Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Elephant Attack

হাতি নিয়ে সচেতনতাই সার! উঠছে প্রশ্ন

এই কথা রটে যেতেই দেউলবাড়, রামেশ্বর, বিরিবেড়িয়া, টিয়াকাটি, নাকবিন্দি, পাতিনা, খান্দারপাড়া, বাছুরখোঁয়াড় গ্রামের বাসিন্দারা ভিড় জমান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াগ্রাম শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:০২
Share: Save:

বন দফতরের সচেতনতা প্রচারই সার। বাসিন্দারা সচেতন হচ্ছেন কই? বুধবার ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রামের দেউলবাড়ে শাবক হারা হাতির হানায় দুই বৃদ্ধের মৃত্যুর ঘটনার পর এমনই আলোচনা শুরু হয়েছে বন বিভাগের বিভিন্ন মহলে। শাবক হারা হাতিটি ক্ষিপ্ত হয়ে এদিন এক ভিলেজ পুলিশের বাইক-সহ দু’টি মোটরবাইক ভাঙচুর করেছে। রামেশ্বর-ভুবনেশ্বর রুটের একটি বাসকেও দেউলবাড়ের রাস্তায় আক্রমণ করে হাতিটি। হাতির হামলায় বাসের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে বাসে ওই সময় কোনও যাত্রী ছিলেন না। বাসিন্দারা অবশ্য বলছেন, শাবকটিকে উদ্ধার করার জন্য হুলাপার্টির লোকজন পটকা ফাটিয়ে হাতিটিকে খেদাতে গেলে বিপত্তি ঘটে। হাতিটি ক্ষেপেই গিয়ে জনতাকে তাড়া করে।

বন দফতরের বক্তব্য, হাতি সম্পর্কে জঙ্গল এলাকার বাসিন্দাদের নিয়মিত সচেতনতা কর্মসূচি করা হয়। প্রচার পত্র ছড়িয়ে এলাকায় মাইকে প্রচারও করা হয়। তারপরেও নিষেধ উপেক্ষা করে হাতি দেখতে চলে যান এলাকাবাসী। কাছে গিয়ে হাতির ছবি তোলেন। ভোরবেলা জঙ্গল এলাকায় অনেকে প্রাতঃকৃত্য সারতে মাঠে চলে যান। এর ফলেও হাতির হানায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর ঝাড়গ্রাম জেলায় হাতির হানায় ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়্গপুর বন বিভাগের কলাইকুন্ডার বনাঞ্চল থেকে ১৫টি হাতির দল এদিন ভোরে সাঁকরাইল বিট এলাকার কোদোপাল হয়ে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে নয়াগ্রামের চাঁদাবিলা বনাঞ্চল এলাকায় ঢুকে পড়ে। দলের ১৩টি রামেশ্বর লাগোয়া জঙ্গলে ঢুকে যায়। তবে দলের সদ্যোজাত শাবক ও মা হাতিটি অনেকটা পিছনে ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুবর্ণরেখা নদী পেরনোর সময় এক জায়গায় জলের গভীরতা বেশি থাকায় শাবকটি হাবুডুবু খেতে থাকে। তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে মা হাতি। প্রবল আর্তনাদ করতে থাকে।

এই কথা রটে যেতেই দেউলবাড়, রামেশ্বর, বিরিবেড়িয়া, টিয়াকাটি, নাকবিন্দি, পাতিনা, খান্দারপাড়া, বাছুরখোঁয়াড় গ্রামের বাসিন্দারা ভিড় জমান। খবর পেয়ে হুলাপার্টি সমেত সাতসকালে ঘটনাস্থলে চলে আসেন চাঁদাবিলার রেঞ্জ অফিসার শুভেন্দু বিশ্বাস ও বিট অফিসার অনিতা সাহু। আসে পুলিশও। বাসিন্দাদের বার বার দূরে সরে যাওয়ার অনুরোধ করতে থাকেন বনকর্মীরা। কিন্তু কৌতুহলী জনতা সে কথায় কান দেননি। এরই মাঝে পটকা ফাটিয়ে হাতিটিকে তাড়িয়ে শাবক উদ্ধারের কাজ শুরু হতেই হই-হট্টগোল ও বাসিন্দার ভিড় দেখে হাতিটি ক্ষিপ্ত হয়ে জনতার দিকে তাড়া করে। জনতাকে সামলাতে ব্যস্ত ছিলেন বিট অফিসার অনিতা সাউ। হাতিটি তাঁর দিকে তেড়ে যায়। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন তিনি। এরপরই হাতিটি ছুটন্ত জনতার পিছনে থাকা বিরিবেড়িয়া গ্রামের বছর ষাটের শশধর মাহাতোকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে মাটিতে ফেলে পিষে দেয়। দেউলবাড় গ্রামের বছর তিয়াত্তরের আনন্দ জানা একটি কাঁটাঝোপে লুকোতে গিয়েছিলেন। হাতিটি আনন্দকে নাগালে পেয়ে শুঁড়ে ধরে মাটিতে ফেলে গলায় পা দিয়ে পিষে দেয়। খবর পেয়ে আসেন ডিএফও (খড়্গপুর) শিবানন্দ রাম। হুলাপার্টি পটকা ফাটিয়ে মা হাতিটিকে লাগোয়া জঙ্গলে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর দুই বৃদ্ধের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। মৃত হাতি শাবকটিকে নিয়ে যাওয়া হয় বন দফতরের চাঁদাবিলা ডিপোয়। সেখানে ময়নাতদন্তের পর শাবকটির দেহ দাহ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

রামেশ্বরের বাসিন্দা সুধাংশু ঘোষ এলাকার ভিলেজ রিসোর্স পার্সন (ভিআরপি)। সরকারি ভাবে তাঁকে হ্যান্ড মাইক দেওয়া হয়েছে। সুধাংশু ঘোষ বলেন, ‘‘হ্যান্ড মাইকে বার বার জনতাকে সতর্ক করতে থাকি। তার মধ্যেই হাতিটি তাড়া করে দু’জনকে মেরে ফেলে। বিট অফিসারও অল্পের জন্য রক্ষা পান।’’

ডিএফও (খড়্গপুর) শিবানন্দ রাম জানান, জঙ্গলে হাতির দলের যেখানে রয়েছে, হুলাপার্টি দিয়ে মা হাতিটিকেও সেদিকে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মাইক-প্রচার করে এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nayagram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE