শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে অলোক সাঁতরা। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
পুরবোর্ড গঠনের আগেও তমলুক পুরসভার পুরপ্রধান কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা অব্যাহত। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় পুরসভার নবনির্বাচিত কাউন্সিলাররা শপথ গ্রহণ করবেন। শপথের পরই পুরপ্রধান নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ২০টি আসন বিশিষ্ট তমলুক পুরসভায় তৃণমূল ১৬টি আসনে জয়ী হয়েছে। তবে হেরে গিয়েছেন তমলুকের বিদায়ী পুরপ্রধান দেবিকা মাইতি। তৃণমূল সূত্রে খবর, নতুন পুরবোর্ড গঠনের দু’দিন আগে দলের কাউন্সিলারদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়। যদিও বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘তমলুক, এগরা-সহ জেলার তিনটি পুরসভাতেই পুরপ্রধানের নাম নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই নাম রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। যথাসময়েই নতুন পুরপ্রধানদের নাম জানিয়ে দেওয়া হবে।’’
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক পুরসভার নবনির্বাচিত ১৬ জন তৃণমূল কাউন্সিলরকে নিয়ে সোমবার রাতে শহরের সংলগ্ন একটি বেসরকারি অতিথিশালায় বৈঠক করেন শিশিরবাবু। বৈঠকে ছিলেন ভগবানপুরের বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি, তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি চিত্তরঞ্জন মাইতি। এ দিনের বৈঠকে জানানো হয়, নতুন পুরপ্রধান পদে কার নাম প্রস্তাব করা হবে, তা মঙ্গলবার পুরবোর্ড গঠনের সভার আগে চিঠি মারফত কাউন্সিলরদের জানিয়ে দেওয়া হবে। ফলে পুরপ্রধান গঠন নিয়ে জল্পনা অব্যাহত।
তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, এ বার পুরভোটে পুরপ্রধান পদে কাউকে সামনে রেখে নির্বাচনে লড়াই করা হয়নি। ফলে নির্বাচনের পরে পুরপ্রধান পদে একাধিক নাম উঠে এসেছে। পুরপ্রধান পদের দাবিদার হিসেবে রয়েছেন বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়, প্রাক্তন পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন, পৃথ্বীশ নন্দী ও অপর এক কাউন্সিলর চন্দন প্রধান। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এদের মধ্যেই কাউকে ফের পুরপ্রধান পদে বসানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও তমলুকে পুরবোর্ড গঠনের আগের দিনই বিরোধী শিবির ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর অলক সাঁতরা। অলকবাবুর কাছেই হেরে যান তমলুকের বিদায়ী পুরপ্রধান দেবিকা মাইতি। সোমবার সন্ধ্যায় তমলুক শহরের সাংসদ কার্যালয়ে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিতিতে অনুগামীদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগ দেন অলকবাবু।
এ দিন অলকবাবু বলেন, ‘‘নির্দল প্রার্থী হিসেবেই লড়াই করেছিলাম। এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের রাজনৈতিক রং ভুলে আমাকে সমর্থন করেছেন।’’ তৃণমূলে যাওয়া প্রসঙ্গে তাঁর যুক্তি, ‘‘নির্বাচনের আগেই বলেছিলাম, ভোটের পরে আমার অবস্থান নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব । তমলুকের সাংসদের কাছ থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলাম।’’ তাঁর দাবি, রবিবার এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে আলোচনা করে তাঁদের মতামত নিয়েই এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
যদিও এ দিন বিদায়ী পুরপ্রধান দেবিকা মাইতি বলেন, ‘‘অলকবাবুর তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিয়ে দলের পক্ষ থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। নির্বাচনে আমাকে যে অন্তর্ঘাত করে হারানো হয়েছিল এই ঘটনাতেই তা প্রমাণিত হল।’’ অলকবাবুর তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘তৃণমূলকে হারানোর জন্যই আমরা ওই নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করেছিলাম। তবে উনি যে ভাবে তৃণমূলে যোগ দিলেন তা সমর্থন করছি না।’’
আগামী ২২ মে এগরা পুরসভার নবনির্বাচিত কাউন্সিলাররা শপথ গ্রহণ করবেন। তমলুকের মতো এগরাতেও এ বার বিদায়ী পুরপ্রধান স্বপন নায়ক ভোটে হেরে গিয়েছেন। ১৪ আসনের এগরা পুরসভায় এ বার তৃণমূল ৯টি আসন দখল করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। তবে এগরাতেও পুরপ্রধান কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা অব্যাহত। এগরায় পুরপ্রধানের দাবিদার হিসেবে রয়েছেন পারুল মাইতি, প্রাক্তন পুরপ্রধান তপনকান্তি কর ও শঙ্কর বেরা। যদিও দলীয় ভাবে পুরপ্রধান পদে কারও নাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘অলকবাবু নির্দল হিসেবে দাঁড়ালে এলাকার এনেক তৃণমূল সমর্থকও তাঁকে সমর্থন করেছিলেন। তাই এলাকার মানুষের রায়কে মর্যাদা দিতেই তাঁকে দলে নেওয়া হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy