Advertisement
E-Paper

নিয়োগে মানা হচ্ছে না নিয়ম, নালিশ বিদ্যাসাগরে

একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হয়ে চলেছে। অথচ, নিয়োগ হচ্ছে না। এতে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে জটিলতা দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’ধরনের প্রশাসনিক পদ রয়েছে।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০০:৫৫

একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হয়ে চলেছে। অথচ, নিয়োগ হচ্ছে না। এতে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে জটিলতা দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’ধরনের প্রশাসনিক পদ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষক প্রতিনিধিরা নিযুক্ত হন। কিছু পদে নিযোগ করা হয় প্রশাসনিক আধিকারিকদের। অভিযোগ, শিক্ষক প্রতিনিধি পদে নিয়োগের সময় বহু ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মানা হয়নি। নিজেদের পছন্দের শিক্ষকদের ডিন বা বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই কারণেই শূন্য পদে নিয়োগ না করে নিজেদের পছন্দের আধিকারিকদের অস্থায়ীভাবে পদে রেখে দেওয়া হচ্ছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। শূন্যপদে নিয়োগ না বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েও উপযুক্ত আবেদন পাওয়া যায়নি। অন্য ক্ষেত্রে শীঘ্রই নিয়োগের জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য?

উপাচার্যের পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদটি হল রেজিস্ট্রার। ২০১৩ সাল থেকে ওই পদটি শূন্য! বর্তমানে ওই পদে অস্থায়ীভাবে দায়িত্বে রয়েছেন স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার বিভাগের ডিন জয়ন্তকিশোর নন্দী। ওই সময় থেকেই শূন্য দূরশিক্ষার ডিরেক্টরের পদও। সেখানে অস্থায়ীভাবে রয়েছে জয়ন্ত কুণ্ডু। সম্প্রতি আরও দু’টি পদ শূন্য হয়েছে। সেগুলি হল, পরীক্ষা নিয়ামক ও কলেজ সমূহের পরিদর্শক। গত ডিসেম্বরে অবসর নিয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ সমূহের পরিদর্শক বিনয় চন্দ। অস্থায়ীভাবে তিনিই এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর চলতি বছরের এপ্রিলে অবসর নিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ামক নিরঞ্জন মণ্ডল। অস্থায়ীভাবে তিনিও দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৫০টির বেশি কলেজ রয়েছে। সেখানকার নানা সমস্যা দেখার দায়িত্ব কলেজ সমূহের পরিদর্শকের। আর কলেজগুলি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সংক্রান্ত অর্থাত্‌ প্রশ্নপত্র তৈরি, তা কলেজে পাঠানো, খাতা দেখা-সহ যাবতীয় দায়িত্ব পরীক্ষা নিয়ামকের। ফলে দ্রুত নিয়োগ না হলে চরম সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে। অভিযোগ, সব জেনেও কেবলমাত্র ‘কাছের লোক’কে পদে রাখার জন্যই নতুন নিয়োগ নিয়ে তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি। উল্টে পুরনোদেরই অস্থায়ীভাবে দু’মাস করে চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।

বিভিন্ন বিভাগে বিভাগীয় প্রধান করার ক্ষেত্রেও নিয়ম ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ। সমাজবিদ্যার ক্ষেত্রে যেমন অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হাফিজ মইনুদ্দিন থাকা সত্ত্বেও সেখানে বিভাগীয় প্রধান করা হয়েছে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর অস্মিতা ভট্টাচার্যকে। একই ভাবে ভূগোলের ক্ষেত্রে দু’জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর থাকা সত্ত্বেও বিভাগীয় প্রধান করা হয়েছে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর কৌশিক ঘোষকে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, প্রফেসর বা অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ছাড়া বিভাগীয় প্রধান করা যাবে না। যদি কোনও বিভাগে ওই পদে শিক্ষক না থাকেন তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরকে সেই দায়িত্ব দেওয়া যাবে। এ ভাবেই বিভিন্ন বিভাগে নিয়ম মানা হয়নি। এমনকী নিয়ম মানা হয়নি কলাবিভাগের ডিন নিয়োগের ক্ষেত্রেও। ৫-৭ বছরের অভিজ্ঞ অধ্যাপকদের বাদ দিয়েই মাত্র বছর দু’য়েকের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ইংরেজি বিভাগের দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডিন করা হয়েছে। এতে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান কমবে বলেই আশঙ্কা একাংশ শিক্ষকের।

বিভাগীয় প্রধানের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্ত কিশোর নন্দীর বক্তব্য, “যে সব বিভাগে প্রফেসর বা অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরদের অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজও করতে হয় সে ক্ষেত্রে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এক একজনের পক্ষে একাধিক দায়িত্ব সামলানো তো কঠিন।” এই যুক্তিতে কি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম ভাঙা যায়? রেজিস্ট্রারের কথায়, “এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের অনুমতি নিয়েই করা হয়েছে। এতে আখেরে লাভই হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ শিক্ষক আবার বলছেন, কর্তৃপক্ষ গেস্ট লেকচারার নিয়োগে কড়াকড়ি করছেন। কোনও বিভাগ বেশি গেস্ট লেকচারার চেয়ে আবেদন করতে পারবেন না। তাহলে তা অনুমোদন করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দীর যুক্তি, “শিক্ষকেরা তাঁদের নির্দিষ্ট সময় ক্লাস নেওয়ার পর প্রয়োজন হলে নিশ্চয় গেস্ট লেকচারার নেওয়া হবে। কিন্তু শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও অকারণ অর্থ ব্যয়ের জন্য গেস্ট লেকচারার নেওয়া যাবে না। ছাত্রছাত্রীরা যাতে বঞ্চিত না হন, সেটা অবশ্যই দেখব।’’

শিক্ষকদের পাল্টা যুক্তি, এক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় নিয়ে কর্তৃপক্ষ মাথাব্যথা করলেও মেদিনীপুর থেকে কলকাতা যাওয়ার ক্ষেত্রে আধিকারিকদের গাড়ি দেওয়া হয়, তার তেলের পিছনে কিভাবে এত খরচ করা হচ্ছে? অথচ, সব বিভাগে নিয়ম মেনে ৮ জন করে শিক্ষক নেই। সেখানে গেস্ট লেকচারার নেওয়ার ক্ষেত্রে এত বিধিনিষেধ কেন? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রশাসনিক আধিকারিকদের সন্ধের পরেও কাজ করতে হয়। তাই সপ্তাহে একদিন গাড়িতে ছাড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তার জন্য তাঁদের কাছে মাসে ১০০ টাকাও নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কথায়, “টোল ট্যাক্স দিতেই আড়াইশো টাকা খরচ। তার বাইরে রয়েছে তেল, চালকের মাইনে। মাসে চারবার গাড়ি যাচ্ছে। এ খরচ কেউ দেখছেন না।” এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই কাছের লোকদের পদ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেই অভিযোগ। তা নিয়ে ক্ষোভ জমছে শিক্ষকদের মধ্যে।

Vidyasagar University Recruitment medinipur suman ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy