Advertisement
E-Paper

মূর্তিতে মন গলবে তো!

সিধো-কানহোর মূর্তি বসান— শনিবার কেচন্দায় হুল দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়ে পুরসভাকে এমনই নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। ঝা়ড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব সভামঞ্চে জানিয়ে দেন অবিলম্বে তিনি পদক্ষেপ করবেন।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৮ ০১:০৪
ঝাড়গ্রাম শহরে রাস্তার হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র

ঝাড়গ্রাম শহরে রাস্তার হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র

রাস্তাঘাট, নিকাশি নালা কত কিছুই তো করার আছে বাকি। তা হলে সব ছেড়ে পুরসভা তড়িঘড়ি আদিবাসী নেতা সিধো-কানহোর মূর্তি বসাবে কেন? শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর এমনই প্রশ্ন তুলছেন আদিবাসী সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকদের একাংশ। মূর্তি প্রসঙ্গে পুরসভাকে খোঁচা দিতে ছাড়ছেন না বিরোধী দলের আদিবাসী নেতারাও।

সিধো-কানহোর মূর্তি বসান— শনিবার কেচন্দায় হুল দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়ে পুরসভাকে এমনই নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। ঝা়ড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব সভামঞ্চে জানিয়ে দেন অবিলম্বে তিনি পদক্ষেপ করবেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ আর তা পালনে পুরপ্রধানের তৎপরতায় প্রশ্ন তুলছেন বিশিষ্ট নাগরিকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এ ভাবে কি সত্যি আদিবাসী সমাজের মন পাওয়া যায়? ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভরতপুর এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট সাঁওতালি সাহিত্যিক খেরওয়াল সরেন বলেন, ‘‘আমার এলাকার রাস্তাটাই হল না। বর্ষায় হাঁটা চলায় খুবই সমস্যা হয়। পুর কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়ে হয়রান হয়ে গিয়েছি। মানুষের সমস্যার সমাধান না করে মূর্তি বসিয়ে কখনও এভাবে আদিবাসীদের মন পাওয়া যায় না।’’

১৯৮২ সালে গঠিত ঝাড়গ্রাম পুর এলাকার সব চেয়ে বড় সমস্যা বেহাল নিকাশি। তিন দশকের বেশি ক্ষমতায় থেকেও সমস্যা মেটাতে পারেনি বাম পুরবোর্ড। ২০১৩ সালে পুরবোর্ডের ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। কিন্তু সাড়ে চার বছরে পুর পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে পুরবাসীর। পরিকল্পনাবিহীন ভাবে নর্দমা তৈরির ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের বেশির ভাগ এলাকায় জল জমে যায়। পানীয় জল প্রকল্পের পাইপ লাইন বসানোর জন্য পরিকল্পনা বিহীন ভাবে রাস্তা খুঁড়ে পুরবাসীর যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ। জঞ্জালময় শহরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট নিয়েও বিস্তর‌ অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর। শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নুননুনগেড়িয়া এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট কবি সারিধরম হাঁসদা বলেন, ‘‘আগে শহরের জ্বলন্ত সমস্যা গুলোর সমাধান করা জরুরি। পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়নের কাজটাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে মূর্তি বসিয়ে কী হবে! আমাদের এলাকায় তো পুর পরিষেবা মেলেই না।’’

কেন হঠাৎ সিধো-কানহোর মূর্তি বসানোর তোড়জো়ড়? বিরোধীদের অভিযোগ, ভোট রাজনীতির কথা মাথায় রেখেই শুরু হয়েছে তৎপরতা। কারণ, পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রাম জেলায় তৃণমূলের খুব একটা ভাল হয়নি। চলতি বছরের নভেম্বরে পুরভোট হওয়ার কথা। শহরে মোট জনসংখ্যার কুড়ি শতাংশ আদিবাসী। তাই শহরে আদিবাসীদের মন পেতেই সাঁওতাল বিদ্রোহের দুই মহান নেতার মূর্তি বসানোর প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কের কথায়, ‘‘তৃণমূল পুরবোর্ডের ক্ষমতায় থেকে মানুষের কাজ করতে ব‍্যর্থ হয়েছে। তাই ভোট আসতেই ওরা আদিবাসী আবেগ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’’ বিজেপির আদিবাসী মোর্চার ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি কুঁনার হেমব্রম বলেন, ‘‘শহরের আদিবাসী এলাকাগুলির রাস্তা ঘাট ও নিকাশির বেহাল অবস্থা। কাজ না করে আদিবাসী আবেগ নিয়ে রাজনীতি করছে তৃণমূল। অনুন্নয়ন বা আদিবাসী আবেগ উস্কে দেওয়া অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ পুর কর্তৃপক্ষ। পুরপ্রধান দুর্গেশবাবু বলেন, ‘‘শহরে যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। আরও হবে। আমরা কাজ করে যাব।’’ তিনি জানান, এ মাসে পুরবোর্ডের বৈঠকে সিধো-কানহোর মূর্তি তৈরি ও বসানোর জন‍্য অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিরোধীরা এ-ও প্রশ্ন তুলেছেন, সব ক্ষেত্রেই কি পুরসভা মূর্তি বসানোর ক্ষেত্রে সমান ভাবে তৎপর? শহরের স্টেশন থেকে রূপছায়া মোড় হয়ে তথ‍্যকেন্দ্র যাওয়ার রাস্তাটি অলচিকি লিপির স্রষ্টা পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর নামাঙ্কিত হয় বছর দশেক আগে। অথচ দুই মনীষীর মূর্তি বসাতে উদ্যোগী হয়নি তৃণমূলের পুরবোর্ড।

Jhargram Municipality Agitation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy