E-Paper

পিতৃপক্ষেই ‘বোধন’, পুজোয় মাতছে ঝাড়গ্রাম ও মঙ্গলপোতা

অতীতে রাজার গড় ঝাড়গ্রামই হল বর্তমানে অরণ্যশহরের পুরাতন ঝাড়গ্রাম এলাকা। এখানেই রয়েছে রাজবংশের কুলদেবী সাবিত্রী মন্দির।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৫১
পটেশ্বরী। রবিবার কৃষ্ণ পক্ষের জিতাষ্টমীতে শুরু ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির দুর্গাপুজো।

পটেশ্বরী। রবিবার কৃষ্ণ পক্ষের জিতাষ্টমীতে শুরু ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। নিজস্ব চিত্র ।

দেবীপক্ষ নয়, পুরনো নিয়ম মেনে পিতৃপক্ষেই শুরু হল গড়-ঝাড়গ্রামের রাজার দুর্গাপুজো। রবিবার কৃষ্ণপক্ষের জীতাষ্টমী তিথির রাতে সাবিত্রী মন্দিরের প্রাঙ্গণে বেল গাছের তলায় মঙ্গলঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির ৪১৮তম দুর্গাপুজো। আজ, সোমবার নবমী তিথিতে হবে অস্ত্র পুজো। বিজয়া দশমী পর্যন্ত চলবে পুজো। প্রথা
মেনে এ দিনই পুজো শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার মঙ্গলপোতা রাজবাড়িতেও।

অতীতে রাজার গড় ঝাড়গ্রামই হল বর্তমানে অরণ্যশহরের পুরাতন ঝাড়গ্রাম এলাকা। এখানেই রয়েছে রাজবংশের কুলদেবী সাবিত্রী মন্দির। মন্দিরের ভিতরে পৃথক চণ্ডীমণ্ডপে (দুর্গা মন্দির) দেবী পটে পুজো পান। আগে প্রাচীন পটটি ছিল শালপাতার ঝালরের উপর আঁকা। সেটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন চণ্ডীমণ্ডপের দেওয়ালে আঁকা পটে দেবী পটেশ্বরীর পুজো হয়।

কেন দেবীপক্ষের আগে পুজোর সূচনা, তা নিয়েও নানা জনশ্রুতি রয়েছে। কয়েকশো বছর আগে গড় ঝাড়গ্রামের স্থানীয় জংলি মাল রাজাকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে পরাস্ত করে রাজ্যপাট দখল করেন রাজপুতানার সর্বেশ্বর। তাঁর রাজ্যাভিষেকের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে ইন্দ্রাভিষেক অনুষ্ঠানের
সূচনা হয়।

জনশ্রুতি, সেই উৎসবের রেশ ধরেই আশ্বিন মাসের জীতাষ্টমীতে রাজ পরিবারের সমৃদ্ধি এবং প্রজাদের মঙ্গলকামনায় জীমূতবাহন অর্থাৎ ইন্দ্রের পুজো হয়। পাশাপাশি, শক্তিলাভের আশায় কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে অস্ত্র পুজোর মাধ্যমে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয়। পরিবারের সদস্যদের দাবি, ১০১৬ বঙ্গাব্দে মল্লদেব বংশের আদিপুরুষ রাজা সর্বেশ্বর এই পুজোর
সূচনা করেন।

পরিবারের দুই সদস্য দুর্গেশ মল্লদেব এবং জয়দীপ মল্লদেব বলেন, ‘‘কুলদেবী সাবিত্রীর নিত্য পুজো হয় দুর্গামন্ত্রে। কুলদেবী থাকায় দুর্গাপুজো হয় পটে। জীতাষ্টমীর রাতে বেলবরণের মাধ্যমে শুরু হয় পুজো।’’ রাজ পরিবারের পুরোহিত পার্থসারথী ঘোষাল বলেন, ‘‘জীতাষ্টমীতে বেল গাছের তলায় নবপত্রিকা সহকারে পুজো করা হবে। তারপর আমন্ত্রণ অধিবাস করে দেবীর মণ্ডপে
নিয়ে যাওয়া হবে। ১৫ দিন ধরে
চলবে দেবীর পুজো, হোম
এবং চণ্ডীপাঠ।’’

প্রথা মেনে জীতাষ্টমীর দিন থেকেই পুজো শুরু হয়েছে গড়বেতার মঙ্গলাপোতা রাজবাড়িতেও। এ দিন সন্ধ্যায় রাজবাড়ির বেলগাছের তলায় বেলবরণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পুজো। জীমূতবাহনেরও পুজো হয়েছে। এখানে রাজবাড়ির বীরত্বের প্রতীক হিসাবে দুর্গাপুজোর সময় তিনটি তরবারি পুজো হয়। এ দিন বেলবরণের সাথে হল প্রথম তরবারির পুজো। প্রথা মতো মহালয়া ও ষষ্ঠীতে হয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় তরবারির পুজো। রাজবাড়ির ৪০০ বছরেরও বেশি পুরনো দুর্গাপুজোয় হয় তিনটি
ঘট স্থাপন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jhargram Durga Puja

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy