Advertisement
E-Paper

ধান কেলেঙ্কারির ভূত কোথায়, খুঁজছে পুলিশ

জঙ্গলমহলে ধান কেলেঙ্কারির ঘটনায় শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সেই সঙ্গে খাদ্য দফতর ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগমের আধিকারিকদের একাংশের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৫

জঙ্গলমহলে ধান কেলেঙ্কারির ঘটনায় শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সেই সঙ্গে খাদ্য দফতর ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগমের আধিকারিকদের একাংশের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের যে দু’টি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিকে ধান কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেই দু’টি সমিতির ধান কেনার মতো মূলধনই ছিল না। বিষয়টি ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। সমবায় দফতর থেকে কখনও ওই দু’টি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নাম সুপারিশ করা হয়নি। তা সত্ত্বেও ওই দু’টি সমিতিকে বেশ কয়েক বছর ধরে ধান কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে পুলিশ মূল অভিযুক্ত প্রশান্ত খানকে গ্রেফতার করে আদালতের নির্দেশে তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করছে। প্রশান্তবাবু ওই দু’টি সমবায় সমিতির সদস্য নন। অথচ তাঁকে পার্চেজ ম্যানেজার হিসেবে ধান কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ওই দু’টি সমিতির তরফে তিনি জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকার চাষিদের কাছ ৮৫৯ মেট্রিক টন ধান কিনেছিলেন বলে অভিযোগ। বেশির ভাগ ধানটাই ধারে কেনা হয়েছিল। কেবলমাত্র প্রশান্তবাবু নন, আরও অনেকেই এই ঘটনায় জড়িত বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে খোঁজ শুরু করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং বিষয়টি জানার পরে বেজায় চটেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর উষ্মার প্রধান কারণ, ধান কেনার শিবিরগুলিতে লালগড় ও ঝাড়গ্রামের কয়েকজন নেতা ও জনপ্রতিনিধি হাজির ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই সব নেতাদের কথায় প্রভাবিত হয়ে চাষিরা ধান বেচেন বলে অভিযোগ। লালগড় ব্লকের এক গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধান ও তাঁর স্বামী চাষিদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ডেকে এনে ধারে ধান বিক্রি করতে বাধ্য করেছিলেন বলেও খবর রয়েছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে এ ভাবে ধারে ধান কিনে পরে চাষিদের পাওনা মেটাতেন প্রশান্তবাবু। ধান কেনার শিবিরে আগত বিশিষ্টজনদের ‘আপ্যায়ন’ করা হত। সেই কারণে শিবিরে চাষিদের ধরে আনার ক্ষেত্রে স্থানীয় মাতব্বররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেন। গত কয়েক বছর ধরে এভাবেই বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করেছিলেন প্রশান্তবাবু।

রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকরা বলছেন, জঙ্গলমহলের উন্নয়নের হাসি ধরে রাখার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর তরফে চেষ্টার ত্রুটি নেই। অথচ সেই জঙ্গলমহলের গবির চাষিরাই সরকারি দরে ধান বিক্রি করে প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সর্বস্বান্ত চাষিরা টাকার অভাবে আমন ধানের চাষ শুরু করতে পারছেন না। লালগড়ের প্রতারিত চাষিরা বকেয়া টাকার দাবিতে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন। বিষয়টি বেশ অস্তস্তিকর। তাই কাল বিলম্ব না করে দল ও প্রশাসনে সন্দেহভাজনদের ভূমিকা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন ‘প্রশাসক’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশাসন সূত্রে এমনই খবর।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “ধান কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ করার জন্য শীর্ষস্তর থেকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে নিরন্তর খোঁজখবর রাখছেন।” প্রশাসন সূত্রের খবর, আগামী অগস্ট-সেপ্টেম্বরে জঙ্গলমহল সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে চাষিদের ক্ষোভ উপশমের পথ খোঁজা হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ ধান ধারে কিনে প্রশান্তবাবু কোথায় রেখেছেন, সেটা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো বলেন, “দলের কারা কারা ধান কেনার শিবিরে ছিলেন এবং তাঁদের ভূমিকা কী ছিল, তা দলীয় স্তরে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইন আইনের পথে চলবে।” জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। তাই কোনও মন্তব্য করব না।’’

rice scandal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy