Advertisement
E-Paper

ভবতোষের তথ্য সংগ্রহে চারুকলা পর্ষদ

ভোটের মুখে বর্ষীয়ান লোককবি ভবতোষ শতপথীর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করল রাজ্য চারুকলা পর্ষদ। গত চার বছর ধরে ভবতোষবাবুর সরকারি মাসিক ভাতা বন্ধ রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:৫৭
লোককবি ভবতোষ শতপথী।

লোককবি ভবতোষ শতপথী।

ভোটের মুখে বর্ষীয়ান লোককবি ভবতোষ শতপথীর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করল রাজ্য চারুকলা পর্ষদ।

গত চার বছর ধরে ভবতোষবাবুর সরকারি মাসিক ভাতা বন্ধ রয়েছে। কয়েকমাস আগে বিষয়টি নিয়ে পথে নেমে সরব হন ঝাড়গ্রামের সংস্কৃতি জগতের গুণিজনরা। ভবতোষবাবুকে তাঁর জীবদ্দশায় সরকারি স্বীকৃতি ও সম্মান দেওয়ারও দাবি তোলেন এলাকাবাসী। এরপরই ঝাড়গ্রামের মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক আজিজুর রহমান স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ভবতোষবাবুর সম্পর্কে অনুসন্ধান শুরু করেন। বর্ষীয়ান লোককবির ভাতা চালুর জন্য বিভাগীয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে সুপারিশ করেন মহকুমা তথ্য আধিকারিক। প্রশাসন সূত্রের খবর, সেই সুপারিশপত্রের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি রাজ্য চারুকলা পর্ষদের তরফে ভবতোষবাবুর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। ভবতোষবাবুর বয়সের প্রমাণপত্র, তাঁর বার্ষিক আয়ের প্রমাণপত্র এবং সংস্কৃতিক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ কী-কী অবদান রয়েছে, সে সব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিকের কাছে জানতে চেয়েছে চারুকলা পর্ষদ। সূত্রের খবর, চারুকলা পর্ষদের পক্ষ থেকে ডিআইবি-র (গোয়েন্দা) কাছেও ভবতোষবাবু সম্পর্কে পৃথক একটি রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক কৌশিক নন্দী বলেন, “ভবতোষবাবুর সম্পর্কে চারুকলা পর্ষদ আমাদের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। ভবতোষবাবুর কিছু প্রামাণ্য তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট মহলে রিপোর্ট পাঠানো হবে।”

জানা গিয়েছে, বাম আমলে রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের নথিভুক্ত দুঃস্থ সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা করে সরকারি পেনসন পেতেন ভবতোষবাবু। কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের কয়েক মাস পরে গোয়েন্দা পুলিশের রিপোর্টের ভিত্তিতে লোককবির ওই মাসিক ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। ভাতা চালু করার জন্য এরপর তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে তিন দফায় আবেদন করেন ভবতোষবাবু। যথারীতি গোয়েন্দা শাখার অফিসাররা ভবতোষবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সম্পর্কে অনুসন্ধান করে যান। কিন্তু ভাতা চালু হয়নি।

গত ছয় দশক ধরে বাংলা কাব্য সাহিত্যের পাশাপাশি, জঙ্গলমহলের প্রচলিত আঞ্চলিক কুড়মালি ভাষায় অজস্র মর্মস্পর্শী কবিতা রচনা করেছেন ভবতোষবাবু। সব মিলিয়ে কবিতার সংখ্যা তিন হাজারের কাছাকাছি। হাজার খানেক অসাধারণ ঝুমুর গানের গীতিকারও তিনি। বাংলা কবিতার মূল ধারায় প্রায় উপেক্ষিত ভবতোষবাবুর রচনার তালিকায় রয়েছে ‘অরণ্যের কাব্য’, ‘জল পড়ছে’, ‘শিরি চুনারাম মাঁহ্াত’, ‘ঢেমনা মঙ্গল’-এর মতো অসাধারণ সব কাব্যগ্রন্থ।

শুধু তাই নয়, নব্বইয়ের দশকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সম্মতিক্রমে আঞ্চলিক কুড়মালিতে চণ্ডালিকার ভাষান্তর করেছিলেন তিনি। ভবতোষবাবুর অনূদিত কুড়মালি ভাষায় চণ্ডালিকা এক সময় দেশ জুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। কলকাতার একটি সংস্থার উদ্যোগে কুড়মালি চণ্ডালিকার মঞ্চায়ন হয়েছিল বিদেশেও। কয়েক বছর আগে কুড়মালি ভাষায় ‘গীতগোবিন্দ’-এরও অনুবাদের কাজও শুরু করেন। কিন্তু বার্ধক্যজনিত শারীরিক অসুস্থতার জন্য সেই আর শেষ করতে পরেননি।

স্বভাবকবি ভবতোষের জন্ম হয় জামবনির টুলিবড় গ্রামের এক ব্রাহ্মণ জমিদার পরিবারে। প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থায় কোনও দিনই আগ্রহ ছিল না। ডুলুং নদী, ডুংরি-পাহাড়, গরিব খেটেখাওয়া আদিবাসী-মূলবাসী মানুষজনের সঙ্গেই আজীবন তাঁর আন্তরিকতা। ষাটের দশকে স্ত্রীর অকালপ্রয়াণ, তিন সন্তানের দায়িত্ব, উত্তরাধিকারের জমিদারি থেকে প্রবঞ্চনা। একের পর আঘাতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন ভবতোষবাবু। জীবনধারণ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই সময়েই তাঁর সহজিয়া ও লোকায়ত কবিতার সূত্রপাত। ঝাড়গ্রাম শহরের সত্যবানপল্লী এলাকায় একচিলতে বাড়িতে থাকেন বিপত্নীক বছর ছিয়াশির এই লোককবি।

bhabotosh satpothi information
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy