E-Paper

মাথায় জানালে তবেই কাজ, ক্ষোভ

বছর পাঁচ-ছয়েক আগে উন্নয়নে সার্বিক ভাবে পিছিয়ে ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের এই তল্লাট। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিকে জানিয়েও উন্নয়নের তালিকায় নাম ওঠেনি গ্রামের।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০৭
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

জেলা প্রশাসনের নজরে আনলেই যে কাজ সহজে হয়ে যায়, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার দাবি জানালেও তা হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্ন তুলছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের গ্রাম বীরসিংহের বাসিন্দারা।

বছর পাঁচ-ছয়েক আগে উন্নয়নে সার্বিক ভাবে পিছিয়ে ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের এই তল্লাট। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিকে জানিয়েও উন্নয়নের তালিকায় নাম ওঠেনি গ্রামের। বিদ্যাসাগরের জন্মের দু’শো বছর উদ্‌যাপনের আগে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে কার্যত উন্নয়ন আদায় করেছিলেন বীরসিংহবাসী। তখন এলাকায় এসেছিলেন তৎকালীন জেলাশাসক রশ্মি কমল। তাঁর কাছে দাবি জানানোর পরেই পাকা রাস্তা, পথবাতি, পানীয় জলের সংযোগ-সহ বীরসিংহে শুরু হয়েছিল কর্মযজ্ঞ। বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

মঙ্গলবার বীরসিংহ ভগবতী উচ্চবিদ্যালয়ে ‘আমাদের পাড়া,আমাদের সমাধান’ শিবিরে বর্তমান জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরিকে কাছে পেয়ে ফের সেই বীরসিংহ গ্রামের বাসিন্দারা অকেজো পথবাতি মেরামত, বয়স্ক ভাতা, আবাসের বাড়ি, শৌচাগার, নর্দমা তৈরি-সহ নানা আর্জি জানান।শিবিরে উপস্থিত গ্রামবাসীকে হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে বলতে শোনা যায়, বহুবার পঞ্চায়েতে জানিয়ে লাভ হয়নি। তাই জেলাশাসক বলছেন তাঁরা। তাতে কাজও হয়েছে। বুধবারই মেদিনীপুর থেকে দফতরের কর্মীদের বীরসিংহে পাঠান জেলাশাসক। সকাল থেকে সন্ধ্যা চলে আবাস, ভাতা-সহ নানা ক্ষেত্রে কার কী সমস্যা সেই তালিকা তৈরির কাজ।

বীরসিংহ নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, আবেগ। কিন্তু সে সবে গুরুত্ব দিয়ে গ্রামের উন্নয়নে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ কোনও কালেই ছিল না বলে অভিযোগ। বাম আমলের শেষেও পিছিয়ে ছিল বিদ্যাসাগরের গ্রাম।ত বহু রাস্তা ছিল মাটির। তৃণমূল ক্ষমতা আসার পরেও গোড়ার দিকে তেমন উন্নয়ন চোখে পড়েনি। ২০১৯ সালে উন্নয়নের দাবিতে গ্রামবাসীর আন্দোলনের ঝাঁঝ দেখে টনক নড়ে প্রশাসনের। উন্নয়নে গ্রামটি এখন অনেক এগিয়েছে। তবে নানা কাজ এখনও চলছে।

তবে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে গ্রামবাসীর ক্ষোভ মেটেনি।তাঁদের প্রশ্ন, “সমস্যা জানার পরে জেলা প্রশাসন যদি চটজলদি সমাধান করে দেয়, তাহলে স্থানীয় পঞ্চায়েত কেন করছে না? জেলাশাসককে তো আর সবসময় হাতের কাছে পাব না!” ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাটের কটাক্ষ, “উন্নয়ন পর্ষদে কোটি কোটি টাকার কাজ হলেও বীরসিংহ কেমন এগোচ্ছে, তা জেলাশাসক গ্রামে পা দিয়েই টের পেয়েছেন।” বুধবার বীরসিংহ গ্রামের বৃদ্ধা কমলা মল্লিক বলছিলেন, “আমি ভিক্ষা করে খাই, সবাই জানে। পঞ্চায়েত প্রধানও জানেন। তাও ঘর দেয়নি। ত্রিপল খাটিয়ে থাকি। জেলাশাসককে জানাতেই তালিকায় নাম উঠেছে। এ বার হয়তো ঘরের টাকা পাব।”

স্থানীয় লতা মল্লিকের কথায়, “কত বছর ধরে শুনছি সরকার ঘরে ঘরে শৌচাগার করে দিয়েছে। আমরা পাইনি। মঙ্গলবার শিবিরে গিয়ে জেলার বাবুকে জানতেই বুধবার নাম উঠে গিয়েছে।” গ্রামের আর এক বাসিন্দা অরুণ ঘোষও বললেন, “গ্রামের মানুষের আন্দোলনের পর কোটি কোটি টাকা খরচ করে গোটা বীরসিংহের রাস্তায় পথবাতি বসেছিল। কিন্তু সেগুলি বছর দেড়-দুই ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকার পরেও স্থানীয় প্রশাসনের হুঁশ ফেরেনি। জেলাশাসককে জানিয়েছিলাম। বুধবার খোঁজখবর নিয়ে গিয়েছেন জেলাশাসকের দফতরের অফিসারেরা। ফের আলো জ্বলবে আশ্বাস দিয়েছেন।”

স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে গ্রামবাসীর ক্ষোভ প্রসঙ্গে বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রশান্ত রায় বলেন, “উন্নয়ন তো হচ্ছে। আবাসের বাড়িও হচ্ছে অনেকের। তারপরেও অভিযোগ উঠছে। জেলাশাসক উদ্যোগী হয়েছেন। বুধবার তার তালিকা তৈরি হয়েছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Midnapore Birsingha

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy