Advertisement
E-Paper

সন্দেহেই কি স্ত্রী’কে খুন করে আত্মঘাতী

ত্রিশের কোঠায় সদ্য পা দেওয়া এক ব্যক্তির এমন পদক্ষেপকে মানসিক অবসাদ বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করছেন মনরোগ বিশেষজ্ঞেরা। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অলক পাত্র বলেন, ‘‘সন্দেহ করা এক ধরনের মানসিক রোগ। চিকিৎসাশাস্ত্রে একে ডিলিউশান ডিসঅর্ডার বলা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগীরা যুক্তিহীন এবং ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৮ ০০:০০

মাত্র চার বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন তাঁরা। সোমবার সকালেই উদ্ধার হয়েছে সেই দম্পতির দেহ। মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশের অনুমান, মোবাইলে স্ত্রীর অন্য কারও সঙ্গে কথা বলা নিয়ে অশান্তির সূত্রপাত। তদন্তকারীদের ধারণা, স্ত্রীর অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, এমন সন্দেহেই স্ত্রীকে খুন করেছেন স্বামী।

ওই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি সন্দেহপ্রবণতা প্রেমের বিয়েকেও ছারখার করে দিতে পারে? ঘটনা গড়াতে পারে খুন-আত্মহত্যাতেও!

তমলুক শহর লাগোয়া নারায়ণদাঁড়ি গ্রামে সোমবার সকালে বাড়ির মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষক মলয়কান্ত মাইতির ঝুলন্ত দেহ ও স্ত্রী শর্মিষ্ঠা মাইতির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মলয় ও শর্মিষ্ঠার দাম্পত্য জীবনে বেশ কিছুদিন ধরে অশান্তি চলছিল, তা স্বীকার করেছেন মলয়ের বাবা প্রবোধ মাইতি। তাঁর কথায়, ‘‘শর্মিষ্ঠা দিনের একটা বড় সময় ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত থাকত। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে মারপিটও হয়েছে। সম্প্রতি মলয় ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীকে মেরে আত্মহত্যা করার হুমকিও দিত।’’ প্রবোধবাবুর দাবি, মলয় মানসিক অবসাদেও ভুগছিলেন। এ নিয়ে গত রবিবার চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি।

ত্রিশের কোঠায় সদ্য পা দেওয়া এক ব্যক্তির এমন পদক্ষেপকে মানসিক অবসাদ বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করছেন মনরোগ বিশেষজ্ঞেরা। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অলক পাত্র বলেন, ‘‘সন্দেহ করা এক ধরনের মানসিক রোগ। চিকিৎসাশাস্ত্রে একে ডিলিউশান ডিসঅর্ডার বলা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগীরা যুক্তিহীন এবং ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হন। কাউকে ভালবাসলে তাঁর মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে দিতে চান না। স্বামী বা স্ত্রী অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত রয়েছে বলে সন্দেহ করেন। সর্বদা স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি নজরদারি রাখেন। গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ দম্পতির ক্ষেত্রে ডিলিউশান ডিসঅর্ডারের লক্ষণ
দেখা যায়।’’

অলকবাবু বলেন, ‘‘আবার ডিলিউশান ডিসঅর্ডারের একটা লক্ষণ হল ওথেলো সিন্ড্রোম। এতে আক্রান্তরা অমূলক সন্দেহ করে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি করেন। এক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী স্বীকারোক্তির জন্য বারবার জেরা করতে থাকেন। বিরক্ত হয়ে যদি একবার কেউ তা স্বীকার করে নেন, তাহলে গালাগালি থেকে মারধর, এমনকী, খুনও করতে পারেন রোগীরা।’’ তবে অলোকবাবুর বক্তব্য, ‘‘ওই ধরনের রোগীদের সাধারণত নিজেদের অসুখের কথা স্বীকার করেন না। পরিজনদের উচিত রোগীকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসায় রোগী এক, দু’মাসে সুস্থ হয়ে ওঠেন।’’

গোটা ঘটনায় পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ির প্রবেশপথের মূল দরজায় তালা লাগানো অবস্থায় ছিল। বাড়ির মধ্যে সব জিনিসপত্রও রয়েছে। এই ঘটনায় বাইরের কেউ জড়িত রয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শর্মিষ্ঠাদেবীকে খুনের অভিযোগে মামলা রজু করে তদন্ত চালানো হচ্ছে।

Murder Suicide Tamluk Dead
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy