যাত্রা শেষ করবেন বলে জানিয়েছেন অক্ষয়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কী ভাবে শুরু হল এই যাত্রা? মাধ্যমিকের পরে আর পড়াশোনা করতে পারেনি অক্ষয়। তার আগে দুই দিদির অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ে দেখতে হয়েছিল তাঁকে। এমন কি দিতে হয়েছিল পণও। সেই পণের টাকা জোগাড় করতে পড়াশোনা ছেড়ে যোগ দিতে হয়েছিল খবরের কাগজ ও প্যাকেট দুধ বিক্রির কাজে। তবে মনের মধ্যে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে জ্বলেছিল আগুন। তখন অবশ্য তাঁর কথায় গুরুত্ব দেননি বুড়দা গ্রামের মাতব্বরেরা। তবে স্কুলে পড়া ছাড়লেও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চর্চা চালাচ্ছিলেন গ্রামীণ গ্রন্থাগারে।

এর পরে চলেছে পরিবারকে সচেতন করার কাজ। সেজ ও ছোট বোনের নাবালিকা বিয়ে রুখেছিলেন। পরে প্রাপ্তবয়স্ক হতে সেজ বোনের বিয়ে দিয়েছেন। পরিবার সচেতন হলেও গোটা সমাজকে সচেতন করা যায়নি। তাই বেরিয়েছিলেন সাইকেল যাত্রায়। কিন্তু এতে কি বন্ধ হবে বাল্যবিবাহ? অক্ষয় বলছিলেন, “আমার গ্রামে একদিন বিদ্যুৎ আসবে বলে আমরা আশায় রয়েছি। তেমনই একদিন সমাজ সচেতন হবেই। আমার গ্রামকে সম্পূর্ণ সচেতন না করতে পারলেও দেশের বহু মানুষকে সচেতন করেছি। এ বার গ্রামে ফিরে দেশের সচেতন মানুষকে নিয়ে জনমত গড়তে লড়াই শুরু করব।” এমন চেতনা দেখে এ দিন অবাক হয়েছেন অনেকেই।

ইন্দার ওই স্কুলের শিক্ষক তথা সমাজকর্মী প্রসেনজিৎ দে বলেন, “সমাজকে সচেতন করতে ওঁর যে পরিশ্রম, আত্মত্যাগ এটা নিশ্চয় মানুষকে নাড়া দেবে। যিনি ওঁকে দেখেছেন তিনি নিজে সচেতন হয়েছেন। এ বার অন্যকে সচেতন করবেন। এটাই ওঁর সাফল্য বলে মনে করি।”

Child Marriage Akshay Bhagat Campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy