Advertisement
E-Paper

পিতৃশ্রাদ্ধে চেনা মেজাজে ছত্রধর, জানালেন ক্ষোভ

কে বলবে দীর্ঘ ছ’বছর ধরে তিনি জেলবন্দি! মঙ্গলবার লালগড়ের আমলিয়া গ্রামের বাড়িতে পুরনো মেজাজেই দেখা গেল তাঁকে। প্যারোলে মুক্ত হয়ে বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে এসে বন্ধুদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটালেন জনগণের কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধর মাহাতো। তাঁর আন্দোলনের সহযোগী পুলিশের গুলিতে নিহত লালমোহন টুডুর স্ত্রী ও মেয়েকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০১:৩১
কমিটির নিহত সভাপতি লালমোহন টুডুর স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে ছত্রধর। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কমিটির নিহত সভাপতি লালমোহন টুডুর স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে ছত্রধর। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কে বলবে দীর্ঘ ছ’বছর ধরে তিনি জেলবন্দি! মঙ্গলবার লালগড়ের আমলিয়া গ্রামের বাড়িতে পুরনো মেজাজেই দেখা গেল তাঁকে। প্যারোলে মুক্ত হয়ে বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে এসে বন্ধুদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটালেন জনগণের কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধর মাহাতো। তাঁর আন্দোলনের সহযোগী পুলিশের গুলিতে নিহত লালমোহন টুডুর স্ত্রী ও মেয়েকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন।

এ দিন সকাল দশটা নাগাদ কড়া পুলিশি পাহারায় মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে আমলিয়া গ্রামের বাড়িতে পৌঁছন ছত্রধর। স্নান সেরে বাড়ির উঠোনে ‘কামান-ক্রিয়ায়’ (শ্রাদ্ধ) যোগ দেন তিনি। ইতিমধ্যে এসে পৌঁছন কমিটির নিহত সভাপতি লালমোহনের স্ত্রী লক্ষ্মীমণি ও তাঁর ছেলেমেয়েরা। লালমোহনের মেয়ে ললিতাকে সস্নেহে বুকে টেনে নিয়ে ছত্রধর বলেন, “যদি কোনও দিন জেল থেকে ছাড়া পাই, তাহলে আদিবাসী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন চালিয়ে যাব।” ইতিমধ্যে এসে পৌঁছন এপিডিআর এবং বন্দি মুক্তি কমিটির প্রতিনিধিরাও। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমন্ত্রিত-অভ্যাগতদের ভিড় বাড়তে থাকে।

লালমোহনের পরিজনরা ছাড়াও কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক মনোজ মাহাতো, কমিটির অন্যতম জেলবন্দি নেতা সুখশান্তি বাস্কের বৃদ্ধা মা সুধারানিদেবীর মতো এলাকার পরিচিত অনেকেই এ দিন ছত্রধরের বাবার শ্রাদ্ধে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন। সব মিলিয়ে আমন্ত্রিত ছিলেন প্রায় পাঁচশো। অতিথিদের খাওয়াদাওয়ার তদারকি করেন ছত্রধরই। বাড়ির লাগোয়া উঠোনে প্যান্ডেল করে দুপুরে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। তালিকায় ছিল সাদা ভাত, শাক, মুগের ডাল, মাছের মুড়ো দিয়ে ঘন্ট, মাছের কালিয়া, দেশি মুরগির মাংস। আর শেষ পাতে চাটনি, পাঁপড়, দই, মিহিদানা। ছত্রধর নিজেই পরিবেশনে লেগে পড়েন। ছত্রধরের স্ত্রী নিয়তিদেবীও স্বামীর সঙ্গে অতিথি আপ্যায়ণে হাত লাগান। পরিবেশনের ফাঁকে হাসতে হাসতে ছত্রধর বলেন, “আমি যে জেলবন্দি সেটা খানিকক্ষণের জন্য ভুলে গিয়েছি।”

সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করতেও ছাড়েননি কমিটির জেলবন্দি নেতা। ছত্রধরের কথায়, “দু’টাকা কিলো দরে চাল দিয়ে মানুষজনকে তো ভিখারি বানানো হচ্ছে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। ফুটবল খেলা ও মেলা করে কিংবা দু’-এক জন আদিবাসীকে পুরস্কার দেওয়াটাই কি উন্নয়ন?” কমিটির এই নেতার মতে, “জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসী মানুষগুলির অভাব-দারিদ্রের পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তনের জন্য যে আদিবাসী-মূলবাসীরা আন্দোলন করেছিলেন তাঁরাই আজ উপেক্ষিত।” রানাঘাটের স্কুলে বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনী ধর্ষণ প্রসঙ্গেও সরব হন কমিটি-নেতা। ছত্রধর বলেন, “পার্কস্ট্রিট-কাণ্ডকে সাজানো ঘটনা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বক্তব্যের পরে রাজ্যে নারী নিগ্রহের ঘটনা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। রানাঘাটের ধর্ষণের ঘটনার দায় তাই মুখ্যমন্ত্রী এড়াতে পারেন না।” তাঁর অভিযোগ, “এ রাজ্যে প্রতিবাদীদের উপর প্রতিহিংসা মূলক আচরণ করছে সরকার। আমাকে ফের নতুন করে পুরনো মামলায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে।”

বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মা বেদনবালাদেবীকে প্রণাম করে পুলিশের গাড়িতে চেপে মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলের উদ্দেশে রওনা দেন ছত্রধর। মেঠো পথের ধুলোয় মিলিয়ে যাওয়া পুলিশের গাড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন পরিজনেরা।

chhatradhar mahato kingshuk gupta lalgarh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy