Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

উপেক্ষিত সাঁওতালি ভাষা, ক্ষোভ জঙ্গলমহলে

আগামী ৪ এপ্রিল পৃথক ঝাড়গ্রাম জেলার সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু জঙ্গলমহলের মূলবাসী সাঁওতালদের মাতৃভাষায় পঠনপাঠনের বিষয়টি এখনও উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে বলে অভিযোগ।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৭ ০১:০৫
Share: Save:

আগামী ৪ এপ্রিল পৃথক ঝাড়গ্রাম জেলার সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু জঙ্গলমহলের মূলবাসী সাঁওতালদের মাতৃভাষায় পঠনপাঠনের বিষয়টি এখনও উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক ও আদিবাসী সংগঠনগুলির মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের আগে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার প্রাথমিক স্কুলে তড়িঘড়ি সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপির পাঠ্যবই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কবে থেকে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পাঠক্রম চালু হবে সেই নির্দেশিকা স্কুলে আসেনি। এই পরিস্থিতিতে সাঁওতালদের সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষগুলিকে অলচিকি পাঠ্যক্রম চালুর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।

অভিভাবকদের অভিযোগ, “সরকারি ভাবে অলচিকিতে পঠনপাঠনের ঘোষণা করা হচ্ছে। বাস্তবে কিছুই হচ্ছে না। সাঁওতাল শিশুরা মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।” যেমন, জামবনি ব্লকের গিধনি চক্রের গিধনি সাঁওতাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৫ জন পড়ুয়ার মধ্যে ৪৩ জন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের। স্কুলটি বাংলা মাধ্যম। চলতি শিক্ষাবর্ষে স্কুলের শিশুশ্রেণি ও প্রথম শ্রেণির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা দফতর থেকে অলচিকি পাঠ্যবই পাঠানো হয়েছে। অথচ অলচিকিতে পাঠক্রম শুরু করার জন্য সরকারি নির্দেশিকা আসেনি। স্কুলের টিচার-ইনচার্জ-সহ দুই স্থায়ী শিক্ষক সাঁওতালি ভাষা জানেন না। অলচিকি লিপিতে তাঁরা লিখতেও পারেন না। স্কুলের দু’জন পার্শ্বশিক্ষক অবশ্য অলচিকি জানেন। আদিবাসী সংগঠনের চাপে সম্প্রতি দু’জন পার্শ্বশিক্ষক পড়ুয়াদের অলচিকি লিপিতে পড়াচ্ছেন। গিধনি চক্রের খাটখুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব পড়ুয়া সাঁওতাল সম্প্রদায়ের। অথচ ওই স্কুলে কোনও অলচিকি জানা শিক্ষকই নেই। স্কুলে সাঁওতালি মাধ্যম চালুর অনুমোদনও দেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ স্কুলেই এই সমস্যার ছবি।

পশ্চিম মেদিনীপুরে সরকারি ভাবে ৮৩টি প্রাথমিক স্কুলে সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠন হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষে আরও ১৬টি প্রাথমিক স্কুলে সাঁওতালি মাধ্যম চালুর উদ্যোগ করা হয়েছে। কিন্তু সাঁওতালি মাধ্যম স্কুলে পর্যাপ্ত অলচিকি জানা শিক্ষক নেই। ২০১২ সাল থেকে চার দফায় জেলায় ৪১২ জন সাঁওতালি পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ করা হয়। কার্যক্ষেত্রে সাঁওতালি মাধ্যম অনেক স্কুলেই অলচিকি পার্শ্বশিক্ষক দেওয়া হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে বাংলা মাধ্যম স্কুলে অলচিকি পার্শ্বশিক্ষকদের নিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে কোনও সাঁওতাল পড়ুয়াই নেই।

আদিবাসী শিক্ষক সংগঠন ‘খেরওয়াল মাচেৎ মাডওয়া’-র সম্পাদক লুদা সরেন, সাঁওতালদের সর্বভারতীয় সামাজিক সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর মেদিনীপুর জেলার প্রধান কর্মকর্তা রবিন টুডু বলেন, ‘‘সাঁওতালি ভাষায় ও অলচিকি লিপিতে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের জন্য আমরা বৃহত্তর আন্দোলন নামতে চলেছি।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যাম পাত্র বলেন, “সমস্যা মেটানোর জন্য চেষ্টা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Santali language Neglected Jangalmahal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE