তৃণমূল কার্যালয়ে ডেকে এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগে উত্তেজনা ছড়াল পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় থানা এলাকায়। রবিবার বিচার চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন ‘নির্যাতিতা’র স্বামী। অভিযুক্তের গ্রেফতারির দাবিতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি।
‘নির্যাতিতা’র স্বামী পুলিশকে জানিয়েছেন, রবিবার সকালে একটি বিবাদ সংক্রান্ত অভিযোগপত্র নিয়ে তৃণমূল কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। আচমকা দলীয় কার্যালয়ের দরজা বন্ধ করে তাঁর স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা। তাঁকে ‘সহায়তা’ করেছিলেন বয়স্ক এক তৃণমূল কর্মী। কিছু ক্ষণের মধ্যে তৃণমূলের ওই পার্টি অফিসে দলের আর এক কর্মী এবং তাঁর মা গিয়েছিলেন। ওই দু’জন তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করেছেন। বর্তমানে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাঁর স্ত্রী। অভিযোগপত্রে যুবক লিখেছেন, ‘‘রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ আমার স্ত্রী দরখাস্ত জমা দিতেই গিয়েছিল তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে... পার্টি অফিসের দরজা বন্ধ করে আমার স্ত্রীর উপর পাশবিক অত্যাচার করা হয়। ধর্ষণও করা হয়।’’ তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, নির্যাতনের সময় তৃণমূল কর্মী এবং তাঁর মা উপস্থিত হওয়ায় তাঁদেরও মারধর করেছেন অভিযুক্তেরা। অন্য দিকে, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে মারধর করা হয়েছে, এই অভিযোগে পুলিশ এক জনকে আটক করেছে বলে খবর।
স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তাঁরা ‘নির্যাতিতা’কে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। তাঁদের এ-ও দাবি, ওই মহিলা এক সময় বিজেপি করতেন। তাঁর স্বামীর একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। বিজেপি করার ‘অপরাধে’ গত কয়েক বছর ধরে নানা ভাবে তাঁদের হেনস্থা করা হয়েছে। জোর করে তাঁদের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হত। এই গন্ডগোল থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য মহিলাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, তাঁকে বিজেপি ছাড়তে হবে। শনিবার মহিলাকে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা জানিয়েছিলেন, লিখিত ভাবে তাঁকে (মহিলাকে) জানাতে হবে যে, তিনি বিজেপি ছাড়ছেন এবং ওই দরখাস্ত তৃণমূল কার্যালয়ে গিয়ে জমা দিতে হবে। রুজিরুটির জন্য বাধ্য হয়ে দরখাস্ত নিয়ে তৃণমূল কার্যালয়ে গিয়েছিলেন মহিলা। কিন্তু সেখানে তাঁকে ‘ধর্ষিতা’ হতে হয়েছে। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, ‘‘নারী দিবসের পরের দিন নারীকে ধর্ষিত হতে হল তৃণমূলের পার্টি অফিসে। তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে অন্যদের। পুলিশের সাহায্য নিয়ে নির্যাতিতাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। মহিলা অভিযোগ করেছেন, তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তাররা পরীক্ষা করতে চাননি।’’
এই বিতর্কে নারায়ণগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সুকুমার জানা বলেন, ‘‘কী হয়েছে জানা নেই। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার বক্তব্য, ‘‘দল কোনও ভাবেই নারীদের অসন্মান মেনে নেবে না। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে এবং তার যদি প্রমাণ মেলে তা হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা যেমন নেওয়া হবে, পুলিশ প্রশাসনও আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। তবে তার আগে ঘটনার সত্যতা জানতে হবে।’’ জেলার পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘‘দুই পক্ষের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’