Advertisement
E-Paper

ভরসা সেই পার্শ্বশিক্ষকেই

সরকারের প্রত্যাশা, পিছিয়ে প়ড়া অংশের পড়ুয়ারা মাতৃভাষায় পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষিত হবে। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণের জন্য চাই পরিকাঠামো। তা কি পর্যাপ্ত? 

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৮ ০২:২২
একই সঙ্গে চলছে বাংলা ও সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুল। —নিজস্ব চিত্র।

একই সঙ্গে চলছে বাংলা ও সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুল। —নিজস্ব চিত্র।

প্রত্যাশা অনেক। পরিকাঠামো যৎসামান্য।

জঙ্গলমহলের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ফল বিশ্লেষণে এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না শিক্ষাবিদদের একাংশ। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দিতে জঙ্গলমহলে চালু হয়েছে সাঁওতালি মাধ্যম স্কুল। সরকারের প্রত্যাশা, পিছিয়ে প়ড়া অংশের পড়ুয়ারা মাতৃভাষায় পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষিত হবে। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণের জন্য চাই পরিকাঠামো। তা কি পর্যাপ্ত?

উঠছে প্রশ্ন।

ঝাড়গ্রামের বৃন্দাবনপুর গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। একই ঘরে গাদাগাদি করে বসে বাংলা ও সাঁওতালি মাধ্যমের পড়ুয়ারা। বাংলা মাধ্যমের ৫০ জন ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছেন চার জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। বাংলা মাধ্যমে শিশু থেকে চতুর্থ শ্রেণি রয়েছে। যেমন সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকে। তবে সাঁওতালি মাধ্যমটি রয়েছে শিশুশ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। সাঁওতালি মাধ্যমের ২৩ জন পড়ুয়ার জন্য মাত্র একজন অলচিকি পার্শ্বশিক্ষক আছেন।

পঞ্চম শ্রেণির পরে বৃন্দাবনপুরের সাঁওতালি মাধ্যমের পড়ুয়ারা কোথায় যাবে? সাঁওতালি মাধ্যমের জুনিয়র হাইস্কুল রয়েছে প্রায় ১৫কিমি দূরে জমিদার ডাঙায়। আর বৃন্দাবনপুর থেকে নিকটবর্তী সাঁওতালি মাধ্যমের মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে ৪৭ কিমি দূরে বেলপাহাড়িতে। দূরে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই বৃন্দাবনপুরের চন্দনী মুর্মুকে অভিভাবকেরা গ্রামের বাংলা মাধ্যম স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করান। চন্দনী বাংলায় সড়গড় নয়। স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সে।

ঝাড়গ্রাম জেলায় সাঁওতালি মাধ্যম প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ৮০টি। এই আশিটি প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে বেশির ভাগ স্কুল চলছে বাংলা মাধ্যমের প্রাথমিক স্কুল ভবনে। জেলায় সাঁওতালি মাধ্যম জুনিয়র হাইস্কুল আছে মাত্র ৩টি। ২০১৩ সালে জেলার চারটি বাংলা মাধ্যম হাইস্কুলে (বেলপাহাড়ি এসসি হাইস্কুল, ধানশোল আদিবাসী হাইস্কুল, সারিয়া আদিবাসী হাইস্কুল ও কলমাপুকুরিয়া হাইস্কুল) আলাদা সাঁওতালি মাধ্যম চালু হয়েছে। সেগুলিও হাতে গোনা পার্শ্বশিক্ষকদের দিয়ে চলছে। এ বছরই প্রথম এই চারটি মাধ্যমিক স্কুলের ৪২ জন ছাত্রছাত্রী সম্পূর্ণ সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। ৪০ জন উত্তীর্ণ হয়েছে।

কেমন ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিল মাধ্যমিক উত্তীর্ণেরা? বেলপাহাড়ি এসসি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ এক ছাত্রের কথায়, ‘‘পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাত্র দু’জন পার্শ্বশিক্ষক সব বিষয়ে পড়ান। আর স্কুলের বাংলা মাধ্যমের ইংরেজি শিক্ষক সাঁওতালি মাধ্যমেও দ্বিতীয় ভাষার ক্লাস নিতেন। খুবই সমস্যার মধ্যে পড়াশোনা করেছি।”সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত বিশিষ্ট সাঁওতালি কবি সারিধরম হাঁসদা বলেন, “সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে শিক্ষাক্ষেত্রে এখনও উপযুক্ত পরিকাঠামোটা গড়ে ওঠেনি। সর্বপ্রথম সাঁওতালি শিক্ষা পর্যদ গঠন করা জরুরি। সামগ্রিক পরিকাঠামো তৈরি না করলে কখনও সমস্যা মিটবে না।’’

স্থায়ী ভবন নেই। শিক্ষক অপ্রতুল। পরিকাঠামোর ভাঁড়ারে নেই-এর তালিকা দীর্ঘ। তবু বাড়ছে প্রত্যাশা।

চলবে

Santali সাঁওতালি Teacher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy