Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Amphan

নিষ্প্রদীপ ইদে হাহাকার ত্রিপলের 

গ্রামের বেশিরভাগ ছেলেই ভিন্ রাজ্যে কাজ করে। ইদের  আগে সকলেই বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে আনন্দে মেতে উঠতেন।

আমপানে উড়ে গিয়েছে ছাদ। ত্রিপলের আশায়  গুল মহম্মদের পরিবার। রবিবার হলদিয়ার কাশীপুরে। নিজস্ব চিত্র

আমপানে উড়ে গিয়েছে ছাদ। ত্রিপলের আশায়  গুল মহম্মদের পরিবার। রবিবার হলদিয়ার কাশীপুরে। নিজস্ব চিত্র

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২০ ০৪:৩৪
Share: Save:

দারিদ্য আগে থেকেই ছিল। জীর্ণ ঝুপড়ি বাড়ি বা টালির বাড়ি আর কিছু হাঁস-মুরগি পালন। এই নিয়েই বেঁচেছিল হলদিয়ার সুতাহাটার হুগলি নদীতীরের বেশ কিছু গ্রাম। বাহারডাব গ্রামের মুসলিম পল্লির লতিফুল মল্লিকের চোখের জল শুকিয়ে গিয়েছে। করোনার কারণে হাতে কোনও কাজ নেই। রেশনের চাল আর জমা পুঁজিটুকু সম্বল করে কিছুদিন কাটলেও এখন চালটুকুই ভরসা। লকডাউন ওঠার ব্যাপারে নানারকম কথা শুনে আশায় ছিলেন ফের কাজ জুটবে। হাতে টাকা পাবেন। ইদের আগে একটু স্বস্তি পাবে পরিবার। কিন্তু সেই আশাতেও জল ঢেলে দিয়েছে আমপান। সোমবার ইদ হলেও তা নিয়ে হেলদোল নেই লতিফুলে। ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে ভেঙে যাওয়া মাথার উপরের ছাদ সারানোর টাকা আসবে কোথা থেকে সেই চিন্তাই কুরে খাচ্ছে তাঁকে।

গ্রামের বেশিরভাগ ছেলেই ভিন্ রাজ্যে কাজ করে। ইদের আগে সকলেই বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে আনন্দে মেতে উঠতেন। নতুন পোশাক, আতরের খুশবু, সিমাই, লাচ্ছা, রঙিন কাচের চুড়ি, হাতে মেহেন্দির রং-এ পালিত হত খুশির ইদ। করোনার আতঙ্ক সেই খুশিতে ভাগ বসালেও আমপান পুরোপুরিই তা কেড়ে নিয়েছে। নন্দীগ্রাম থেকে হলদিয়া, তমলুক থেকে কাঁথি সর্বত্রই ত্রাণেপ হাহাকার। ঘর বাঁচাতে, সম্মান বাঁচাতে সকলের চোখে মুখে একটাই আর্তি, একটা ত্রিপল চাই।

গ্রামের মুখে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন ফকরুদ্দিন আলি। বছর সত্তরের মানুষটি ইদ এলেই গোলাপ আতর গায়ে মেখে ঘুরে বেড়াতেন। করোনা আর আমপান কেড়ে নিয়েছে সেই আনন্দ। শুকো মুখে মলিন পাঞ্জাবি পরা বৃদ্ধ বলেন, ‘‘জীবন অনেক লম্বা আমার। সুখের মুখ দেখিনি। তবে এ বারের মতো ইদ যেন কথনও না আসে। হালুয়া- সিমাই নয়, ভাত জোগাড় হলেই ধন্য। তবে আর কিছু না হোক, ইদে আল্লার কাছে অন্তত প্রার্থনা করতে পারব।’’

কাজের সূত্রে বাড়ি থেকে অনেক দূরে রয়েছেন সাজিদ মল্লিক। বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে সাজিদ বলেন, ‘‘পাড়ার বাসিন্দাদের জন্য ত্রিপল চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছি। ওঁদের হাহাকারে আমিও ভাল নেই। এতদিন রোজা ছিল তাই দিনে খাওয়ার দরকার হত না। এখন এতগুলি পেট চালাব কী করে। ইদে আমার একটাই প্রার্থনা, একটা ত্রিপল যেন পাই।’’

সুতাহাটার বিডিও সঞ্জয় শিকদার বলেন, ‘‘ওই সব গ্রামের বেহাল দশা জানি। পঞ্চায়েতকে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

কাশীপুর মুসলিম পল্লিতেও ত্রিপলের আশায় খালো আকাশের নীচে দিন কাটছে বৃদ্ধ শেখ গুল মহম্মদ, সুফিয়া বেগম, শেখ রবিউল, অক্কাশ আলি, সফিউল ইসলাম, মমতাজ ও আলিয়া বিবির। পুরুষদের দিনমজুরি নেই। রেশনের চাল পেয়ে কোনওরকমে গিন কাটছে। কিন্তু আমপান সব কেড়ে নিয়েছে। সকলেরই এক সুর, ‘‘এ বার আমাদের ইদ কেড়ে নিল করোনা আর আমপান।’’ শিক্ষিত তরুণী মেজবুন্নেসার কথায়, ‘‘একটা ত্রিপলে কী হবে বলুন? তবু ওটাই এখন একমাত্র চাহিদা। এ বার আমাদের ইদ হবে না। এই দারিদ্রতা আর হাহাকারে আনন্দের কোনও ঠাঁই নেই।’’

নেই নতুন পোশাক, মেহেন্দি, আতরের খুশবু। নেই ইদের আগে নিজেকে সাজানোর ধুম। নিস্প্রদীপ ইদে ঢাকা পড়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Haldia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE